এক বছরে দেশের ৭ এনজিও ঋণ বিতরণ করেছে ১৩০ কোটি টাকা

দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) ঋণ প্রদানের পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এক বছরে (২০২৩ সালে) দেশের সাতটি প্রধান এনজিও ঋণ বিতরণ করেছে এক লাখ ৩০ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। শুধু ঋণ বিতরণ করেই ‘ক্ষান্ত’ হয়নি এইসব এনজিও। তাদের ঋণ আদায়ের হারও ঈর্ষণীয় পর্যায়ে রয়েছে। সংস্থাগুলো ঋণ আদায়ের হার ৯৫ শতাংশেরও বেশি। এ সময় তারা ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে আদায় করেছে এক লাখ ২৪ হাজার ২৪ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ২০২৩ সালে দেশে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী সাতটি প্রধান বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) মোট এক লাখ ৩০ হাজার ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এর বিপরীতে একই বছরে মোট ঋণ আদায় করেছে এক লাখ ২৪ হাজার ২৪৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা (আদায়ের হার ৯৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ)।
অর্থ বিভাগ থেকে জানা গেছে, ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী সাতটি প্রধান এনজিওর মধ্যে রয়েছে- ব্র্যাক, আশা, ব্যুরো বাংলাদেশ, টিএমএসএস, শক্তি ফাউন্ডেশন, প্রশিকা ও কারিতাস। এর মধ্যে গত ২০২৩ সালের পঞ্জিকা বছরে (জনিুয়ারি-ডিসেম্বর পর্যন্ত) ব্র্যাক মোট ৬৮ হাজার ৬২১ কোটি চার লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এর বিপরীতে একই বছরে ঋণ আদায় করেছে ৬৪ হাজার ১৩২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আলোচ্য বছরে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ৮৮ লাখ ৮ হাজার ৩৩৯ জন।
গত পঞ্জিকা বছরে আশা মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৩১ হাজার ৬৬৫ কোটি চার লাখ টাকা। আলোচ্য বছরে নারী-পুরুষসহ মোট সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ৭০ লাখ ৯৭ হাজার ৭৩১ জন।
গত পঞ্জিকা বছরে ব্যুরো বাংলাদেশ মোট ঋণ বিতরণ করেছে ১১ হাজার ৩২০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে ৯ হাজার ৩৭৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আলোচ্য বছরে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ২৫ লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৯ জন।
একই বছরে টিএমএসএস মোট ঋণ বিতরণ করেছে আট হাজার ৮৫৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে আট হাজার ৯৬ কোটি তিন লাখ টাকা। আলোচ্য বছরে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ১৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭১ জন।
গত বছরে শক্তি ফাউন্ডেশন মোট ঋণ বিতরণ করেছে তিন হাজার ৮৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে তিন হাজার ৪০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আলোচ্য বছরে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা চার লাখ ৪২ হাজার ১০৩ জন।
২০২৩ সালে প্রশিকা মোট ঋণ বিতরণ করেছে দুই হাজার ২৭৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে দুই হাজার ১৬২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আলোচ্য বছরে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার ৪০৭ জন।
গত পঞ্জিকা বছরে কারিতাস মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৯৩৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে ৮৮০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আলোচ্য বছরে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ১১ হাজার ৫৩৬ জন।
এনজিওগুলো ঋণ আদায়ের সফলতা নিয়ে অনেক সমালোচনাও রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে কোনো কোনো এনজিও ঋণ আদায়ের জন্য জোরজবদস্তির আশ্রয় নিয়ে থাকে। একই সাথে তাদের ঋণের সুদের হারও অনেক বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ২৭ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
জানা গেছে, ক্ষুদ ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ২০০৬ সালে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি বছরের গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৮৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার সনদ দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে একই সময় পর্যন্ত ১৫৫টি প্রতিষ্ঠানের সনদ বাতিল করা হয়েছে। এমতাবস্থায় বর্তমানে দেশে ৭৩৭টি প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধাভোগী বা ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা প্রায় চার কোটির অধিক এবং এদের ৯০ শতাংশই নারী।