বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে রাজধানীতে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৯
রাজধানীতে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে। ১০ থেকে ১৫টি করে কুকুরের একেকটি দল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অলিগলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, শিশু, পথচারীসহ সাধারণ মানুষকে তাড়িয়ে কামড়ানোর চেষ্টা করছে এসব কুকুর। দীর্ঘদিন ধরে সরকারিভাবে কুকুরের বন্ধ্যত্বকরণ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া আইনের কারণেও দুই সিটি করপোরেশন কুকুর অপসারণের কাজ করতে পারছে না। এ কারণে দিনকে দিন বেড়েই চলছে কুকুরের উপদ্রব।
গত ২৮ এপ্রিল রাজধানীর ডেমরা এলাকায় কুকুরের আক্রমণে মারাত্মক আহত হয় মাহিনুর নামে এক শিশু। বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল পাঁচ বছরের মাহিনুর। হঠাৎ একটি বেওয়ারিশ কুকুর তার ওপর আক্রমণ করে। পরে আরো তিনটি কুকুর শিশুটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শিশুটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন কুকুরগুলো তাড়ানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে বাঁশ দিয়ে আঘাত করলে কুকুরগুলো পালিয়ে যায়। ততক্ষণে কুকুরের কামড়ে-আঁচড়ে শিশুটির মুখ-মাথা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। পরে গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পাগলা কুকুরের কামড়ে কয়েকজন আহত হওয়ায় গত ১ জুলাই গুলশানের শহীদ ডা: ফজলে রাব্বী পার্ক বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। পরে পাগলা কুকুরগুলো সরে যাওয়ায় গত ৭ জুলাই পার্ক আবার উন্মুক্ত করে দেয় ডিএনসিসি।
আগে একসময় কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেলে অভিযান চালিয়ে কুকুর ধরে নিয়ে যেত সিটি করপোরেশন। কিন্তু ২০১২ সালে উচ্চ আদালত নির্বিচার কুকুর নিধনকে অমানবিক উল্লেখ করে তা বন্ধের নির্দেশ দেয়। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কুকুরকে বন্ধ্যা (প্রজননক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া) করে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার ঘোষণা দেয় সরকার। এজন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত একটি প্রকল্প রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই প্রাণী কল্যাণ আইন-২০১৯ করা হয়। এ আইনে কুকুর নিধন বা বিনাকারণে অপসারণ নিষিদ্ধ করা হয়। তবে বন্ধ্যত্বকরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। তবে তা খুবই অল্প কয়েকটি এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে। করোনার সময়ে এ কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর স্বাভাবিক সময় এলেও আর বন্ধ্যত্বকরণ কার্যক্রম সেভাবে এগোয়নি। ২০২০ সালে আবারো কুকুর অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। কিন্তু ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করে ডিএসসিসির বেওয়ারিশ কুকুর স্থানান্তর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। এ সুযোগে রাজধানীজুড়ে বেড়েছে কুকুরের উৎপাত ও আক্রমণের শিকার হয়ে আহতের সংখ্যা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ ২০২৩ সালে সারা দেশে ৬ লাখের বেশি মানুষ কুকুরের কামড় খেয়ে জলাতঙ্ক রোগের টিকা নিয়েছে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫ লাখের সামান্য কম। এর মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। এই দুই বছরে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৮৬ জন। শুধু তাই নয়, ২০১২-২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশে কুকুরের কামড়ে মারা গেছে ৭৭১ জন। তবে ২০১০ সালের আগে দেশে প্রতি বছর জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে আড়াই হাজার মানুষ মারা যেত। জলাতঙ্ক রোগ নির্মূলে সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগের ফলে মৃত্যুর সংখ্যা কমে এসেছে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা কমেনি। ২০২০ সালে জলাতঙ্কের টিকা নিয়েছিলেন এক লাখ ৫২ হাজার ১৪ জন, ২০২১ সালে দুই লাখ ৭৮ হাজার।
দেশে সংক্রামক রোগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। এই হাসপাতালে কুকুর-বিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীর আক্রমণে আহত হয়ে ২০২৩ সালে চিকিৎসা নেয় ৯৪ হাজার ৩৮০ জন। ২০২২ সালে চিকিৎসা নেয়া মানুষের সংখ্যা ছিল ৮৯ হাজার ৯২৮ জন। তবে এর মধ্যে সিংহভাগই কুকুরের আক্রমণে আহত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিডিসি ও বিভিন্ন প্রাণিকল্যাণ সংগঠনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রায় ১৭ লাখ কুকুর রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আছে ৫০ হাজারের বেশি ও উত্তর সিটিতে আছে ৪০ হাজার কুকুর।
বাসাবো এলাকার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই কুকুরের কামড়ে কেউ না কেউ আহত হচ্ছেন। কয়েকটি কুকুর পাগল হয়ে গেছে মানুষ দেখলেই কামড়ে দেয়। ফজরের নামাজ আদায় আর সকালে হাঁটাহাঁটি করতে বের হলেই কুকুরের আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে।
মীরহাজিরবাগ এলাকার বাসিন্দা শামসুর রহমান বলেন, এলাকায় কুকুরের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এরা দলবেঁধে চলাচল করে। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। কুকুরের কারণে অনেকে রাতে দেরি করে বাড়ি ফেরার পথে আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। অনেক স্থানে নারী ও শিশুরা কুকুরের ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন।
ডিএসসিসির অঞ্চল-৪ এর ভেটেরিনারি কর্মকর্তা শরন কুমার সাহা নয়া দিগন্তকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিডিসির অধীন ডিএসসিসিসহ সারা দেশে কুকুর বন্ধ্যত্বকরণ করা হয়। কিন্তু গত অর্থবছর থেকেই এটি বন্ধ রয়েছে। আমরা জেনেছি আর্থিক সঙ্কটের কারণে এটি বন্ধ রয়েছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত।
তিনি বলেন, কোনো এলাকায় কুকুরের উপদ্রব বাড়লে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তখন আমরা অসুস্থ কুকুরের চিকিৎসা বা অন্যত্র অপসারণের ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা