গাজায় বর্বরতায় দায়ীদের জবাবদিহি করতে হবে : এরদোগান
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১২ জুলাই ২০২৪, ০০:০৫
গাজায় বর্বরতার জন্য দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। তিনি বলেছেন, ১৯৯৫ সালের স্রেব্রেনিসা গণহত্যার মতোই গাজায় বর্বরতার জন্য যারা দায়ী, অবশ্যই তাদের আন্তর্জাতিক আইনের সামনে জবাবদিহি করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় স্রেব্রেনিকা গণহত্যা দিবস স্মরণ অনুষ্ঠানে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তুর্কি প্রেসিডেন্ট এ হুঁশিয়ারি দেন। আনাদোলু এজেন্সি। অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং গণহত্যার অপরাধীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য তুর্কি সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে উল্লেখ করে এরদোগান বলেন, আজ অধিকৃত গাজা এবং ফিলিস্তিনি অঞ্চলের বাসিন্দারা একইরকম নৃশংসতার শিকার হচ্ছে, যেমনটা স্রেব্রেনিকায় সংঘটিত হয়েছিল ২৯ বছর আগে। তিনি এ সময় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোরাল দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, স্রেব্রেনিসাতে ২৯ বছর আগে যেমন ১৬ হাজার শিশুসহ ৪০ হাজার নিরপরাধ লোককে হত্যা করা হয়েছিল; ঠিক তেমনি গাজাতেও নারী-শিশুসহ হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হচ্ছে, আর গোটা বিশ্ব তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। এ সময় গোটা বিশ্ব এখন মানবতাহীন এবং আন্তরিকতাশূন্য বলেও মন্তব্য করেন এরদোগান।
এর আগে গত মে মাসে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে ১১ জুলাইকে স্রেব্রেনিসা গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেন এরদোগান। সেই বিষয়টা উল্লেখ করে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা এই সিদ্ধান্তের প্রস্তুতি থেকে এটি গ্রহণ পর্যন্ত সব পর্যায়ে অবদান রেখেছেন। বিশ্বের কোথাও যেন স্রেব্রেনিসা গণহত্যার মতো অন্ধকারময় ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
যারা এখনো বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় গণহত্যাকে অস্বীকার করে এবং আন্তর্জাতিক আদালতের রায় সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীদের প্রশংসা করে, তাদের নিন্দা জানিয়ে এরদোগান বলেন, সেই যুদ্ধের পর বাড়িতে ফিরে আসা লোকদের ওপর হামলা ও হয়রানির বিষয়গুলো সরকার অনুসরণ করছে। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় ঘটনার পর সবগুলো সেক্টরকে একত্রিত করে একটি অভ্যন্তরীণ ঐকমত্যের চেষ্টা চালায় তুর্কি সরকার। বিষয়টিকে একটি আন্তরিক প্রচেষ্টা উল্লেখ করে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, সংঘর্ষ ও উত্তেজনা থেকে কেউই লাভবান হয় না।
ইসরাইলি বাহিনীর তুর্কি নাগরিকদের শাস্তির উদ্যোগ
এবার আলোচনায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীতে তুর্কি নাগরিক থাকার বিষয়টি। জানা গেছে, যেসব তুর্কি নাগরিক ইসরাইলি বর্বর বাহিনীতে কাজ করছেন এবং যারা গাজায় বর্বর আগ্রাসনে জড়িত রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তুরস্কের জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে।
টাইমস অব ইসরাইল জানায়, টার্কিশ ফ্রি কজ পার্টি কুর্দি প্রভাবিত ও ইসলামপন্থী দলটির নেতা সার্কান রামানলি বুধবার তুর্কি সংসদে বিলটি উত্থাপনের পর বলেছেন, তুরস্কের যেসব নাগরিক ইসরাইলে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস করেন এবং যারা গাজায় বর্বর আগ্রাসনে যুক্ত, তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, তুর্কি-ইসরাইলি দ্বৈত নাগরিকদের সম্পদ জব্দ করার দাবিও জানানো হয়েছে ওই বিলে। রামানলি বলেন, আমরা মনে করি, তুর্কি-ইসরাইলি দ্বৈত নাগরিক যারা গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত, তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া উচিত। এ জন্য আমরা সংসদে এই বিল উত্থাপন করেছি। তুরস্কের এ নেতা বলেন, আন্তর্জাতিক চুক্তি ও কনভেনশন অনুসারে আমাদের অবশ্যই সক্রিয়ভাবে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। কিন্তু তুরস্কের আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা কিসের জন্য দীর্ঘ ৯ মাস অপেক্ষা করলাম? সেইসাথে তুর্কি-ইসরাইলি দ্বৈত নাগরিকদের কাছ থেকে জব্দ করা সম্পদ অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে বিতরণ করে দিতে হবে বলেও দাবি করেন রামানলি। বিলটি আইনে পরিণত হলে তা ইসরাইলে কর্মরত কতজন তুর্কি সেনার ওপর প্রভাব ফেলবে, তা পরিষ্কার নয়। কারণ ইসরাইলের সামরিক বাহিনীতে কাজ করা এ ধরনের দ্বৈত নাগরিকদের সংখ্যা স্পষ্ট নয়। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকাও দেশটির দ্বৈত নাগরিকদের বিরুদ্ধে একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেছে, যারা ইসরাইলের সামরিক বাহিনীতে কাজ করছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা বলেছে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীতে কাজ করা নাগরিকরা দেশে ফিরলে তাদের আটক করা হবে। তুরস্কের পার্লামেন্টে উত্থাপিত তুর্কি-ইসরাইলি দ্বৈত নাগরিকদের সম্পর্কিত বিলটির ওপর শিগগিরই ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।