০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

নেতানিয়াহুকে গাজা চুক্তি চূড়ান্ত করার আহ্বান বাইডেনের

-

- যুদ্ধ বন্ধের ‘সময় এসেছে’, নেতানিয়াহুকে কমলা
- গাজায় শিশুদের ইচ্ছাকৃতভাবেই গুলি করা হচ্ছে : মার্কিন চিকিৎসকদের চিঠি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে দেখা করেছেন এবং গাজা যুদ্ধবিরতি এবং বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে দ্রুত একটি চুক্তি চূড়ান্ত করতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতি অনুসারে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন অবশিষ্ট ব্যবধান দূর করতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চুক্তি চূড়ান্ত করে বন্দীদের দেশে ফিরিয়ে আনার এবং গাজা যুদ্ধের একটি টেকসই লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করার পাশাপাশি এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তা ছাড়া উভয়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক সঙ্কট এবং সাহায্য সরবরাহে বাধা দূর করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা ও আনাদোলু।
অন্য দিকে গাজায় ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। কমলা বলেন, আমরা এই পরিস্থিতিতে অসাড় ভূমিকা নিতে পারি না, নীরবও থাকতে পারি না। এক বৈঠকে ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর যুদ্ধ বন্ধের ‘সময় এসেছে’ বলে নেতানিয়াহুকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট।

বিবিসি বলেছে, হোয়াইট হাউজে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে এক আলোচনায় এ কথা বলেন কমলা। তিনি আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বৈঠকে নেতানিয়াহুর সাথে ‘খোলামেলা এবং গঠনমূলক’ আলোচনায় গাজা যুদ্ধ নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তুলনায় কমলা ‘কঠোর মনোভাব’ দেখিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। কমলা বলেছেন, গাজায় হতাহতের বিষয়ে তার ‘গভীর উদ্বেগ’ রয়েছে। সঙ্কট সুরাহায় দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতি জোর দিয়ে কমলা বলেন, সময় হয়েছে এই যুদ্ধ বন্ধের।
ইসরাইল-গাজা যুদ্ধকাল গড়িয়েছে দশম মাসে। এই যুদ্ধ শেষ করার জন্য নেতানিয়াহুকে দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাপের মুখে পড়তে হয়েছে। নেতানিয়াহুর সাথে ৪০ মিনিটের বৈঠকে কমলা বলেছেন, ইসরাইলের ‘আত্মরক্ষার’ অধিকার আছে সেটা তিনি মানেন এবং দেশটির প্রতি আমেরিকার ‘অটল প্রতিশ্রুতিও’ আছে। কমলা বলেন, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। তবে আত্মরক্ষার পদ্ধতি কী হবে তা গুরুত্বপূর্ণ এবং একই সাথে গাজায় ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।
আসুন আমরা যুদ্ধ শেষ করতে চুক্তিটি সম্পন্ন করি যাতে, আমরা যুদ্ধ শেষ করতে একটি যুদ্ধবিরতি পেতে পারি। আসুন আমরা বন্দীদের মুক্ত করে নিয়ে আসি এবং ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ত্রাণ পৌঁছে দেই। এ দিকে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান মনোনীত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে নেতানিয়াহুর দেখা করার কথা রয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলেন হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই পরস্থিতিতে একটি বন্দী মুক্তি চুক্তির জরুরি প্রয়োজন বলে মনে করেন। এ ছাড়া তাদের আলোচনায় লেবাননে সঙ্ঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা, ইরানের হুমকি এবং সমঝোতায় পৌঁছানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের সম্পর্কে ‘ফাঁক রয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন জন কিবরি।

শিশুদের ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি
এ দিকে গাজায় শিশুদের ইচ্ছাকৃতভাবেই গুলি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেখানে কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে এমন ৪৫ জন মার্কিন চিকিৎসক এবং নার্সদের একটি গ্রুপ। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে এ বিষয়ে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে এই চিঠি প্রকাশ করা হয়।
আলজাজিরার খবর অনুসারে, চিকিৎসাকর্মীদের ওই চিঠিতে অবরুদ্ধ উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। গাজা যুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন অব্যাহত রাখার বিষয়টি বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন মুহূর্তেই মার্কিন সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের কাছে এ ধরনের চিঠি এলো। ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে যে, সম্ভবত এই সঙ্ঘাতে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৯২ হাজারের বেশি হয়েছে। এই সংখ্যা হতবাক করার মতোই কারণ এটা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী প্রত্যেক চিকিৎসাকর্মী জানিয়েছেন, তারা ফিলিস্তিনের যেসব শিশুদের চিকিৎসা দিয়েছেন তাদেরকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তারা লিখেছেন, আমাদের প্রত্যেকেই প্রতিদিন এমন সব শিশুকে চিকিৎসা দিয়েছি যাদের মাথা এবং বুকে গুলি করা হয়েছে। অল্প সংখ্যক মানুষ বাদে গাজার প্রায় প্রত্যেকেই অসুস্থ, আহত বা দুই ধরনের সমস্যার সাথেই লড়াই করে যাচ্ছে।
এ দিকে ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ১১ জন। এর মধ্যে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরও রয়েছে। সে আলজাজিরাকে জানিয়েছে যে, হামাস এবং সেখানে বন্দী করে রাখা লোকজনের বিষয়ে তথ্য দেয়ার জন্য তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। গত ১০ মাস ধরে গাজায় তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৯ হাজার ১৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরো ৯০ হাজার ৪০৩ জন।

নেতানিয়াহুকে গ্রেফতারের দাবি
অন্য দিকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করা উচিত বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। একই সাথে নেতানিয়াহুকে মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণের সুযোগ দেয়ারও সমালোচনা করেছে হামাস। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। বার্তাসংস্থাটি বলেছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আমেরিকান কংগ্রেসে ভাষণ দেয়ার সুযোগের নিন্দা করে হামাস বৃহস্পতিবার বলেছে, তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে গ্রেফতার করা উচিত ছিল।
মূলত নেতানিয়াহু গত বুধবার মার্কিন কংগ্রেসে একটি বক্তৃতা দিয়েছেন। তার সেই ভাষণের সময় হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং সিনেটের প্রায় অর্ধেক ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতা গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের আগ্রাসন এবং অপরাধের প্রতিবাদে ওয়াক আউট করেছিলেন।
পরে হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বিশ্বের সামনে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার সুযোগ দেয়ার পরিবর্তে এবং গাজায় গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ ঢেকে দেয়ার জন্য প্ল্যাটফর্ম দেয়ার পরিবর্তে নেতানিয়াহুকে একজন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেফতার করা উচিত ছিল এবং তাকে আইসিসি (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত) এর কাছে হস্তান্তর করা উচিত ছিল। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনটি আরো বলেছে, নেতানিয়াহুর বক্তৃতা তার সামরিক, নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সঙ্কটের গভীরতাই প্রতিফলিত করেছে।
হামাস নেতানিয়াহুকে রাফাহ এবং নুসেইরাতের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত ‘ভয়াবহ গণহত্যা’ উপেক্ষা করার পাশাপাশি অনেক বন্দীকে মুক্ত করার মতো মিথ্যা বিজয়ের দাবি করার বিষয়েও অভিযুক্ত করেছে।

ইসরাইলি হেফাজতে হামাস নেতার মৃত্যু
এ দিকে পশ্চিমতীরে ইসরাইলি হেফাজতে থাকা এক সিনিয়র হামাস নেতার মৃত্যুর খবর জানিয়েছে রয়টার্স। রয়টার্সের খবর গতকাল শুক্রবার নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং হামাস। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বন্দিবিষয়ক সংস্থা এবং পর্যবেক্ষক সংস্থা ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স ক্লাবের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ ইসরাইলের একটি কারাগার থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ৬৩ বছর বয়সী হামাস নেতা মুস্তাফা মুহাম্মদ আবু আরা মারা যান।
হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা নেতা ও বন্দী শেখ মুস্তফা মুহাম্মদ আবু আরার মৃত্যুতে গভীর শোকও দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ইচ্ছাকৃত চিকিৎসায় অবহেলার মাধ্যমে তাকে হত্যার জন্য ইসরাইলের দখলদারিত্বকে দায়ী করছি। ফিলিস্তিনি সংস্থা এবং পর্যবেক্ষক জানিয়েছে, গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যেই গত বছরের অক্টোবরে আবু আরাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। হামাস বলেছে, আটকের সময় তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল ও কারাগারে তাকে অনাহারে রাখা হয়েছিল।


আরো সংবাদ



premium cement
এ সরকার জনপ্রত্যাশার কী করবে? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন : তাজুল ইসলাম চিফ প্রসিকিউটর আবুধাবির কারাগার থেকে দেশে ফিরেছেন ১৪ বীর কোনাবাড়ীতে কলেজছাত্রকে গুলি করে হত্যা : কনস্টেবল গ্রেফতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তগুলো যৌক্তিক : ফখরুল ‘একটি চক্র জামায়াত আমিরের বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে’ অস্ত্র জমা দেয়নি শামীম ওসমান ও গাজী পরিবার এবি পার্টির উপদেষ্টার পদ ছাড়লেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া নিয়ে বিতর্কে মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ আশুলিয়ায় শ্রমিক দলের সমাবেশে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৫ রূপগঞ্জে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা

সকল