১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বহাল তবিয়তে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে রসদ জোগানো এআইএস পরিচালক

অনিয়ম দুর্নীতি তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদক
-


স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের দোসর কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার ও তার স্বামী বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরানো হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এবং বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) মহাপরিচালককে। কিন্তু এখনো বহাল তবিয়তে আছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের আরেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) পরিচালক দুর্নীতিবাজ ড. সুরজিত সাহা রায় ও তার দোসররা।
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলে টানা কয়েক দিন খামারবাড়িতে অফিস করেননি তিনি। কিন্তু কিছুদিন হলো অফিস করছেন। সচিবালয়ে ঘুরছেন শীর্ষ কর্মকর্তাদের আনুকূল্য পেতে। দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দৈনিক নয়া দিগন্তে এর আগে তথ্য প্রমাণসহ খবর প্রকাশ হলেও শেখ হাসিনার সাবেক পিএস বিদায়ী কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তারের বদান্যতায় তিনি পার পেয়ে যান। তবে সুরজিত সিন্ডিকেটের অনিয়ম দুর্নীতি তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সমন্বিত জেলা ঢাকা-১-এর সহকারী পরিচালক মো: তানজিল হাসানকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন ছিল রোববার (৪ আগস্ট)। রাজধানীসহ সারা দেশে সে দিন ১১৭ জন ছাত্র-জনতার লাশ পড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি ও আওয়ামী ক্যাডারদের হামলায়। আহত হন হাজার হাজার মানুষ। ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের আগের দিন গদি রক্ষায় মরণকামড় দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এমন একটি দিনে কৃষি মন্ত্রণালয় ও অধিনস্থ ১৭টি প্রতিষ্ঠানের বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা, ননক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজধানীর খামারবাড়ির রাস্তায় নামানো হয় ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যখন শিক্ষার্থী ও জনতার লাশ পড়ছিল, রক্ত রঞ্জিত হচ্ছিল রাজপথ, তখন ওই আন্দোলনকে জঙ্গীদের আন্দোলন অভিহিত করে কৃষিবিদ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্লোগান ছিল শেখ হাসিনার পক্ষে। ওই দিন তিন হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাত্র-জনতার এক দফার আন্দোলনের বিপক্ষে নামায় আওয়ামী সরকার।

তাদের ব্যবহৃত ১৮-২০টি ব্যানার, ৫ শতাধিক প্ল্যাকার্ড তৈরির দায়িত্ব পড়ে কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) ওপর। শুধু তাই নয়, বৃষ্টি হতে পারে, এমন সম্ভাবনা রেখে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ছাতা আনার দায়িত্বও পালন করে এআইএস। কৃষি মন্ত্রণালয়ভুক্ত এই সংস্থাটির পরিচালক ড. সুরজিত সাহা রায় আগের দিন সন্ধ্যা থেকে সারারাত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে ব্যানার, প্লেকার্ড তৈরির কাজ করেন। পরের দিন সকালে নিজে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে পিকআপ ভ্যানে করে খামারবাড়ির সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ ও মানববন্ধনে এসব সরবরাহ করেন। এ সংক্রান্ত ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। তার সাথে তথ্য অফিসার (কৃষি) মো: আমিনুল ইসলামসহ আরো কয়েকজনকে দেখা যায়। সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও আওয়ামী লীগের কৃষিবিদ নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের মিছিলের সাথেও সামনের সারিতে দেখা যায় সুরজিতকে। এআইএস সূত্রে জানায়, গত ৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষে কথিত শান্তি সমাবেশে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা হয়। সুরজিতের সাথে এআইএসের প্রধান তথ্য অফিসার বিএম রাশেদুল আলম, আমিনুল ইসলাম, শ্বাশ্বতিসহ পরিচালক ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কর্মচারী ওই দিন সবাইকে কর্মসূচিতে আসতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কৃষি তথ্য সার্ভিসে গত কয়েক বছরে লুটপাটের বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ এসেছে নয়া দিগন্তের কাছে। অনুসন্ধানে এবং নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কৃষি তথ্য সার্ভিসকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন সুরজিত সাহা রায় সিন্ডিকেট। তার এ সিন্ডিকেটে রয়েছেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সঞ্জিত কুমার ভৌমিক, ক্যাশিয়ার মো: জুয়েল হোসেন, টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট (আইসিটি ইনচার্জ, অতিরিক্ত দায়িত্ব) বাদল চন্দ্র সরকার, তারা ভুয়া বিল-ভাউচার ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন বলে অভিযোগ। ছিলেন আরেক কর্মকর্তা (ডিএইতে বর্তমানে) মনসুর।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার ডায়েরি ছাপানোয় অনিয়ম এবং প্রেস সংশ্লিষ্ট কাগজ ও মুদ্রণসামগ্রী কেনাকাটায় লাখ লাখ টাকার অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য উঠে আসে বিল ভাউচারে। এ নিয়ে গত ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি দৈনিক নয়া দিগন্তে খবর প্রকাশিত হয়। তদন্ত কমিটি গঠন করে কৃষি মন্ত্রণালয়। কিন্তু বিদায়ী প্রভাবশালী সচিব ওয়াহিদা আক্তারের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু হওয়ায় রক্ষা পান সুরজিত সিন্ডিকেট। কারা তথ্য দিয়েছে তা বের করতে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। সন্দেহমূলকভাবে কর্মচারীদের অনেককে করা হয় বদলি। তাদের একজন জহির গত পড়শু স্ট্রোক করে মারা গেছেন। এসব বিষয়ে কথা বলতে গতকাল সন্ধ্যায় সুরজিত সাহা রায়কে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আর্থিক খাত সংস্কারের রূপরেখা দুষ্কৃতিকারীদের আগুনে গাজীপুরে বিগবস কারখানায় ক্ষতি ৫৫ কোটি টাকা প্রশাসনে স্থবিরতা, অসহযোগিতার অভিযোগ তথ্য উপদেষ্টার অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার কীভাবে পাচার করা অর্র্থ ফিরিয়ে আনতে হবে ভারতের কর্তৃত্ববাদ ও প্রতিবেশী সম্পর্ক সাঈদ হত্যা মামলার এএসআই আমির ও কনস্টেবল সুজন কারাগারে গুম হওয়া ৬৪ ব্যক্তির তালিকা কমিশনে পাঠালেন প্রধান বিচারপতি গোবিন্দগঞ্জে অজ্ঞাতানামা ব্যক্তির লাশ উদ্ধার আ’লীগের বিরুদ্ধে মানুষের ঘৃণা ১০০ বছরেও দূর হবে না : সেলিম উদ্দিন কাজের ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করার চেষ্টা করব : জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন

সকল