পতনের কবল থেকে উদ্ধার হতে পারছে না পুঁজিবাজার
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০৬
- ৭ দিনে ৭ হাজার ১৫০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা চলে গেছে
- গত ১ বছরের তুলনায় সূচকের পতন বেড়েছে
- ৫৭ শতাংশ বিক্রির চাপের বিপরীতে ক্রেতা ৪৩ শতাংশ
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় এক মাসে বেশ কিছু সংস্কার বাস্তবায়ন করেছে পুঁজিবাজারে। এসব পরিবর্তনেও দেশের পুঁজিবাজার বাগে আসছে না। গত সপ্তাহের চার দিনই ছিল পতনের জালে। দুই বাজারই উল্লেখযোগ্য হারে সূচক হারিয়েছে। বাজারে এখনো বিক্রির চাপ বা শেয়ার ছেড়ে দেয়ার প্রবণতা বেশি। গেল সপ্তাহে ৫৭ শতাংশ বিক্রির চাপের বিপরীতে ক্রেতা ছিল মাত্র ৪৩ শতাংশ। ডিএসইর সূচক হারানোর হার গেল এক বছরের চেয়ে বেড়েছে। আর মূলধন চলে গেল এক সপ্তাহে ডিএসইর সাত হাজার ১৫০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
সাপ্তাহিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথম দিনটা ইতিবাচক ছিল বাজার। পরের চার দিন পতন আর পতন। পুরো সপ্তাহে ডিএসই চারটি সূচকেরই পয়েন্ট হারিয়েছে। ডিএসইএক্স ৭৫.৭৭ পয়েন্ট হারিয়ে এখন পাঁচ হাজার ৭২৮ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ১২.৪৫ পয়েন্ট হারিয়ে এক হাজার ২২৮.৮১ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক ১০.৩৫ পয়েন্ট হারিয়ে এখন দুই হাজার ১১৪.৩৬ পয়েন্টে এবং এসএমই ১৫.৭৩ পয়েন্ট কমে এখন এক হাজার ২০৭.৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বিদায়ী সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন এক দশমিক ০২ শতাংশ কমে এখন ছয় লাখ ৯২ হাজার ৪৩১ কোটি টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে সাত হাজার ১৫০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
সপ্তাহজুড়ে প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৯৮ কোটি ৮১ লাখ ২০ হাজার টাকার। তার আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৭৯২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে দশমিক ৭৯ শতাংশ বা ছয় কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে তিন হাজার ৯৯৪ কোটি ৬ লাখ টাকার। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল তিন হাজার ১৭০ কোটি ১৮ লাখ টাকার। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৮২৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আর পুরো সপ্তাহে ১০৮ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজারটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে ৯১ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজারটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছিল। ফলে ১৬ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজারটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন বেশি হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৬টির, কমেছে ৩১১টির এবং আটটি কোম্পানির শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টকেরও একই অবস্থা। সেখানে সেঞ্চুরির চেয়ে বেশি হারে পয়েন্ট হারিয়েছে সূচক। সিএএসপিআই ১৪১.৪৭ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক এক শ’ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ৭৮.৭০ পয়েন্ট হারিয়েছে। এক কোটি ৯৬ লাখ ৯ হাজার ৫১৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে ৭১ কোটি ৮১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৪ টাকা বাজারমূল্যে। লেনদেনে অংশ নেয়ার ৩২৪টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৯১টির, দর পতনে ২২১টি এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ১২টির।
লেনদেনের শীর্ষে ডিএসইতে যে ১০ কোম্পানি
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের নেতৃত্বে উঠে এসেছে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৪১ কোটি ৪৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫.১৯ শতাংশ। লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৪.৩২ শতাংশ। আর অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৪.১৯ শতাংশ।
এছাড়া, প্রতিদিন গড় লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এমজেএল বাংলাদেশের ২৫ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার টাকার, লিন্ডে বাংলাদেশের ২৪ কোটি ৫০ লাখ ৬০ হাজার টাকার, গ্রামীণফোনের ২০ কোটি ৯২ লাখ ৩০ হাজার টাকার, ইবনে সিনা ফার্মার ১৪ কোটি ৭৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার, লাভেলো আইসক্রিমের ১৩ কোটি ৭৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ১৩ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার এবং আইএফআইস ব্যাংক পিএলসির ১৩ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
দর পতনে শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানি
সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে নিউলাইন ক্লোথিংস লিমিটেডের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ২৭.৩১ শতাংশ কমেছে। সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে খুলনা পাওয়ারের ১৯.১৭ শতাংশ, শাইনপুকুর সিরামিকসের ১৬.৩৬ শতাংশ, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ১৬.০৩ শতাংশ, ইয়াকিন পলিমারের ১৫.০০ শতাংশ, ওরিয়ন ইনফিউশনের ১৪.২৯ শতাংশ, বেক্সিমকো গ্রীণ সুকুকের ১৪.০০ শতাংশ, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ১৩.৩৩ শতাংশ, ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ১২.৫০ শতাংশ এবং জুট স্পিনার্স লিমিটেডর ১৩.৯৩ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।