২৩ আগস্ট ২০২৪, ৮ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ সফর ১৪৪৬
`
দুদকের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ৫ আগস্ট

ন্যায়বিচার পাচ্ছি না, এটার ব্যাকগ্রাউন্ডে কী আছে দেশের মানুষ বোঝে : ড. ইউনূস

-


শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থআত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পিছিয়ে আগামী ৫ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেনের আদালত ড. ইউনূসের পক্ষে সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
দুদক মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য থাকায় শুনানিতে অংশ নিতে গতকাল বেলা ১১টায় আদালতে আসেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আদালতের কার্যক্রম শেষে দুপুর ১২টার দিকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন তিনি কি ন্যায়বিচার পাচ্ছেন। জবাবে ড. ইউনূস বলেন, না না পাচ্ছি না। কেন বিচার পাচ্ছেন না, কেন মনে করছেন বিচারটা পাচ্ছেন না? এই প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা দেখছি যে পাচ্ছি না। এটার ব্যাকগ্রাউন্ডে কি আছে। কিভাবে আছে দেশের মানুষ সবাই বোঝে। তারা বুঝে নেবেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, লোহার খাঁচা মানবতার প্রতি অপমান। কেন পশুর মতো একজন মানুষকে খাঁচার ভেতর ভরে রাখবে? এটা সরিয়ে ফেলা উচিত।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে হওয়া মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির কোনো ভিত্তি নেই। তিনি কারো না কারো প্রতিহিংসার শিকার।
ড. ইউনূস বলেন, তারিখ নিয়ে যে রকম ধস্তাধস্তি করতে হলো, মনটা খারাপ হয়ে গেল। তবে একটা ভালো লাগল যে আজকে ওই খাঁচার ভেতরে আমাদেরকে ঢোকায়নি। খাঁচার বিষয়টি আমি বারবার বলতে থাকব, কারণ এটা জাতির প্রতি মস্ত বড় অপমান। এই অপমান আমাদের সহ্য করা উচিত না। এর ব্যবহার থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই।

এদিন আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। সাথে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম মিজানুর রহমান। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
শুনানিতে ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন আদালতে বলেন, এ মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে আবেদনের ওপর আগামী ২১ জুলাই আদেশের জন্য রয়েছে। এ অবস্থায় সাক্ষ্যগ্রহণ করা ঠিক হবে না।
তবে আদালত বলেন, কোনো স্থগিতাদেশ নেই। আমরা সাক্ষী নেই।

জবাবে ব্যারিস্টার মামুন বলেন, আমি আদালত অবমাননা করতে পারব না। কারণ এ মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
এরপর আদালত সাত দিন সময় দিয়ে আগামী ২৩ জুলাই সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন।
তখন ব্যারিস্টার মামুন বলেন, এটা তো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল না। অন্য মামলায় আপনি এক থেকে দেড় মাস সময় দেন। আর আমাদের দিচ্ছেন এক সপ্তাহ। তিনি আরো বলেন, বলা হচ্ছে ন্যায়বিচার করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখানে ন্যায়বিচার পাচ্ছি না। তা হলে এ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন। এরপর আদালত আগামী ৫ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণের নতুন তারিখ ধার্য করে দেন।
এর আগে গত ১১ জুলাই শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে ড. ইউনূসের আবেদনের শুনানি ২১ জুলাই করার দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার মামুন হাইকোর্টে ওই আবেদন করেন। তিনি জানান, ১৪ জনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, তা চ্যালেঞ্জ করে এবং সম্পূর্ণ অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। এই আবেদনে আইনগত বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

এর আগে গত ১২ জুন ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার আদেশ দেন আদালত। একই সাথে আগামী ১৫ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।
আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন- ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। সাথে ছিলেন ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ ও অ্যাডভোকেট এস এম মিজানুর রহমান। অন্য দিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা এই মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আছাদুজ্জামানের আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। গত ২৯ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিশন বৈঠকে ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়।
চার্জশিটভুক্ত ১৪ আসামি হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো: শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো: কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দফতর সম্পাদক কামরুল হাসান ও প্রতিনিধি মো: মাইনুল ইসলাম।
দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদি হয়ে গত বছরের ৩০ মে মামলা দায়ের করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ।

 


আরো সংবাদ



premium cement