২৩ আগস্ট ২০২৪, ৮ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ সফর ১৪৪৬
`

মিয়ানমারে সঙ্ঘাত যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ছে

-

মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও সামরিক জান্তার মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। যুদ্ধে ভারী অস্ত্র, মর্টার শেল ও গোলার বিকট শব্দে টেকনাফ পৌরসভা, শাহপরীর দ্বীপসহ আশপাশের সীমান্ত এলাকা কেঁপে উঠছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ অবস্থায় টেকনাফে যেকোনো অনুপ্রবেশ রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড। গত রোববার চারটি নৌকা বোঝাই ৭০ জন মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যকে ফিরিয়ে দিয়েছে সীমান্তরী বাহিনী বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
এর মধ্যে রোববার সকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদী জলসীমা দিয়ে দু’টি ট্রলারে করে বিজিপির অন্তত ৩০ জন্য সদস্য অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। কিন্তু নাফ নদীতে দায়িত্বরত কোস্টগার্ড সদস্য ট্রলার দু’টিকে প্রবেশ করতে দেয়নি।
প্রত্যদর্শী শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের লোকজন জানিয়েছেন, কোস্টগার্ড সদস্যরা অনুপ্রবেশকারী দু’টি ট্রলারকে ফিরে যেতে বাধ্য করে। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টার পর অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারী বিজিপি সদস্যরা নাফনদী হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
অপর দিকে রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে টেকনাফের জালিয়াপাড়ার ট্রানজিট ঘাটসংলগ্ন নাফ নদীর মোহনা হয়ে দু’টি ট্রলারে আরো ৪০ জন বিজিপি সদস্য অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। কিন্তু তাদেরকেও ফিরে যেতে বাধ্য করেছে কোস্টগার্ড সদস্যরা।অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় সীমান্ত নিকটবর্তী লোকজনের মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, নাফ নদীর মাঝামাঝি ট্রলারে অবস্থান করে বিজিপি সদস্যরা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। কিন্তু কোস্টগার্ডের পক্ষে থেকে ফিরে যেতে আহ্বান করা হচ্ছে। যদিও ওইসময় নাফ নদীর ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি নন বিজিবি ও কোস্টগার্ডের দায়িত্বশীলরা।

রাখাইনের ৮০ ভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে বলে মিয়ানমারের বিভিন্ন সূত্র এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। বর্তমানে টেকনাফের নাফ নদীর ওপারে রাখাইনের সীমান্ত শহর মংডু দখলে দুপুরে মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। গত কয়েক দিন থেকে ওপারে থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে এপারের বিভিন্ন এলাকায়। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বিমান হামলাও চালাচ্ছে। আগের চেয়ে এবার বিস্ফোরণের শব্দ বেশি বিকট বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এপার থেকে ওপারের আগুনের কুণ্ডুলী দেখা যাচ্ছে। শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত থেকে বিপরীত পাশে মিয়ানমারের মংডু শহরে ও গ্রামে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ও ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম জানান, ক’দিন বন্ধ থাকার পর আবারো মিয়ানমার অভ্যন্তর থেকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেলো। রাতের বেলায় সীমান্তের অনেকে ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সীমান্ত লাগোয়া শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট এলাকাসহ জালিয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া ও আচারবনিয়ার আশপাশের বসতঘর ও স্থাপনা কেঁপে ওঠে। সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ওপার থেকে থেমে থেমে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। এতে সীমান্তের পাশে বসবাসকারী স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, নাফ নদীর একপাশে টেকনাফ বিপরীত দিকে মংডু টাউনশিপ। মধ্যখানে মাত্র চার কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদী দুই দেশকে বিভক্ত করে রেখেছে। মিয়ানমারে মংডু টাউনশিপের আশপাশের গ্রাম পেরাংপুরু, কাদিরবিল, হারিপাড়া, মংনিপাড়া, নলবইন্ন্যা, সুদাপাড়া, সিকদারপাড়া, নুরুল্লাপাড়া, হাস্যুরাতা ও ফাতংছা এলাকায় তীব্র লড়াই চলছে বলে জানা যায়। টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো: মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, যেকোনো পরিস্থিতিতে কেউ যেন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement