১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১, ৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজার গভীরে ইসরাইলি ট্যাংক, নিহত ২২

এক বছরের মধ্যেই ভেঙে পড়তে পারে ইসরাইল: সাবেক জেনারেল
-


ফিলিস্তিনের ছিটমহল গাজায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ২২ বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধাদের সাথে লড়াইরত ইসরাইলি সেনারা গাজার মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক গভীরে ট্যাংক নিয়ে ঢুকে পড়েছে বলে খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে চাপ দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নতুন হামলা ও অভিযানের ঘটনাগুলো ঘটে। যুদ্ধবিরতি নিয়ে কয়েক মাস ধরে থেমে থেমে আলোচনা চললেও তা একই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু ইসরাইল ও হামাস তাদের নিজ নিজ দাবিতে দৃঢ়ভাবে অটল রয়েছে।
গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেইত লাহায়াতে ইসরাইলি হামলায় ১১ জন নিহত হন, মধ্যাঞ্চলীয় আল-মাগাজি শিবিরে এক সাংবাদিকসহ আরো ছয়জন নিহত হন বলে চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলে পৃথক কয়েকটি হামলায় আরো পাঁচজন নিহত হন। এর মধ্যে খান ইউনুসে নিহত দু’জন হলেন এক নারী ও তার শিশু সন্তান।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় তাদের বাহিনীগুলো গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহে ও দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনুসে তাদের অভিযানগুলো জোরদার করে ফিলিস্তিনিদের সামরিক অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দিয়েছে, রকেট জব্দ করেছে ও যোদ্ধাদের হত্যা করেছে। তারা জানায়, তাদের সেনারা গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় ৫০ জন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। দেইর আল-বালাহ শহরে প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দা ও বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আছেন। এখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইসরাইলি ট্যাংকগুলো পূর্ব দিক থেকে আরো এগিয়ে এসে এই শহরের সাথে খান ইউনিস শহরকে সংযোগকারী কিছু রাস্তায় অবস্থান নিয়ে সেগুলো বন্ধ করে রেখেছে।
ইসরাইলি বাহিনীর ট্যাংকগুলো খান ইউনুস শহরের পশ্চিমে আল-কারারা ও হামাদ এলাকার ভেতরে ঢুকে পড়ে বহু বাসিন্দাকে তাদের আশ্রয় ও তাঁবু থেকে উচ্ছেদ করেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এসব করতে তারা ট্যাংক থেকে ভারী গোলাবর্ষণ ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে বলে জানান তারা। কিছু পরিবার কোনো আশ্রয় খুঁজে না পেয়ে রাস্তায় ও সমুদ্র সৈকতে রাতযাপন করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানা গেছে।
ড্রোন হামলায় নিহত ৩ : গাজা অধিকৃত এক শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় অন্তত ৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার তুরস্কের বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেনসি (এএ) এ খবর জানায়। খবরে বলা হয়, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে অধিকৃত উত্তর গাজার পশ্চিম তীরের তুলকারেম শরণার্থী শিবিরে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে ৩ জন নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের সংবাদসংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, নিহতদের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- শ্রীরেইম, মুয়াইয়া আহমদ ও ওয়াসিম আনবার। জানা গেছে, ইসরাইল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের সামরিক অভিযান শুরু করেছে। তারা বুলডোজার দিয়ে রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও শরণার্থী শিবিরে থাকা যানবাহন ধ্বংস করে দিচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে বাইডেন-নেতানিয়াহু ফোনালাপ : রয়টার্স জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দীমুক্তি চুক্তি চূড়ান্ত করতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তাগাদা দিয়েছেন। বুধবার এ বিষয়ে তাদের মধ্যে ফোনালাপ হয়। ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে সমঝোতার জন্য আসন্ন কায়রো বৈঠকের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেছেন তিনি।
ফোনালাপের বিষয়ে হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুদ্ধবিরতি ও বন্দীমুক্তি চুক্তি চূড়ান্ত করতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছেন প্রেসিডেন্ট। এ ছাড়া কায়রোতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠকে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে ব্যবধান কমানোর প্রচেষ্টা নিয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।’
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রচেষ্টায় রোববার ইসরাইল গিয়েছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। এই সফরে ইসরাইল, কাতার ও মিসরে মধ্যস্থতাকারীদের সাথে আলোচনা করেন তিনি। কিন্তু চুক্তির সম্ভাবনা অনিশ্চিত রেখেই মঙ্গলবার দেশে ফিরে যান। চুক্তির বিষয়ে কায়রোতে আবারো আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন মধ্যস্থতাকারীরা। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ইরান, হামাস, হিজবুল্লাহ ও হাউছিসহ সবার হুমকি থেকে ইসরাইলকে নিরাপত্তা দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন বাইডেন। তেহরানে ৩১ জুলাই হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহ নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে ইসরাইলের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করেছে ইরান। এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ইসরাইল অবশ্য কোনো মন্তব্য করেনি। আলোচনায় আরো অংশগ্রহণ করেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটের প্রার্থী কমলা হ্যারিস। গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার ৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত কমপক্ষে ৯২ হাজার ৫৩৭ জন। হতাহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

গাজার বাসিন্দারা ১০ মাসে ২০ বার উদ্বাস্তু : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত ১০ মাস ধরে নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। তাদের বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের মুখে এখনো বেঁচে থাকা ফিলিস্তিনিরা অন্তত ২০ বার উদ্বাস্তু হয়েছে। তাদের আক্ষেপ, এভাবে পালিয়ে বেড়ানোর চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার। সর্বশেষ গাজার মধ্যাঞ্চলীয় খান ইউনুস ও দেইর আল-বালাহ শহর খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। খান ইউনুসের কিছু অংশ ও দেইর আল বালাহ শহরে এরই মধ্যে নির্বিচার স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ নতুন উচ্ছেদের আদেশ জারি করায় এবং সেনাবাহিনী জনাকীর্ণ দেইর আল বালাহ শহরের আরো ভেতরে অগ্রসর হওয়ায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শহরটি থেকে পালাতে চেষ্টা করছে।
কিন্তু, তাদের আক্ষেপ, কোথায় নিরাপদ আশ্রয় খুঁজবে তারা। সব জায়গাতেই হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। প্রতিদিনই শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে তারা। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। দেইর আল বালাহ শহরের একজন ব্যক্তি বলেন, এর চেয়ে মৃত্যু অনেক বেশি ভালো। আমরা ২০ বার বাস্তুচ্যুত হয়েছি। আমাদের ঘরবাড়ি ও তাঁবুতে বারবার হামলা হয়েছে। ইসরাইল চায় না যে আমরা বাঁচি। ওই ফিলিস্তিনি বলেন, মানুষ মারা যাচ্ছে এবং আহত হচ্ছে। মানুষ জানে না কোথায় যাবে, এমনকি নিরাপদ অঞ্চল বলে ঘোষিত আল-মাওয়াসিও নিরাপদ নয়। আমরা জানি না কোথায় যাব, সমুদ্রে বা অন্য কোথায়? আরেক ফিলিস্তিনি বলেন, মানবাধিকার কোথায়? কোথায় পৃথিবীর মানুষ, তারা কি আমাদের দেখছে? আমরা কি শুধু নামের আরব? আরবরা কোথায়? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সমস্ত বিশ্ব আমাদের বিরুদ্ধে কারণ আমরা আরব। এদিকে ইসরাইলি বাহিনী বুধবারও উত্তর গাজা শহরের আরেকটি স্কুল-আশ্রয় কেন্দ্রে ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়েছে। সালাহ আল-দিন নামের ওই স্কুলে ইসরাইলি হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে। স্কুল-আশ্রয় কেন্দ্রে ভয়াবহ ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসঙ্ঘের সংস্থা- ইউএনআরডব্লিউএ ।

এক বছরের মধ্যেই ভেঙে পড়তে পারে ইসরাইল : সাবেক জেনারেল
হামাস ও হিজবুল্লাহর সাথে চলমান যুদ্ধের কারণে এক বছরের মধ্যেই ভেঙে পড়তে পারে ইসরাইল রাষ্ট্র। এমন সতর্কবার্তাই দিয়েছেন ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) ইৎজহাক ব্রিক। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজে লেখা এক নিবন্ধে এই তিনি এই সতর্কবার্তা দেন।
নিজের লেখা নিবন্ধে মেজর জেনারেল (অব:) ব্রিক বলেন, ইসরাইলের নিরাপত্তা (প্রতিরক্ষা) বিষয়ক মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত হয়তো এরই মধ্যে উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন, গাজা ইস্যুতে যদি একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব না হয় এবং এ কারণে যদি আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে ইসরাইলি অতিসত্বর বিপদে পড়তে যাচ্ছে।
ব্রিক তাঁর নিবন্ধে আরো দাবি করেন, গাজায় লক্ষ্য অর্জনের ব্যাপারে ইয়োভ গ্যালান্ত যেসব বড় বড় কথা বলেছিলেন, সেগুলো এখনো অর্জিত হয়নি। গত বছরের শেষ দিকে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী গাজায় প্রবেশ করার পর গ্যালান্ত দাবি করেছিলেন, তারা গাজা শহর এবং এর টানেল নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শিগগির হামাসকে পরাজিত করবেন। কিন্তু এই লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি বলে দাবি করেছেন ব্রিক। তিনি লিখেছেন, এসব লক্ষ্য নাগালের বাইরে রয়ে গেছে এখনো।
ব্রিক তাঁর নিবন্ধে আরো লেখেন, দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে হামলার সময় গ্যালান্ত দাবি করেছিলেন, টানেলে একা ছিলেন হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার এবং তিনি টানেল নেটওয়ার্কে তাঁর লোকদের সাথে যোগাযোগ হারিয়েছেন। কিন্তু সেই বক্তব্যও সঠিক ছিল না। মেজর জেনারেল (অব.) ব্রিক আরো বলেন, ‘আমি ধরে নিচ্ছি গ্যালান্ত এখন বুঝতে পেরেছেন, যুদ্ধ এরই মধ্যে তার উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলেছে। আমরা গাজায় একধরনের জলা পাকের মধ্যে ডুবে যাচ্ছি, সেখানে আমাদের সৈন্য হারাচ্ছি। হামাসকে পতনের যে প্রাথমিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা অর্জনের কোনো সুযোগই সেখানে নেই।’

 


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতে এবার ৭ বছরের মুসলিম ছাত্রের টিফিন নিয়ে বিতর্ক বঙ্গোপসাগর হয়ে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা সিলেটে গৃহকর্মী শিশুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার রাষ্ট্র সংস্কারের পর নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবে সরকার উপদেষ্টা রিজওয়ানা শৈলকুপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ভ্যানচালকের মৃত্যু তাইম হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ বেসরকারি ব্যাংক থেকে জনগণের টাকা ফেরত পেতে উদ্যোগ আমতলীতে ছাত্রলীগ নেতার অস্ত্রের আঘাতে যুবদল নেতা জখম সামিটের এলএনজি টার্মিনালের মেরামত সম্পন্ন, পরিষেবা পেতে লাগবে ২০ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু ২২ সেপ্টেম্বর খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের আশঙ্কা

সকল