১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
চট্টগ্রামে ডা: শফিকুর রহমান

জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাতে হাত মিলিয়ে ইনসাফের দেশ গড়ব

চমেক হাসপাতালে ছাত্র আন্দোলনে আহতদের পাশে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান : নয়া দিগন্ত -


জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাতে হাত মিলিয়ে আমরা ইনসাফের বাংলাদেশ গড়ব বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, জুলুম থেকে বাংলাদেশকে চির জীবনের জন্য মুক্ত করুন। যারা জীবন দিয়েছে তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করে নিন। আল্লাহ শহীদদের পরিবার পরিজন ও আমাদেরকে সুস্থতা দান করুন। বাংলাদেশের জমিনে জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা হাতে হাত মিলিয়ে ইনসাফের বাংলাদেশ গড়ব, ইনশাআল্লাহ।
গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার সমাবেশে এই মন্তব্য করেন তিনি। বুধবার সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও বিপুলসংখ্যক সাধারণ জনগণ উপস্থিত হয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

এ সময় জুলুম থেকে বাংলাদেশকে চির জীবনের জন্য মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামবাসীর প্রতি আল্লাহ রহম করুন। আসমান থেকে বরকতের দরজা খুলে দিন।
এরপর সাড়ে ৯টায় তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের দেখতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে যান। তিনি তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং পাশে কিছুক্ষণ সময় কাটান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন। তিনি ডা: শফিকুর রহমানকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
চমেকে সাংবাদিকদেরকে উদ্দেশে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে একটা পরিবর্তন এসেছে। যারা নিহত হয়েছেন তাদের শাহাদাত আল্লাহ কবুল করুন, আর যারা আহত হয়েছেন, তাদেরকে দ্রুত সুস্থ করে দিন। এখানে আহতদের মধ্যে যাদেরকে দেখেছি তাদের প্রত্যেকের মুখে আমরা হাসি দেখেছি, আন্দোলনের জন্য নিজেদের রক্ত দিতে পেরে তারা প্রত্যেকেই গর্বিত। আর হাসপাতালের পরিচালকসহ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ আহতদের ভালো সেবা দেয়ার জন্য।

এ দিকে চমেক হাসপাতাল থেকে তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ ওমর ফারুকের পরিবারের সাথে সাক্ষাতের জন্য নগরীর লালখানবাজারের চাঁনমারি রোডের বাসায় যান। এ ছাড়াও তিনি মুরাদপুরে গুলিতে নিহত শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর ইপিজেডের (প্রি-পোর্ট) বাসায় যান। তিনি শহীদ শান্তর বাবা-মা, নানী ও ছোট বোনের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের পারিবারিক খোঁজখবর নেন ও দোয়া কামনা করেন। বিদায় মুহূর্তে তিনি উপস্থিত ছাত্র-শ্রমিক সর্বস্তরের জনতার উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগর নায়েবে আমির ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীন, মহানগর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্য মাওলানা খাইরুল বাশার, মুহাম্মদ উল্লাহ, এফ এম ইউনুছ ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, কর্মপরিষদ সদস্য ডা: ছিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, মহানগর অফিস সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ।

কক্সবাজারে ২ শহীদের পরিবারকে আর্থিকসহায়তা প্রদান
কক্সবাজার অফিস জানায়, কক্সবাজারের চকরিয়ায় ও ঈদগাহ উপজেলায় দুটি পৃথক পথসভায় জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেন, কেউ আইন হাতে নেবেন না, কোনো অন্যায় করবেন না। রক্তাক্ত বিপ্লবের পর ষড়যন্ত্র থেমে নেই এখনো আমরা ষড়যন্ত্রের সুড়সুড়ানি শুনতে পাই। আজ এই ষড়যন্ত্র কাল ওই ষড়যন্ত্র। আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের পরিষ্কার বলে দিতে চাই ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাত ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। সব ষড়যন্ত্রকে ধূলিসাৎ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

এ দেশ শাহজালাল, শাহ মখদুম, হাজী শরীয়ত উল্লাহ, তিতুমীরসহ অসংখ্য শহীদের। এই বাংলাদেশে দুর্বৃত্তের কোনো জায়গা নাই। দেশের মানুষ সাড়ে ১৫টি বছর অনেক যন্ত্রণা-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে সব জুলুম পায়ের নিচে ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ওপর যারা জুলুম করেছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নেবো না কিন্তু যারা ছাত্রদের বুকে গুলি চালিয়েছে, অন্যায়-অবিচার করেছে, তাদের শাস্তি পেতে হবে। প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দাতা পরিকল্পনাকারী এবং বাস্তবায়নকারী প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ শাস্তি পেতেই হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান কক্সবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শাহাদতবরণকারী দুই পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেছেন এবং চকরিয়ার শহীদ আহসান হাবিব এবং ঈদগাহ উপজেলার শহীদ নূরুল মোস্তফার পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, জেলা আমির মাওলানা নূর আহমদ আনোয়ারী, চট্টগ্রাম মহানগরী আমির শাহজাহান চৌধুরী, কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমির আবদুল্লাহ আল ফারুক, চকরিয়া পৌরসভা আমির আরিফুল কবির, ঈদগাহ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুল আলম বাহাদুর প্রমুখ।
শহীদদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশে ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হোক
লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ছাত্র-জনতা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে জালিমের জুলুম থেকে মুক্ত করেছেন। এই আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন তাদেরকে মহান আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করুন। যারা আহত হয়েছেন তাদেরকে সুস্থতার নেয়ামত দান করুন। তাদের সবাইকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করুন। তাদের এই ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশে জাস্টিস প্রতিষ্ঠিত হক। ইনসাফের ভিত্তিতে সমাজ-রাষ্ট্র পরিচালিত হোক।

তিনি গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার দর্জিপাড়ায় কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ ইশমামুল হকের কবর জিয়ারত করতে এসে সমবেত হাজার হাজার জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্যে উপরি উক্ত কথা বলেন।
জামায়াত অধ্যুষিত সংসদীয় আসন হিসেবে পরিচিত লোহাগাড়ায় আমিরে জামায়াত আসছেন এই খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার জনতা তাকে বরণ করে নিতে রাস্তায় নেমে আসে।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম মহানগরীর আমির সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম জোনের টিম মেম্বার অধ্যাপক জাফর সাদেক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আমির অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা বদরুল হক, বান্দরবান জেলা আমির এস এম আব্দুস সালাম আজাদ, লোহাগাড়া উপজেলা আমির অধ্যাপক আসাদুল্লাহ ইসলামাবাদী, সেক্রেটারি মাওলানা আবুল কালাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্য মাওলানা আ ন ম নোমান, আমিরাবাদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী মাওলানা নুরুল আলম চৌধুরী, বড়হাতিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জুনায়েদ, চুনতী মাদরাসার সাবেক অধ্য মাওলানা হাফিজুল হক প্রমুখ।

আমিরে জামায়াত শহীদ ইশমাম বাড়িতে গিয়ে তার মা ও ভাইদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তাদেরকে সান্তনা দিয়ে বলেন, ‘মহান আল্লাহ ইশমামকে শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন এটা নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের বিষয়। আমরা কেউ এই পৃথিবীতে চিরদিন থাকার জন্য আসিনি। আমাদের সবাইকে একদিন আখিরাতে চলে যেতে হবে। কেউ আগে, কেউ পরে।’
ঢাকা মহানগরী উত্তর : কোনো যুবককে আর চাকরির জন্য বিদেশে গিয়ে আত্মাহুতি দিতে হবে না উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশকে একটি ইনসাফপূর্ণ ও মানবিক দেশ হিসেবে গড়ে তুলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা হবে। আমার দেশের কোনো যুবককে আর চাকরির জন্য রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করতে হবে না। এ রকম একটা স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা প্রতিষ্ঠা করবো ইনশা আল্লাহ। তেজগাঁ ও বাড্ডার দু’টি রেস্টুরেন্টে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে পৃথক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও হাতিরঝিল অঞ্চল পরিচালক হেমায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক, সহকারী অঞ্চল পরিচালক আতাউর রহমান সরকারের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা।


আরো সংবাদ



premium cement
দুষ্কৃতিকারীদের আগুনে গাজীপুরে বিগবস কারখানায় ক্ষতি ৫৫ কোটি টাকা প্রশাসনে স্থবিরতা, অসহযোগিতার অভিযোগ তথ্য উপদেষ্টার অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার কীভাবে পাচার করা অর্র্থ ফিরিয়ে আনতে হবে ভারতের কর্তৃত্ববাদ ও প্রতিবেশী সম্পর্ক সাঈদ হত্যা মামলার এএসআই আমির ও কনস্টেবল সুজন কারাগারে গুম হওয়া ৬৪ ব্যক্তির তালিকা কমিশনে পাঠালেন প্রধান বিচারপতি গোবিন্দগঞ্জে অজ্ঞাতানামা ব্যক্তির লাশ উদ্ধার আ’লীগের বিরুদ্ধে মানুষের ঘৃণা ১০০ বছরেও দূর হবে না : সেলিম উদ্দিন কাজের ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করার চেষ্টা করব : জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন মিজানুর হত্যা মামলায় ইনু, মেনন ও পলককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে

সকল