১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
কারখানা মালিকদের সিন্ডিকেট

ভালো নেই উত্তরাঞ্চলের সমতলে চা চাষিরা

ভালো নেই উত্তরাঞ্চলের সমতলে চা চাষিরা -

কারাখানার মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে সবুজ কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না উত্তরাঞ্চলের সমতলে চা চাষিরা। বিগত দুই দশকে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার সমতল ভূমিতে চা আবাদ বেড়েছে কয়েক গুণ। এখন অনেক চাষির চা বাগান পরিপূর্ণ বাগানে (সেট বাগানে) পরিণত হয়েছে। বাগান পরিপূর্ণ হওয়া মানে চা চাষিদের অর্থনৈতিকভাবে সুদিন ফেরার কথা; কিন্তু এই চা চাষিদের সেট বাগান যেন এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে চেপে বসেছে। এক দিকে তারা চা পাতার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না, অন্য দিকে সঠিক সময়ে বাগানের কাঁচা পাতা বিক্রি করতে গিয়ে কারখানার মালিকদের কাছে বারবার ধরনা দিতে হয়। ক্ষেতের সবুজ পাতা কাটার কয়েক দিন আগে সিরিয়াল নিতে হয়। এরপর পাতা সরবরাহ করার সময় নানান অজুহাতে ক্ষেত্রবিশেষ ১৫% থেকে ৪৫% পর্যন্ত মূল পাতার ওজন কর্তন করে চাষিদের টাকা পরিশোধে দেড় থেকে দু’মাস সময় বেঁধে দেন। এসব কারণে পঞ্চগড়সহ রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার চা চাষিরা ভালো নেই। এভাবে কয়েক বছর ধরে কাঁচা পাতার দাম না পেয়ে অনেক পুরনো চা চাষি এখন বাগান উপড়ে ফেলছেন। বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলায় ১২ লাখ ১০ হাজার ৬৬০ একর সমতল জমিতে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ পরিসরে চা-আবাদ হয়েছে। পঞ্চগড় চা বোর্ডের অধীন পাঁচটি জেলায় অনুমোদিত টি কারখানা রয়েছে ৫৮টি, যার মধ্যে উৎপাদনে আছে ২৮টি। পঞ্চগড় জেলায় ২০০০ সালের দিকে তেঁতুলিয়া টি কোম্পানি লিমিটেড ও কাজী অ্যান্ড কাজী পঞ্চগড়ে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করে। পরবর্তীপর্যায়ে ২০২১ সালের মধ্যে ৫০০ হেক্টর জমি নতুন করে চা চাষের আওতায় আনতে চা বোর্ড সেপ্টেম্বর ’১৫ থেকে জুন ’২১ মেয়াদে সাত কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘দেশের উত্তরাঞ্চলে ছোট ছোট চা চাষের সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। বর্তমানে ৯টি নিবন্ধিত চা বাগান, ২১টি অনিবন্ধিত চা বাগান এবং আট হাজার ৬৭টি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানের আওতায় মোট ১১ হাজার ৪৩৩ দশমিক ৯৪ একর সমতল জমিতে চা চাষ হয়েছে। এই চা বাগানগুলো থেকে গত বছর এক কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি সবুজ পাতা চা উৎপাদন হয়েছে, যা থেকে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাটের ২৮টি প্রক্রিয়াজাত কারখানায় এক কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে।
চা চাষিরা জানান, তারা প্রতি মৌসূমে ছয়-সাতটি রাউন্ডে বাগানের সবুজ কাঁচা পাতা তুলে বিক্রয় করতে পারেন; কিন্তু এই পাতা বিক্রয় করার সময় প্রতিটি রাউন্ডে বাগানমালিকদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। কখনো কারখানায় কাঁচা পাতার নিম্নহারে দাম নির্ধারণ আর কর্তনের কারণে বাগানের পাতা বিক্রি ও কারখানায় সরবরাহ দিয়ে চাষিদের হাতে কোনো টাকা থাকে না। পঞ্চগড়ের সবুজ কাঁচা পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ এক নীতিনির্ধারণী সভায় বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় জেলা অফিসের কর্মকর্তা, কারখানার মালিক, রাজনৈতি নেতা ও জনপ্রতিনিধি, পঞ্চগড় পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক পঞ্চগড় সভায় সমন্বয় করে সবুজ কাঁচা পাতার দাম এবং পাঁচ-দশ % ডাস্ট কর্তন হার নির্ধারণ করে দেন। সেই সভায় চা নিলাম মাকের্টের সর্বনিম্ন ১৬০ টাকা কেজি হিসাবে চা চাষিদের বাগানের সবুজ কাঁচা পাতা ১৭-১৮ টাকা দরে কেনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়; কিন্তু কারখানার মালিকরা সভার সিদ্ধান্তগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে তাদের মনগড়া মূল্য নির্ধারণসহ ১৫-৪৫% ডাস্ট কর্তন হার নির্ধারণ করেছেন।
ক্ষুদ্র চা চাষিদের অভিযোগ, গভীর নলকূপ আর শ্যালো মেশিন দিয়ে বাগানে পানি সেচ দিয়ে তাদের অনেক খরচ হয়। এ মৌসুমে লাগাতার খরার কারণে বাগানের চা গাছ পুড়ে মরে যাচ্ছে। বাগানে লাল মাকড়সহ নানা রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। রোগ- বালাই দমনের সার-কীটনাশকের দামও চড়া। কিন্তু চা কারখানাগুলো প্রতি কেজি সবুজ কাঁচা পাতা প্রায় ১০-১৫ টাকা দরে কেনার পাশাপাশি ৪০-৫০% হারে কর্তন করায় অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। চাষিদের দাবি, কারখানার মালিকরা প্রতি কেজি চা পাতা কমপক্ষে ২০-২৫ টাকা হারে ক্রয় করলে তাদের লোকসান কিছুটা কমবে এবং সৃজনকৃত বাগান উপড়ে না ফেলে বাগান পরিচর্যায় মনোনিবেশ বাড়বে।
পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বিসমিল্লাহ টি ফ্যাক্টরির পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আনিছুর রহমান বলেন, দেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন, দক্ষিণাঞ্চলে অসময়ে বন্যা প্রভৃতি কারণে প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় উৎপাদিত চা নিলাম মার্কেটে পুরোপুরি বিক্রি করা যাচ্ছে না। অনেক কারখানায় কয়েক লাখ টন চা পাতা জমে থাকায় মোটা অঙ্কের টাকা আটকে গেছে। এসব জমাকৃত চা পাতা আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিলাম মাকের্টে বিক্রি করতে না পারলে কারখানার মালিকরা লোকসানের মুখে পড়বে। বর্তমানে নিলাম মার্কেটে যে হারে চা পাতা বিক্রি হচ্ছে তা দিয়ে কারখানার জ্বালানিতেল কেনার টাকাও সঙ্কুলান হয় না। যে কারণে কারখানার মালিকরা চা পাতা ক্রয়ে হিমশিম খাচ্ছে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা মো: আমির হোসাইন বলেন, পঞ্চগড় জেলায় দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপন হয়েছে। পঞ্চগড়ে উৎপাদিত চা পাতার সর্বনিম্ন দর ১৬০ টাকা কেজি ধরে চাষিদের কাঁচা পাতার দাম ১৭-১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং বৃষ্টিতে ভেজা পাতা হলে পাঁচ-দশ % হারে ডাস্ট কর্তন করার জন্য জেলা প্রশাসকের এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু কারখানার মালিকরা এই সিদ্ধান্ত না মেনে তাদের মনগড়া নীতির ভিত্তিতে চা পাতার দাম নির্ধারণ করছে। এ ক্ষেত্রে চা চাষিদের অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু কারখানার মালিক এবং বড় পাতা সরবরাহকারী চাষিদের জেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে জরিমানাও করা হয়েছে। তবুও যেন কোনো একটি চক্র এই শিল্পটিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে।
এই কর্মকর্তার মতে, বিপুল সম্ভাবনাময় গ্রিন অর্থনীতি শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য চাষিদের ভালো মানের পাতা (দু’টি কুড়ি একটি পাতা) উৎপাদন করে কারখানায় সরবরাহ করতে হবে। এতে ভালো মানের চা প্রস্তুত করে বেশি দামে নিলামে বিক্রয় করা সম্ভব। তখন চাষিরাও সবুজ পাতার ভালো দাম পাবে। সর্বোপরি পঞ্চগড়ে চা শিল্পের মানোন্নয়ন ও সঙ্কট উত্তরণের জন্য চা চাষি ও কারখানার মালিকদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেফতার সোনারগাঁয়ে শেখ হাসিনা-শেখ রেহেনাসহ ২৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা গাজার চলমান ঘটনাবলী সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভুল : বসনিয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকে ভারতের আসাম-মেঘালয় সীমান্তে আটক ৬৫ বাংলাদেশী ঐক্যের মাধ্যমেই কেবল মুসলিম উম্মাহ'র মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হোসেনপুরে স্কুলশিক্ষকের বসতঘর পুড়ে ছাই রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টির আভাস 'শ্রম আইন সংস্কার করে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে' সিংগাইরে ধলেশ্বরী নদী থেকে লাশ উদ্ধার সাতক্ষীরায় বজ্রপাতে মৎস্যচাষির মৃত্যু সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবুর ওপর ডিম নিক্ষেপ

সকল