০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ আর নেই

-

জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ আর নেই। গতকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে গত দুই দিন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
জানা গেছে, এ বছরের শুরুর দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জেও শাফিন আহমেদের একবার হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর চিকিৎসকেরা তাকে মানসিক চাপ নেয়া, এমনকি বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন। বাংলাদেশী ব্যান্ড সঙ্গীতে অন্যতম একটি নাম মাইলস। শাফিন আহমেদ বেশ কয়েক বছর মাইলসের সাথে ছিলেন না। নিজের মতো করে নতুন একটি ব্যান্ড দল গঠন করেন তিনি।
৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন শাফিন আহমেদ। একটি কনসার্টে গানও পরিবেশন করেন। ২০ জুলাই ভার্জিনিয়াতে তার আরেকটি স্টেজ শোতে পারফর্ম করার কথা ছিল। সেদিন অনুষ্ঠানের আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়।
বড় ভাই হামিন আহমেদ জানান, ম্যাসিভ (গুরুতর) হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল শাফিন আহমেদের। তিনি জানান, ২০ জুলাই ভার্জিনিয়ায় গান গাওয়ার কথা ছিল শাফিন আহমেদের। সব ঠিকঠাক চলছিল। হোটেলে আয়োজকেরাসহ বসা ছিলেন। এর মধ্যে শাফিন জানান, তার শরীরটা খারাপ লাগছে। তাই স্টেজ শো বাতিল করতে হয়। হামিন আহমেদ জানান, ১৫ বছর আগে থেকে শাফিন আহমেদ হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। প্রথমবার তিনি ভারতে হার্ট অ্যাটাক করেন। ভারতের ওই হার্ট অ্যাটাকও মেজর ছিল। এরপর সেটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কয়েক বছর আগে কক্সবাজারে আরেকবার হার্ট অ্যাটাক হয় শাফিনের। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানের দিনই শাফিনের খারাপ লাগা শুরু করে। একটা পর্যায়ে অসুস্থতা বাড়তেই থাকে। মাত্রাতিরিক্ত অস্বস্তিবোধও হচ্ছিল। খারাপ লাগাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে শাফিন সবার সামনে পড়ে যায়। হোটেল রুমে থাকা আয়োজকেরা ঘাবড়ে যান। এরপর তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর তিনি কিছুটা ভালো অনুভব করেন। তখন যারা আয়োজক ছিলেন, তারা হাসপাতাল থেকে চলে আসেন। রাত সাড়ে তিনটার দিকে আবার অ্যাটাক হয়, সেটা ম্যাসিভ ছিল। ৫-৭ মিনিট তিনি একেবারে অচেতন ছিলেন। এরপর সিপিআর করে তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়। সিপিআর শেষে তাকে ভেন্টিলেশনে নেয়া হয়। সেখানে কয়েক দিন ভেন্টিলেশন শেষে গতকাল তিনি ইন্তেকাল করেন।
শাফিন আহমেদ গানের মানুষ হলেও সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতেও। অনেকটা হুট করেই তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন। ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের হাতে ফুল দিয়ে তিনি যোগ দেন। এর আগে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে (এনডিএম) যোগ দেন। সেই দলের হয়ে গত সিটি নির্বাচনে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে নির্বাচনে প্রার্থীও হতে চেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দলটির উচ্চ পরিষদের সদস্য। শেষ পর্যন্ত ঢাকা উত্তরের মেয়র নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়াতে শাফিনকেও আর দেখা যায়নি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) উপনির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থীও হতে চেয়েছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জড়িয়ে ছিলেন জাতীয় পার্টি রাজনীতির সাথে। ২০১৯ সালে ডিএনসিসি উপনির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিষেকটা ভালো হয়নি তার। শাফিন ঋণখেলাপি- এই অভিযোগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল।
তবে নিজেকে রাজনীতিবিদের চেয়ে গানের মানুষ হিসেবেই পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করতেন শাফিন। ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়ার পর এক বক্তব্যে ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আমার রাজনীতি নিয়ে ভক্তদের এত বেশি চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, আমি প্রথমত মিউজিশিয়ান। এরপর রাজনীতিবিদ।
শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। মা কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ফিরোজা বেগম এবং বাবা সঙ্গীতজ্ঞ কমল দাশগুপ্ত (কামাল উদ্দিন আহমেদ)। এই পরিবারে জন্ম নেয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই শাফিন আহমেদ গানের ভেতরেই বড় হন। শৈশবে বাবার কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিখেছেন আর মায়ের কাছে শিখেছেন নজরুল সঙ্গীত। এরপর বড়ভাই হামিন আহমেদসহ যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার সুবাদে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সংস্পর্শে এসে ব্যান্ডসঙ্গীত শুরু করেন। দেশে ফিরে গড়ে তোলেন মাইলস। যা দেশের শীর্ষ ব্যান্ডের একটি এখনও। এই ব্যান্ডের ৯০ ভাগ গান শাফিন আহমেদের কণ্ঠে সৃষ্টি হয়েছে। পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা। তিনি কণ্ঠের পাশাপাশি ব্যান্ডটির বেজ গিটারও বাজাতেন। তবে বড় ভাই হামিন আহমেদের সাথে বিবাদের জেরে গেল ক’বছর আগে তিনি মাইলস থেকে বেরিয়ে আলাদা দল গড়ে তোলেন। শাফিন আহমেদের কণ্ঠে তুমুল জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে চাঁদ তারা সূর্য, জ্বালা জ্বালা, ফিরিয়ে দাও, ফিরে এলে না, আজ জন্মদিন তোমার প্রভৃতি।
শাফিন আহমেদের স্মৃতিকথা নিয়ে ‘পথিকার’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এটি লিখেছেন সাজ্জাদ হুসাইন। গানের বাইরে টেলিভিশনের জন্য দু’টি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এ ছাড়া রাজনীতিতে এসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হয়েও আলোচনার সৃষ্টি করেন। তার মৃত্যুতে শিল্পাঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে আসে।


আরো সংবাদ



premium cement
এ সরকার জনপ্রত্যাশার কী করবে? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন : তাজুল ইসলাম চিফ প্রসিকিউটর আবুধাবির কারাগার থেকে দেশে ফিরেছেন ১৪ বীর কোনাবাড়ীতে কলেজছাত্রকে গুলি করে হত্যা : কনস্টেবল গ্রেফতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তগুলো যৌক্তিক : ফখরুল ‘একটি চক্র জামায়াত আমিরের বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে’ অস্ত্র জমা দেয়নি শামীম ওসমান ও গাজী পরিবার এবি পার্টির উপদেষ্টার পদ ছাড়লেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া নিয়ে বিতর্কে মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ আশুলিয়ায় শ্রমিক দলের সমাবেশে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৫ রূপগঞ্জে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা

সকল