০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ছাত্র-জনতা হত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় সাংস্কৃতিক সমাবেশ

রাজধানীতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিবাদ : নয়া দিগন্ত -


কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ‘ছাত্র-জনতা হত্যা, মিথ্যা মামলা ও নির্বিচারে আটকের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো। এতে শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীরা অংশ নেন। এ সময় দায়ী মন্ত্রীদের পদত্যাগসহ জাতিসঙ্ঘের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়।
এ সময় তারা বলেন, সরকারের তরফে যেসব বক্তব্য আসছে তাতে মনে হচ্ছে, হত্যার শিকার হয়েছে কেবল স্থাপনা, মানুষের প্রাণহানি হয়নি। তাই তথ্য গোপন না করে নাগরিকদের মতপ্রকাশ ও তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
গতকাল ‘প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনে’র ব্যানারে বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে ৩১টি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন। এতে যোগ দেন সাংস্কৃতিক কর্মী, মানবাধিকার কর্মী, সামাজিক কর্মী, সাংবাদিকসহ অনেকে।
এ সময় বক্তারা হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার দাবি করেন। সমাবেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর ধিক্কার জানিয়ে বলা হয়, আন্দোলনকারীরা শরীরে বুলেট নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ছুটেছে। আন্দোলনকারী বলে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়নি। বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এসব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গান গেয়েছেন ও কবিতা আবৃত্তি করেন।

সমাবেশে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এত সংখ্যক মৃত্যু দেখে কেউ চুপ করে থাকতে পারে না। চোখ বন্ধ করলেই ওই লাশগুলো দেখতে পাই। আগের বিচারিক তদন্তে আমরা জজ মিয়ার নাটক দেখেছি। তাই আমরা জাতিসঙ্ঘের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। এ সময় তিনি দায়ী মন্ত্রীদের পদত্যাগ, ক্যাম্পাসে নোংরা রাজনীতি বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, প্রতিটি গুলিবিদ্ধ দেহের বিপরীতে জবাব চাই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল কাদের সৃষ্টি? এই নষ্ট রাজনীতি বন্ধ চাই। সব বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হোক। আর একটা গুলিও যেন না হয়।
রিজওয়ানা হাসান আরো বলেন, আমরা নাকি সিঙ্গাপুর হয়ে গিয়েছি! সিঙ্গাপুর হলে এতগুলো লাশের পর সে দেশের কতজন মন্ত্রী পদত্যাগ করতেন? আমাদের দেশে কি ঘটেছে? এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আপনাদের ক্ষমা চাইতে হবে। আমরা ভালো নেই।

সমাবেশে দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল ন্যায়সঙ্গত। সরকার আন্দোলন দমনের জন্য শক্তি প্রয়োগ করে, যার ফলে অসংখ্য লোক মারা যায়। এত বিপুলসংখ্যক মৃত্যুর পরও সরকার দুঃখ প্রকাশ করেনি। তিনি বলেন, দুই শতাধিক প্রাণ ঝরে গেছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদও ধ্বংস হয়েছে। এই আন্দোলন শুধু কোটাবিরোধী নেই। এটা জনগণের আন্দোলন হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সাম্মানিত নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন বলেন, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা জানার অধিকার আমাদের আছে। সরকারের বক্তব্য দেখে মনে হচ্ছে, তারা জীবনের চেয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নিয়ে বেশি চিন্তিত। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েদের ওপর গুলি চলেছে, কত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। কিন্তু সরকারের বক্তব্য শুনে মনে হবে, শুধু রাষ্ট্রের সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এই সমাবেশ করতেও অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে তথ্য গোপন করা হচ্ছে; কিন্তু আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য জানতে চাই। সেই অধিকার আমাদের আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, দেশ এখন স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে হাজারো মানুষ আহত হয়েছে। এতে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হন। এসব হত্যাকাণ্ডের দায় সরকারকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, যেসব বক্তব্য দেয়া হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে, হত্যার শিকার হয়েছে কেবল স্থাপনা, মানুষের প্রাণহানি হয়নি। এই আন্দোলন ঘিরে যাদের গ্রেফতার করে কারাগারে নেয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের তথ্য প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আজ যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি না করা যায়, তাহলে আমরা কোনো দিন স্বৈরশাসকের হাত থেকে বের হতে পারব না।

সমাবেশ শেষে তারা শোভাযাত্রা বের করেন, যা রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এ সময় তারা ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এ জনতা’, ‘রক্তের প্রতিশোধ রক্তেই নিতে হয়,’ কারার ওই লৌহ কপাট ইত্যাদি প্রতিবাদী গান গাওয়া হয়।
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিবর্তনের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান (লালটু), সাংবাদিক আশরাফ কায়সারসহ অনেকে।
এই কর্মসূচির ব্যানারে লেখা ছিল সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার লাইন, ‘স্বজন হারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবোই’। বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে প্রতিবাদী গান গেয়ে আর কবিতা পড়ে প্রতিবাদ জানান শিল্পী ও সমাজকর্মীরা।

স্লোগান দিয়ে তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে সেই জনতা’, ‘এই শিকল পরা ছল’, ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ গেয়ে গেয়ে প্রতিবাদ জানান সবাই। শিল্পী সায়ান গান ‘ভয় বাংলায়, ভয় বাংলায়/ এই বাংলা নাকি তাদের আর অন্য কারও নয়, জয় ক্ষমতার জয় ক্ষমতার’ গান গাওয়া হয়।
সমাবেশ শেষে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যেতে চাইলে নিরাপত্তার কারণে তা বাতিল করা হয়। সমগীত, বটতলা, বিবর্তন, চারণ শিল্পীগোষ্ঠী, উত্তরসূরিসহ দেশের মোট ৩১টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা এ সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশ শুরুর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের কাছ থেকে মাইক নিয়ে গেছেন বলে জানান সংস্কৃতিকর্মীরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন : তাজুল ইসলাম চিফ প্রসিকিউটর আবুধাবির কারাগার থেকে দেশে ফিরেছেন ১৪ বীর কোনাবাড়ীতে কলেজছাত্রকে গুলি করে হত্যা : কনস্টেবল গ্রেফতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তগুলো যৌক্তিক : ফখরুল ‘একটি চক্র জামায়াত আমিরের বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে’ অস্ত্র জমা দেয়নি শামীম ওসমান ও গাজী পরিবার এবি পার্টির উপদেষ্টার পদ ছাড়লেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া নিয়ে বিতর্কে মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ আশুলিয়ায় শ্রমিক দলের সমাবেশে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৫ রূপগঞ্জে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা না দেয়া ডাক্তারদের সনদ বাতিলের দাবি ড্যাবের

সকল