০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ২৭ সফর ১৪৪৬
`

দেশে ক্যান্সার রোগী দুই লাখের বেশি

নতুন গবেষণার ফল : বেশি আক্রান্ত ৫১-৬০ বছরের মানুষ
-

প্রতি লাখে ১১৪ জন ক্যান্সার আক্রান্ত হলেও এদের মধ্যে ৫১ থেকে ৬০ বছরের মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশের ক্যান্সার পরিস্থিতি জানতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রথমবারের মতো জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রির তথ্য প্রকাশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ এই গবেষণা পরিচালনা করে। এতে ২০২৩ সালে ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত গত এক বছরে পরিচালিত গবেষণা থেকে যে তথ্য পেয়েছে তা প্রকাশ করা হয়েছে।
এই গবেষণায় বিশেষভাবে তৈরি করা ক্যান্সার রেজিস্ট্রি সফটওয়ার ব্যবহার করা হয়েছে। যাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত পাওয়া গেছে তাদের চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন এবং নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা রিপোর্ট যাচাই করে ১৩৩ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত পান গবেষকরা। প্রতি লাখে ১১৪ জন ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন। শতকরা হিসাবে ০.০০১১৪ জন।

কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার পুমদী, শাহেদল, আড়াইবাড়িয়া ও গোবিন্দপুর ইউনিয়নের মোট এক লাখ ১৬ হাজার ৪৭৫ জনকে সাক্ষাৎকার নিয়ে ক্যান্সার রেজেস্ট্রির তথ্য নেয়া হয়। মোট ২৭ হাজার ৭৮৭টি বাড়িতে থাকা এক লাখ ১৬ হাজার ৪৭৫ জন মানুষের মধ্যে ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১৮ শতাংশ পুরুষ এবং ১৬.৫ শতাংশ নারীকে ক্যান্সারে আক্রান্ত পাওয়া গেছে। এই গবেষণা অনুসারে বর্তমান জনসংখ্যা হিসেবে দেশে ক্যান্সারের রোগী সংখ্যা দুই লাখের বেশি হবে।
গতকাল বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাললের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সেমিনারে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রধান গবেষক ড. মো: খালেকুজ্জামান জানান, এই গবেষণার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্যান্সার পরিস্থিতি নির্ণয় করা।

সেমিনারে জানানো হয়, বর্তমান বিশ্বে মৃত্যুর একটি কারণ হচ্ছে ক্যান্সার। গ্লোবোক্যানের রিপোর্টে ২০২২ সালে বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৬৭ হাজার ২৫৬ ও মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ ১৬ হাজার ৫৯৮ জন উল্লেখ করা হলেও জনংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রির অভাবে সঠিক পরিস্থিতি জানার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
পুরুষদের মধ্যে স্বরনালীর ক্যান্সারের হার সবচেয়ে বেশি ১৩.২ শতাংশ। আধিক্যের দিক থেকে শীর্ষ অন্যান্য ক্যান্সার হচ্ছে পাকস্থলি ১০.২ শতাংশ, ঠোঁট ও মুখগহ্বর ৮.৮ শতাংশ, ফুসফুস ৭.৪ শতাংশ এবং খাদ্যনালীর ক্যান্সারে ভুগছেন ৭.৪ শতাংশ মানুষ। নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের হার সর্বোচ্চ ৩৫.৪ শতাংশ। শীর্ষ অন্য ক্যান্সার আক্রান্তের মধ্যে মধ্যে রয়েছে জরায়ুমুখ ১২.৩ শতাংশ, ঠোঁট ও মুখগহ্বর ১০.৮ শতাংশ, থাইরয়েড ৭.৪ শতাংশ এবং গর্ভাশয়ের ক্যান্সারে ভুগছেন ৪.৬ শতাংশ। গবেষণায় আরো বলা হয়, ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ২৮.৬ শতাংশ উচ্চরক্তচাপ, ১১.৩ শতাংশ ডায়াবেটিস, ৮.৩ শতাংশ হার্টের রোগ এবং ৩ শতাংশ মানুষের কিডনি জটিলতা ও স্ট্রোক রয়েছে। ক্যান্সার আক্রান্ত ৭৩.৫ শতাংশ পুরুষের মধ্যে নিয়মিত ধূমপান করেন ৪১.২ শতাংশ এবং ধোয়াবিহীন তামাক সেবন করেন ৬১.৫ শতাংশ নারী এবং ৬৪.৭ শতাংশ পুরুষ ও ৭৫.৪ শতাংশ নারীর মধ্যে নিয়মিত পান-সুপারি খাওয়ার ইতিহাস রয়েছে।
ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ১৩ শতাংশ শুধু কেমোথেরাপি, ১১.৩ শতাংশ শুধু সার্জারি, ৯.৭ শতাংশ শুধু প্যালিয়েটিভ সেবা এবং ৫৯.৫ শতাংশ উল্লিখিতগুলোর একের বেশি সেবা গ্রহণ করেছেন। রেজিস্ট্রিকৃত ক্যান্সার রোগীর ৪.৫ শতাংশ কোনো প্রকার চিকিৎসেবা গ্রহণ করেননি।

 


আরো সংবাদ



premium cement