১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
পলাতক হাসিনা সরকারের পছন্দের সচিব-ডিজি বহাল

প্রবাসী কল্যাণের সেবা দখলে মরিয়া একটি চক্র

-

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে বইছে সংস্কারের হাওয়া। তবে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা সরকারের অনেক মন্ত্রণালয় অধিদফতরে পছন্দের সচিব-ডিজিরা এখনো চেয়ার আঁকড়ে ধরে আছেন। আর এসব ব্যক্তির ছত্রছায়ায় এখনো সরকারি নানা কাজে অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনা নীরবে ঘটছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রবাসীদের কল্যাণমূলক সেবাদানকারী একমাত্র সরকারি সংস্থা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সেবাগুলো একীভূত করার নামে কুক্ষিগত করার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একটি কুচক্রী মহল।
অভিযোগ রয়েছে, স্বৈরাচার সরকারের চিহ্নিত সুবিধাভোগীদের অন্যতম জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ম্যানেজ করে মন্ত্রণালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা একটি সুবিধাবাদী চক্র আইন ও বিধিকে তোয়াক্কা না করে এই চক্রান্তের সাথে সরাসরি জড়িত। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাকে অনেকটা অন্ধকারে রেখেই এসব কাজ করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে এসব কাজ শুরু হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির শত শত কর্মকর্তা কর্মচারীর মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। কেউ কেউ ক্ষুব্ধও।
গতকাল শুক্রবার রাতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক হামিদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক কৌশলে সরকারি দু’টি প্রতিষ্ঠানের (বিএমইটি ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড) কার্যক্রম একীভূত করার নামে একটা অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন বলে আমরা মনে করছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, আমাদের মাননীয় উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল স্যারকে তারা সঠিক তথ্য না দিয়ে কল্যাণ বোর্ডের কাজকে সঙ্কুচিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা আইন বহির্ভূত কার্যক্রম যাতে না হতে পারে সে ব্যাপারে উপদেষ্টা মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারণ আমাদের দফতর থেকে প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণমূলক সেবা দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণের জন্য ১৯৯০ সালে একটি তহবিল গঠন করা হয়। এরপর ২০০১ সালে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠিত হলে ২০০২ সালে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল বিধিমালা জারি এবং ২০১৮ সালের আইনের মাধ্যমে স্বাধীন-সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে “ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড” গঠন করে প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বহুমুখী সেবা দেয়া হচ্ছে। সেই থেকে একের পর এক নতুন নতুন সেবা দিয়ে যাচ্ছে সরকারি এই সংস্থাটি। অন্য দিকে পুরোপুরি সরকারি প্রতিষ্ঠান জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) বিদেশে কর্মসংস্থান এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনুসন্ধানে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি জেলা পর্যায়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কার্যক্রম দেখভাল করার জন্য জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কার্যপরিধি পুনর্বিন্যাস এবং একই অফিসে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক স্থাপনের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এই দু’টি সিদ্ধান্তই ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড আইন ও বিধির পরিপন্থী। মূলত এই সিদ্ধান্তই সরকারের আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার ওপর সরাসরি অযাচিত হস্তক্ষেপ ও কুক্ষিগত করার শামিল। আরো জানা যায়, দীর্ঘ দুই যুগ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) কল্যাণ তহবিল পরিচালনা করলেও প্রবাসীদের কাক্সিক্ষত সেবা দিতে না পারা, বিশেষ করে প্রবাসে মৃত কর্মীর অনুদান, ক্ষতিপূরণসহ অন্যান্য সেবা প্রদানে অতিমাত্রায় দুর্নীতি ও হয়রানির কারণে কল্যাণ বোর্ড গঠন করা হয়। কল্যাণ বোর্ড আইন ও বিধি অনুযায়ী দেশের যেকোনো স্থানে অফিস স্থাপনের কথা উল্লেখ রয়েছে। সেই লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ে বোর্ডের নিজস্ব অফিস স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ৩১টি ওয়েল ফেয়ার সেন্টার স্থাপন করে প্রবাসীদের কল্যাণমূলক সেবা দেয়া হচ্ছে। প্রকল্প সমাপনান্তে ওয়েলফেয়ার সেন্টারগুলো বোর্ডের নিজস্ব অফিস হিসেবে কাজ করবে মর্মে প্রকল্প দলিলে উল্লেখ রয়েছে। সেভাবেই সেন্টারগুলোর প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সুবিধা দিয়ে সাজানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন থাকায় সংশোধিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী জনবল নিয়োগ কার্যক্রমও চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের দায়িত্বশীলরা জানান, বর্তমানে বোর্ড বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে সহায়তা, কর্মীর সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি ও প্রতিবন্ধী ভাতা এবং বিদেশগামী কর্মীদের বীমা সুবিধা প্রদান করছে। বিদেশ গমন ও প্রত্যাগমনকালে ঢাকায় সাময়িক থাকার ব্যবস্থা, প্রবাসে মারা যাওয়া কর্মীর লাশ দেশে আনা, আর্থিক অনুদান এবং পরিবহন ও দাফন খরচ প্রদান করছে। প্রবাসে আহত ও অসুস্থ কর্মীদের দেশে আনা, হাসপাতালে ভর্তি এবং চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছে। মৃত কর্মীর মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ও বকেয়াসহ অন্যান্য অর্থ আদায় করে পরিবারের নিকট বিতরন করছে এই বোর্ড।
প্রবাসে বিপদগ্রস্ত নারীদের সেইফ হোমে থাকার ব্যবস্থা করা, দেশে ফেরত আনা, আটক কর্মীদের আইনি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। প্রবাসীদের সারাক্ষণ সেবা দানের জন্য প্রবাসবন্ধু কল সেন্টারও পরিচালনা করছে। এই বোর্ড বিশ্বের সবচেয়ে বড় রিইন্টিগ্রেশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের আওতায় বিদেশফেরত দুই লাখ কর্মীকে প্রণোদনা দেয়া এবং আত্মকর্মসংস্থানে আর্থিক ও কারিগরিসহ নানা ধরনের সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। বোর্ড করোনাকালীন সময়ে বিমানবন্দরে লাখ লাখ কর্মীকে তাৎক্ষণিক আরটিপিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা, কোয়ারেন্টিন খরচ প্রদান, প্রবাসে দুর্দশাগ্রস্ত কর্মীদের খাবারের ব্যবস্থা এবং বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য নগদ অর্থ প্রদান করেছে।
গতকাল সন্ধ্যার পর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: রুহুল আমিনের সাথে এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন রিসিভ করেননি।


আরো সংবাদ



premium cement
কারাগারে আসাদুজ্জামান নূর ও মাহবুব আলী বাড়ির জমির রেজিষ্ট্রি না পাওয়ায় ৬০ পরিবারের সাংবাদিক সম্মেলন বায়াররা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, গার্মেন্টস শিল্প এখন ঘুরে দাঁড়ানোর পালা : শ্রমসচিব রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগের দাবিতে মহাসড়ক ব্লকেড চকরিয়ায় গোসলে নেমে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু হাসিনা-রেহেনা-জয়সহ ১৭৯ জনের বিরুদ্ধে সোনারগাঁওয়ে মামলা গত ১৫ বছর বঞ্চিত আড়াই হাজার কর্মকর্তার সুযোগ-সুবিধা ফেরত পেতে আবেদন নবীনগরে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত 'আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে রাসুল সা.-এর পথ অনুসরণ করতে হবে' কমলনগরে যুবদল নেতা বহিষ্কার আ’লীগ নেতাকর্মীদের অবৈধ অস্ত্র জব্দ না হওয়ায় সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে : রিজভী

সকল