২২ আগস্ট ২০২৪, ৭ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ সফর ১৪৪৬
`

যুদ্ধবিরতি আলোচনা থেকে সরেনি হামাস

-


গাজায় মারাত্মক হামলার পরও ইসরাইলের সাথে যুদ্ধবিরতি আলোচনা থেকে সরে আসেনি হামাস। হামাসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। এদিকে নিরাপদ হিসেবে ঘোষিত একটি এলাকায় বহু ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর গাজা উপত্যকার দক্ষিণ ও মধ্য অংশে নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। গতকাল সোমবার এই হামলা চালায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী। রয়টার্স ও আলজাজিরা।
ইসরাইলের সাথে যুদ্ধবিরতির আলোচনা আর চালাতে চায় না জানিয়েছিল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সংগঠনটির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনা থেকে তাদের প্রতিনিধিদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে, কারণ ইসরাইল যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেও গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে এবং যুদ্ধবিরতির আলোচনায় তাদের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। তবে পরে হামাসের আরেক কর্মকর্তারা বিবৃতিতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়।
হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, হামাসের রাজনৈতিক শাখার নেতা ইসমাইল হানিয়া আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। আলোচনা বন্ধ করার কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, দখলদার বাহিনী আলোচনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, এ ছাড়া আলোচনায় বিলম্ব ও বাধা অব্যাহত নীতি বজায় রেখেছে এবং একই সাথে নিরস্ত্র বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে টাইমস অব ইসরাইল জানায়, হামাস আলোচনা থেকে সরে যাচ্ছে না। হামাসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সও একই তথ্য জানিয়েছে। হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সদস্য ইজ্জাত এল-রেশিকের বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে আরব মধ্যস্থতাকারীদের এবং যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টাকে লাইনচ্যুত করার চেষ্টা করার অভিযোগও করেন।
হামাসের সামরিক শাখা আল কাসসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দেইফকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালানোর দাবি করেছে ইসরাইল। কিন্তু হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সদস্য ইজ্জাত এল-রেশিক বলেছেন, গাজায় হামলা বাড়িয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আরব মধ্যস্থতাকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে লাইনচ্যুত করার চেষ্টা করছে ইসরাইল।

সাম্প্রতিক দিনগুলিতে যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং গাজায় ইসরাইলি আটকদের ফিরিয়ে আনতে একটি চুক্তি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু শনিবার দোহা এবং কায়রোতে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় থাকা দু’টি মিসরীয় নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, তিন দিন পর আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে।
রোববার এক বিবৃতিতে ইসরাইলি বাহিনী দাবি করেছে, হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ দেইফকে লক্ষ্য করে তারা হামলাগুলো চালিয়েছে। তবে তিনি নিহত হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা। দেইফ নিহত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা । হামাস জানিয়েছে, তাদের নেতাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর এ দাবি মিথ্যা। হামলার বৈধতা দিতে এ কথা বলছে ইসরাইলি বাহিনী।
গতকাল সোমবার গাজা উপত্যকার দক্ষিণ ও মধ্য অংশে নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। শনিবারের এক হামলায় নিরাপদ হিসেবে ঘোষিত একটি এলাকায় বহু ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর হামাসের ওপর চাপ বাড়াতে এই হামলা চালানো হয়। শনিবার ইসরাইলের ওই হামলায় মাওয়াসির ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। মাওয়াসির ৩০ বছর বয়সী বিক্রেতা আয়াহ মোহাম্মদ বলেন, এমন দৃশ্য আমার জীবনে কখনো দেখিনি। কোথায় যাবো, কেউ জানে না।
মাওয়াসি খান ইউনুসের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। এখানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। ইসরাইল ওই এলাকায় হামাসের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফকে টার্গেট করেছিল বলে দাবি করেছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবারের হামলায় অন্তত ৯০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে।
দক্ষিণে রাফাহতে নতুন করে লড়াই শুরু হয়েছে। বাসিন্দারা জানান, ইসরাইলি বাহিনী কয়েকটি ঘর ধ্বংস করেছে এবং পূর্বাঞ্চল থেকে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মধ্যাঞ্চলীয় গাজায় আল-বুরেইজ ও আল-মাঘাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলের বোমাবর্ষণে পাঁচজন নিহত হয়েছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজায় বহু সামরিক টার্গেট ধ্বংস এবং অনেক যোদ্ধা নিহত করেছে। আল-কুদস ব্রিগেড জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা রাফাহতে তীব্র লড়াইয়ে লিপ্ত। শনিবারের হামলা গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির আলোচনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। হামাসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলা সত্ত্বেও তারা আলোচনায় রয়েছে।

স্কুলে হামলায় ১৫ নারী-শিশু নিহত
এএফপি জানায়, গাজার একটি স্কুলে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। হামলায় ১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ওই স্কুলটিতে ইসরাইলি হামলায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। খবরে বলা হয়েছে, গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, নুসেইরাত ক্যাম্পে জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত আবু আরবান সাইটে এই হামলা ঘটে। এটি গত আট দিনে স্কুল-আশ্রয় কেন্দ্রে ইসরাইলের পঞ্চম হামলা। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, আবু আরবান স্কুলে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত লোক আশ্রয় নিয়েছিল। হামলায় নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তাদের বিমানবাহিনী নুসেইরাতের ইউএনআরডব্লিউএ-এর আবু আরবান স্কুল ভবনের এলাকায় সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তাদের মতে, ভবনটি ইসরাইলি সৈন্যদের ওপর আক্রমণের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। এএফপিটিভির ছবিতে দেখা গেছে, তিন তলা কমপ্লেক্সটির রেলিংয়ের ওপরে কাপড় ও বিছানা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এবং জাতিসঙ্ঘের লোগো সংবলিত একটি দেয়ালও উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভেতরের ঘরগুলোও গোলাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হামাসকে অব্যাহত সমর্থনের আশ্বাস ইরানি প্রেসিডেন্টের
ইরানের সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজ জানায়, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরাইল যে বর্বর গণহত্যা চালাচ্ছে তার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের পলিট ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়ার সাথে ফোনালাপের সময় এ ঘোষণা দেন তিনি। চলমান কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ইরান ফিলিস্তিনিদের একা ফেলে যাবে না বলেও সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন মাসুদ পেজেশকিয়ান।
এ সময় ইসমাইল হানিয়া ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় মাসুদ পেজেশকিয়ানকে আবারো অভিনন্দন জানান। এরপর তিনি গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের চলমান ঘৃণ্য গণহত্যা ও আগ্রাসনের কথা উল্লেখ করেন। আল-মাওয়াসি শরণার্থী শিবিরের গণহত্যার কথা তিনি বিশেষভাবে তুলে ধরেন। গাজার খান ইউনুস শহরের আল-মাওয়াসি শরণার্থী শিবিরে সম্প্রতি ইসরাইল যে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছে, তার তীব্র নিন্দা জানান মাসুদ পেজেশকিয়ান। ফোনালাপে পেজেশকিয়ান বলেন, ভয়াবহ এই অপরাধযজ্ঞ প্রমাণ করে যে, ইসরাইল গণহত্যা চালিয়ে যেতে চায় এবং তারা ফিলিস্তিনিদের মনোবল ভেঙে দিতে চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা তা করতে পারবে না। খান ইউনুসে গণহত্যার নিন্দায় জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আনাদোলু এজেন্সি জানায়, গাজার খান ইউনুসের আল-মাওয়াসি এলাকাকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি ‘মানবিক অঞ্চল’ মনোনীত করা হয়েছিল। তবে সেখানেই শনিবার বিমান হামলার মাধ্যমে গণহত্যা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। যেখানে ৯০ জন নিহত ও তিন শতাধিক আহত হয়েছেন। খান ইউনুসের এই হতাহতের ঘটনায় রোববার ইসরাইলি বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

প্রতিবাদ জানাতে সারা বিশ্বকে আহ্বান ব্রাজিল প্রেসিডেন্টের
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা বলেছেন, ফিলিস্তিন জনগণ যে সীমাহীন দুর্ভোগ ও হত্যাযজ্ঞের মুখে রয়েছে সে সময় বিশ্ববাসীর নীরব থাকা উচিত নয়। তিনি বলে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইল সম্প্রতি যে বর্বর গণহত্যা চালিয়েছে আমি তার নিন্দা জানাচ্ছি। গতকাল সোমবার সকালে প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভার কার্যালয় থেকে এ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
লুলা ডি সিলভা বলেন, সম্প্রতি ইসরাইলের সামরিক বাহিনী গাজার খান ইউনুস শহরের আল মাওয়াসি শরণার্থী শিবিরে যে ভয়াবহ বোমা হামলার মাধ্যমে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিবৃতিতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলেন, গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলের আগ্রাসনে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি জীবন দিয়েছেন। তবে এটা খুবই ভয়াবহ বিষয়, ইসরাইল সম্মিলিতভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের রক্ত ঝরাচ্ছে। ডি সিলভা বলেন, গাজার বহু এলাকাকে নিরাপদ অঞ্চল ঘোষণা দিয়ে সেইসব এলাকায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইহুদিবাদী সরকার। গণতান্ত্রিক বিশ্বের নেতা হিসেবে আমরা এই সীমাহীন হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে চুপ থাকতে পারি না। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে লুলা ডি সিলভা সুস্পষ্ট করে বলেছিলেন, গাজায় ইসরাইল সরকার যা করছে তা কোনো যুদ্ধ নয়, এটা সরাসরি গণহত্যা। এ ছাড়া চলতি বছর ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের ৩৭তম শিক্ষক সম্মেলনে ডি সিলভা গাজার ঘটনাবলিকে ইসরাইলের গণহত্যা বলে উল্লেখ করেছিলেন। উল্লেখ্য, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ইসরাইল থেকে তার দেশের রাষ্ট্রদূতও প্রত্যাহার করেছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
গাজীপুরে বিভিন্ন দাবিতে ৭টি কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ-অসন্তোষ ভারত বাঁধ খুলে বাংলাদেশের মানুষকে পানিতে ডুবিয়ে মারতে চায় নগদে প্রশাসক নিয়োগ, আজ দায়িত্ব নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ৩০ আগস্টের আগেই গুম বিষয়ে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করবে বাংলাদেশ শেখ হাসিনাসহ সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের লাল পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত ফেনীতে বন্যা : বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা বিএসএফের, বাধা বিজিবির ভারতে প্রস্তাবিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে যে বিতর্ক বন্যায় ভাসছে ৮ জেলা, বিস্তৃত হতে পারে আরো দেশ পুনর্গঠনে জাপান ও যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন ড. ইউনূস

সকল