১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

জব্দ হচ্ছে প্র্রভাবশালীদের সম্পদ

-

- দুদকের জালে সাবেক ৮০ মন্ত্রী-এমপি-সরকারি কর্মকর্তা
- যৌথভাবে কাজ করছে দুদক-বিএফআইইউ

ছিলেন প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি, আমলা, ব্যবসায়ী বা পুলিশ কর্মকর্তা। রাজনৈতিক প্রভাব আর চেয়ারের দাপট খাটিয়ে হাজার কোটি টাকার মালিকও হয়েছেন। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে তাদের অবৈধ সম্পদের পাহাড়। দুর্নীতি দমন কমিশনের তথ্যানুযায়ী বিগত সরকারের মদদপুষ্ট প্রায় ৮০ জন প্রভাবশালীর অনিয়ম-দুর্নীতি আর অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর মধ্যে অনেকের বিষয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করে তথ্য সংগ্রহের কাজও শুরু করেছে সংস্থাটি। তবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে প্রধান্য দেয়া হচ্ছে, কোনোভাবেই যাতে এসব অবৈধ অর্থ সরিয়ে ফেলা না হয় সেই বিষয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় গত এক সপ্তাহে অন্তত ১৫ জনের ব্যাংক হিসাবসহ সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। সন্দেহজনক, অস্বাভাবিক এই বিপুল সম্পদ জব্দে দুদকের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান, শিক্ষামন্ত্রী নওফেল, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজম ও জান্নাত আরা হেনরি, শামীম ওসমান, তার ভাই এ কেএম সেলিম ওসমান, শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন ও তার ছেলে শেখ সারহান নাসের, সাবেক ডিবি প্রধান হারুনসহ আরো একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আমলা ও সরকারি কর্মকর্তার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। অনেক দিন আগে থেকেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান ছিল। যাচাই-বাছাইয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর, কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অনুসন্ধান চলমান থাকা অবস্থায় যেন তারা এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়ে ফেলতে না পারেন সে জন্য ব্যাংক হিসাব, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছি আমরা। কখনো দুদকের চিঠির প্রেক্ষিতে, আবার কখনো সন্দেহজনক লেনদেন দেখে নিজে থেকে তথ্য সংগ্রহসহ হিসাব জব্দের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ করছে বিএফ আইইউ।

আসাদুজ্জামান খান কামাল : বস্তাভরে ঘুষ নেয়াসহ চাকরি, পদোন্নতি, বদলিবাণিজ্য, এনজিও প্রতিষ্ঠানের ক্লিয়ারেন্স দিয়ে ঘুষ গ্রহণ আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে দুদক। সংস্থার দাবি, এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় অনুসন্ধানে নেমেছে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় একসময়ের দাপুটে এই মন্ত্রীসহ স্ত্রী-সন্তানদের ব্যক্তিগত ও মালিকানাধীন সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সাথে তাদের হিসাবের সব ধরনের লেনদেনের তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। বিএফআইইউয়ের পক্ষ থেকে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান খান, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান ও মেয়ে সাফিয়া তাসনিম খানের নামে থাকা সব ধরনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকবে।

হাছান মাহমুদ : সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সব ধরনের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বিএফআইইউ। ১১ আগস্টে বিএফআইইউয়ের দেয়া নির্দেশটি সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশে বলা হয়, মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, তার স্ত্রী নুরুন ফাতেমা ও মেয়ে নাফিসা জুমাইনা মাহমুদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়ী হিসাব জব্দ করতে হবে। ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় এ নির্দেশ দেয়া হয়। হাছান মাহমুদ ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সরকার গঠিত হয়, সেখানে তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগে তিনি তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সরকারে যাদের অত্যন্ত প্রভাবশালী হিসেবে গণ্য করা হতো, তাদের মধ্যে হাছান মাহমুদ অন্যতম।

আনিসুল হক : সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। ১৪ আগস্ট দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠায়। এতে বলা হয় আগামী ৩০ দিন এসব হিসাবে কোনো ধরনের লেনদেন করা যাবে না। প্রয়োজনে লেনদেন স্থগিত করার এই সময় বাড়ানো হবে।
মির্জা আজম ও জান্নাত আরা হেনরি : আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজম ও জান্নাত আরা হেনরির অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়েছে। অর্থ পাচার নিরোধসংক্রান্ত ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী জব্দের আদেশ দেয় বিএফআইইউ।
নওফেল ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ : সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও তার পরিবারের সব সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে দেশের প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছে।

সাইফুজ্জামান : সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান রুখমিলা জামানের নামে থাকা সব ধরনের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বিএফআইইউ। গত সপ্তাহে এই নির্দেশ দেয়া হয়।
ডিবি হারুনের ব্যাংক হিসাব জব্দ : চরম স্বেচ্ছাচারী ও দাপুটে ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের বিপুল বিত্ত-বৈভবের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। আয়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হাজার কোটি টাকার সম্পদ যে অবৈধ পন্থায় অর্জন করেছেন হারুন, সে বিষয়ে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত দুদক। আর তাই স্ত্রীসহ হারুনের সব ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে।

শিবলী রুবাইয়াতের ব্যাংক হিসাব জব্দ : পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম ও তার ছেলে জুহায়ের সারার ইসলামের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২০ আগস্ট তাদের হিসাব জব্দ করা হয়।
এ ছাড়াও জব্দ করা হয়েছে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত ও তার স্ত্রী শারমিন মুশতারী নামের থাকা সব ধরনের ব্যাংক হিসাব। জব্দের তালিকায় আরো আছেন সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার ভাই এ কে এম সেলিম ওসমান ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অ্যাকাউন্ট।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জব্দ করা হয়েছে শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই, সাবেক এমপি সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও তার ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক ব্যাংক হিসাব। শেখ হেলাল, ছেলে তন্ময় ও ছোট মেয়ে শেখ ফজিলা শারমীনের নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, মানিলন্ডারিং আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী তাদের ব্যাংক হিসাব ও লেনদেন স্থগিত থাকবে। নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, কোনো হিসাব স্থগিত করা হলে হিসাব সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন- হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি চিঠি দেয়ার তারিখ থেকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বিএফআইইউর কাছে পাঠাতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আর্থিক খাত সংস্কারের রূপরেখা দুষ্কৃতিকারীদের আগুনে গাজীপুরে বিগবস কারখানায় ক্ষতি ৫৫ কোটি টাকা প্রশাসনে স্থবিরতা, অসহযোগিতার অভিযোগ তথ্য উপদেষ্টার অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার কীভাবে পাচার করা অর্র্থ ফিরিয়ে আনতে হবে ভারতের কর্তৃত্ববাদ ও প্রতিবেশী সম্পর্ক সাঈদ হত্যা মামলার এএসআই আমির ও কনস্টেবল সুজন কারাগারে গুম হওয়া ৬৪ ব্যক্তির তালিকা কমিশনে পাঠালেন প্রধান বিচারপতি গোবিন্দগঞ্জে অজ্ঞাতানামা ব্যক্তির লাশ উদ্ধার আ’লীগের বিরুদ্ধে মানুষের ঘৃণা ১০০ বছরেও দূর হবে না : সেলিম উদ্দিন কাজের ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করার চেষ্টা করব : জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন

সকল