১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজায় আগ্রাসনের ১২তম মাস, নেই আশার খবর

-

- যুদ্ধবিরতি অর্জনে বাধা ফিলাডেলফি করিডোর
- ৪৮ ঘণ্টায় ৬১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা

ফিলিস্তিনের গাজায় আকাশ ও স্থল পথে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বর্বোরোচিত হামলা ১২তম মাসে গড়াল। এই দীর্ঘ সময় পরও যুদ্ধ থামার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল শনিবার পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় অবরুদ্ধ উপত্যকাটির প্রায় ৪১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উদ্বাস্তু হয়েছেন গাজার প্রায় সব বাসিন্দা। গোটা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। খবর : এএফপি, আল-মায়েদিন, আলজাজিরা ও আলকুদস।
এখনো প্রতিদিনই গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এর মধ্যে গতকাল পোলিও টিকাদান কর্মসূচি চলাকালে গাজায় স্কুলে আশ্রয়শিবিরের ইসরাইলি হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন। কোথাও কোথাও দুই পক্ষের মধ্যে লড়াইয়ের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। তবে মধ্যস্থতাকারীদের বিরামহীন চেষ্টার পরও নতুন করে যুদ্ধবিরতির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ যুদ্ধবিরতি নিয়ে দুই পক্ষই নিজেদের শর্তে অনড়। ফলে প্রায় এক বছর ধরে চলা এই হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ কবে থামবে তা অনিশ্চিত।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ইসরাইলি হামলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৬১ জন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট নিহত বেড়ে হয়েছে ৪০ হাজার ৯৩৯। আহত নয়তো পঙ্গু হয়েছেন প্রায় ৯৫ হাজার ফিলিস্তিনি। যুদ্ধ ১২তম মাসে গড়ানো নিয়ে গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া পোস্টে জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পি লাজ্জারনি লিখেছেন, ‘১১ মাস। যথেষ্ট হয়েছে। এটা আর কেউ নিতে পারছে না। মানবতাকে অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে। এখনই এই যুদ্ধ বন্ধ করুন।’
যুদ্ধবিরতির আশা ক্ষীণ : গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা আহ্বান জানালেও আপাতত যুদ্ধবিরতির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর পক্ষ থেকে অবশ্য দুই পক্ষকেই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে রাজি করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু নিজেদের শর্তে দুই পক্ষই অনড় অবস্থানে বলে জানা গেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত বৃহস্পতিবার জানান, যুদ্ধবিরতির ‘৯০ শতাংশ শর্ত নিয়ে দুই পক্ষই ঐকমত্যে পৌঁছেছে’। যুদ্ধবিরতির চুক্তি চূড়ান্ত করতে ইসরাইল ও হামাসকে এদিন আহ্বান জানান তিনি।
তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে ঐকমত্য নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উল্টো কথা বলেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে তিনি শুক্রবার বলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি। হামাসের শর্ত, ইসরাইলি সব সেনাকে গাজা থেকে প্রত্যাহার করে নিলেই কেবল তারা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে রাজি হবে। তবে এতে আপত্তি ইসরাইলের। নেতানিয়াহু সরকার চায়, যুদ্ধবিরতি হলেও ইসরাইলি সেনারা গাজার বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন থাকবেন।
বাধা ফিলাডেলফি করিডোর : এ দিকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী ও গাজার নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে, এখন যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময়ের চুক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে একমাত্র বাধা ফিলাডেলফি করিডোর। লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল-মায়েদিনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাসের এক শীর্ষ নেতা আলমায়েদিনকে জানিয়েছেন, দখলদার ইসরাইল চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ফিলাডেলফি করিডোর থেকে সেনা প্রত্যাহার না করার বিষয়ে অনড়। দেশটি দ্বিতীয় পর্যায়ে সেনা প্রত্যাহার করার ইচ্ছা পোষণ করছে। তিনি বলেন, হামাস চুক্তি অনুসারে প্রথম পর্যায়ের ৪২ দিনের দখলদার বাহিনীকে গাজায় থাকার অনুমতি না দেয়ার বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করে মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছে।
হামাসের ওই নেতা আরো জানান, মধ্যস্থতাকারীরা চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ফিলাডেলফি করিডোর থেকে ধীরে ধীরে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করার জন্য ইসরাইলের কাছে প্রস্তাব পেশ করেছিল। কিন্তু ইসরাইল এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান বজায় রেখেছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলাডেলফি করিডোরে ইসরাইলি বাহিনী রাখার বিষয়ে তার জেদে অটল থাকলেও জনমত বলছে ভিন্ন কথা। এক জনমত জরিপে প্রকাশিত হয়েছে, ৪৮ শতাংশ ইসরাইলি হামাসের সাথে বন্দী বিনিময় চুক্তির সুবিধার্থে ফিলাডেলফি থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি সমর্থন করেন।
এ দিকে গত বৃহস্পতিবার হামাসের উপপ্রধান খলিল আল-হাইয়া বলেছেন, হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাব ও গাজা উপত্যকা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের পর চুক্তির যে খসড়া হয়েছে তার প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। তিনি বলেন, ‘হামাসের জন্য কোনো দলের কাছ থেকে কোনো নতুন নথি বা প্রস্তাবের প্রয়োজন নেই। তবে ইসরাইলকে অবশ্যই তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে বাধ্য করতে হবে।’
খলিল আল-হাইয়া আরো বলেন, যেকোনো চুক্তিতে অবশ্যই আগ্রাসন বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং ফিলাডেলফি করিডোর ও রাফাহ ক্রসিংসহ গাজা থেকে ইসরাইলের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া মানবিক সহায়তার নিশ্চয়তাসহ ‘কোনো পরিদর্শন’ ছাড়াই বাস্তুচ্যুত লোকদের নিজ বাড়িতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে হবে এবং বন্দী বিনিময় চুক্তির দিকে অগ্রসর ও গাজা উপত্যকার পুনর্গঠন নিশ্চিত করতে হবে।
৬১ ফিলিস্তিনির মৃত্যু : অন্য দিকে দখলদার ইসরাইলের হামলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় ৬১ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরো ১৬২ জন। গতকাল শনিবার এই তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নতুন করে আরো ৬১ জন নিহত হওয়ার মাধ্যমে গাজায় চলমান যুদ্ধে ৪০ হাজার ৯৩৯ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হলো। অপর দিকে আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৬১৬ জনে। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধে গত কয়েক মাস ধরে যুদ্ধবিরতি চুক্তির চেষ্টা চলছে। তবে দখলদার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হচ্ছে না।
১৩ ফিলিস্তিনি নিহত : গাজায় শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া একটি স্কুল এবং একটি আবাসিক ভবনে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। গতকাল শনিবার ভোরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, নিহতদের আটজন উত্তর গাজার জাবালিয়ায় হালিমা আল-সাদিয়া স্কুলের শরণার্থী তাঁবুতে ছিলেন। আর পাঁচজন ছিলেন মধ্য গাজার নুসেইরাত শিবিরে। এক বিবৃতিতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা হামাসের কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে কর্মরত সন্ত্রাসীদের ওপর সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে।
অপুষ্টিতে ভুগছে ৫০ হাজার শিশু : জাতিসঙ্ঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে অঞ্চলটির ৫০ হাজারের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। এ দিকে জাতিসঙ্ঘ সতর্ক করে বলেছ, গাজা উপত্যকায় মানবিক পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর অবস্থাও ছাড়িয়ে’ গেছে। ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম আল-কুদসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ইউনিসেফের পুষ্টিবিষয়ক প্রোগ্রামের পরিচালক ভিক্টর আগুয়েও বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ৫০ হাজারের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে এবং তাদের অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন। সংস্থাটি এর আগেও একাধিকবার এ বিষয়ে সতর্ক করেছে। তারা জানিয়েছে, অপুষ্টিজনিত কারণে গাজায় মানবিক সঙ্কট আরো গুরুতর হতে পারে এবং বিপুলসংখ্যক শিশু মারা যেতে পারে। ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে ৯ জনের ক্ষেত্রেই সুস্থ বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব রয়েছে। গাজা উপত্যকার শিশু, গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের মধ্যে অপুষ্টির হারের তীব্র বৃদ্ধি তাদের জীবনকে গুরুতর হুমকির মুখে ফেলেছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় খাদ্য ও সুপেয় পানি অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। একই সাথে অঞ্চলটিতে নানা ধরনের সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ছে, যা নারী ও শিশুদের পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে প্রভাবিত করছে এবং তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্তদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গাজা উপত্যকায় জরুরিভাবে বহুমুখী মানবিক সহায়তার নিরাপদ, বাধাহীন ও টেকসই প্রবেশ ও বিতরণের আহ্বান জানিয়েছে। একই সময়ে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, বিগত কয়েক মাসে অপুষ্টিতে অঞ্চলটিতে কয়েক ডজন শিশু মারা গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেফতার সোনারগাঁয়ে শেখ হাসিনা-শেখ রেহেনাসহ ২৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা গাজার চলমান ঘটনাবলী সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভুল : বসনিয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকে ভারতের আসাম-মেঘালয় সীমান্তে আটক ৬৫ বাংলাদেশী ঐক্যের মাধ্যমেই কেবল মুসলিম উম্মাহ'র মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হোসেনপুরে স্কুলশিক্ষকের বসতঘর পুড়ে ছাই রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টির আভাস 'শ্রম আইন সংস্কার করে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে' সিংগাইরে ধলেশ্বরী নদী থেকে লাশ উদ্ধার সাতক্ষীরায় বজ্রপাতে মৎস্যচাষির মৃত্যু সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবুর ওপর ডিম নিক্ষেপ

সকল