০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীরা কত টাকা ফেরত পাচ্ছেন?

সরকার নির্ধারিত খরচ ৭৯ হাজার; আদায়ের অভিযোগ ৫ লাখের ওপরে
-


মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সবকিছু সম্পন্ন হওয়ার পরও যে সব কর্মী উড়োজাহাজে উঠতে পারেননি বা বিমানবন্দর থেকেই ফিরে এসেছেন, শেষ পর্যন্ত তাদের টাকাগুলো ফেরত দেয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী গত সপ্তাহে নির্দেশনা দিয়েছেন। এ সময় তিনি আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে কর্মীদের টাকা ফেরত দেয়া না হলে পরে জড়িত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, কর্মীদের বিদেশ যেতে জমা দেয়া পুরো টাকা ফেরত দেয়া হবে নাকি সরকার নির্ধারিত প্রায় ৭৯ হাজার টাকাই দেয়া হবে? কারণ এসব কর্মীদেরকে এজেন্সি মালিকদের পক্ষ থেকে ৭৯ হাজার টাকার বৈধ মানি রিসিট দেয়া হয়েছে। তাহলে বাকি জমা দেয়া টাকার কী হবে?
অভিযোগ ও জনশ্রুতি রয়েছে, মালয়েশিয়াগামী প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকেই ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক, প্রতিনিধি ও তাদের বিদেশ পাঠানোর আশ্বাস দেয়া মধ্যস্বত্বভোগীরা (দালাল) সাড়ে ৪ লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকার ওপরে আদায় করেই ভিসা টিকিটসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। এখন দেখার বিষয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতি কর্মীকে এজেন্সির পক্ষ থেকে কত টাকা করে ফেরত দেয়া হয়?

গতকাল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের কেউই পরিচয় প্রকাশ করে অভিবাসন ব্যয়ের মধ্যে আসলে কত টাকা কর্মীকে ফেরত দেয়া হচ্ছে বা হবে সে ব্যাপারে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে দু’জন মালিক নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠিয়েছে ঢাকার নামকরা ১০০ রিক্রুটিং লাইসেন্স। এসব মালিক কর্মীর কাছ থেকে সরাসরি টাকা রিসিভ করেনি। করেছে গ্রামের দালাল বা রিক্রুটিং এজেন্সির এজেন্টরা। এজেন্টরা প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে ৫-৬ লাখ টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ আছে। এমনকি এজেন্সিতে এসে কর্মীরাও এ নিয়ে স্টেটম্যান দিয়ে গেছেন। কিন্তু এজেন্সির মালিকরা একজন কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর জন্য সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯০০ টাকাই আদায় করেছে এবং এর বিনিময়ে কর্মীকে স্লিপ (ক্যাশ মেমো) দিয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে ওই মালিকরা বলেন, আমরা কর্মীর কাছ থেকে বৈধভাবে বিদেশে পাঠানো বাবদ ৭৮ হাজার ৯০০ টাকা নিয়েছি। এখন ফেরত দিলে তো ওই টাকাই ফেরত দেবো। এর বেশি টাকা দেয়ার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। এটা আইনেও নেই।

তবে নয়াপল্টনের একটি এজেন্সির মালিক আক্ষেপ করে বলেন, এই ১৭ হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়ায় না যেতে পারার কারণে আমাদের শুধু সরকারের নয়, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অনেক অবহেলা রয়েছে। তারা একটু সচেতন হলেই এসব কর্মীর সমস্যা হতো না। এটা যেমন দেশের ক্ষতি হয়েছে তেমনি এজেন্সি মালিক ও কর্মীদেরও বিরাট ক্ষতি হয়ে গেলো। এ সময় ওই মালিকের একজন প্রতিনিধি বলার চেষ্টা করেন, ‘উভয় পক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক কর্মীকে শুনেছি ১ লাখ টাকা করে ফেরত দেয়া হতে পারে বলে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
গতকাল রোববার রাত সোয়া ৮টার দিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কর্মসংস্থান অণুবিভাগ) ও মালয়েশিয়ায় কর্মী না যেতে পারার বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান নূর মো: মাহবুবুল হকের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি।
তবে মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত একজন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক অভিবাসন ব্যয় প্রসঙ্গে বলেন, আমরা মালয়েশিয়ায় লোক পাঠিয়ে কিন্তু খুব একটা লাভ করতে পারিনি। লাভের টাকা দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো নিয়ে গেছে। মূলত মালয়েশিয়ায় যেসব শ্রমিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যেতে পারেনি তার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে বিমানের ৪৫ হাজার টাকার টিকিট সোয়া লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা হয়ে যাওয়া। এত টাকা হওয়ার কারণে অনেক কর্মী যেমন আগ্রহ দেখাননি, তেমনি অনেক মালিকও এত টাকা বিমান ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিতে চায়নি। এরজন্য দায়ী এয়ারলাইন্স! কিন্তু এয়ারলাইন্সগুলোর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হলো তা আমরা জানতে পারলাম না? প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মহোদয় আমাদের টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলেছেন, আমরা লোকসানে থাকলেও টাকা ফেরত দিয়ে দেবো। আবার কোনো কর্মী যদি স্বেচ্ছায় অন্য কোনো দেশে যেতে চায় সেই দেশে পাঠিয়ে দেবো। আমরা কর্মীকে কোনোভাবে ঠকাব না!

এর আগে গত সপ্তাহে (বৃহস্পতিবার) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো: শফিকুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের মালয়েশিয়ার কর্মীদের কী হবে এ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, যারা মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি তাদের (কর্মী) টাকা আগামী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। আমরা এ নিয়ে বুধবার বায়রা নেতাদের সাথে বসেছিলাম। তারা আমাদের সাথে টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন, এবং স্বীকার করেছেন, যেসব কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি, তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে। তবে এরজন্য তারা ১৫ দিন সময় চেয়েছে। আমরা তাদের বলেছি, আগামী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে টাকা ফেরত দিয়ে দিতে। এই সময়ের মধ্যে যারা টাকা দিতে পারবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখন ১৫ দিনে কতজন টাকা দেন, সেটি আগে দেখি।
তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে যারা মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি তারা যেন টাকাটা ফেরত পায়। কতজন যেতে পারেনি সেটা বড় কথা নয়, এখন টাকা ফেরত পাওয়াটা বড় বিষয়। বায়রা ও রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা বুঝতে পারছে এবার তারা ছাড় পাবে না। তবে টাকা পেতে কর্মীদের রিক্রুটিং এজেন্সিকে প্রমাণ দিতে হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেয়া সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কমবেশি সবাই দায়ী। ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির দায় আছে। প্রায় ২ হাজার ২৫ জন অভিযোগ করেছেন। ১৭ হাজার ৭৭৭ কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেনি। ৫ লাখ ৩২ হাজার ১৬২ কোটার মধ্যে ৪ লাখ ৭৬ হাজার চলে গেছে। এর মধ্যে ৪ লাখ ৯৩ জন বিএমইটির ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে কুয়ালালামপুরের সাথে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি, বাজার আবার খুলবে। তখন যেতে না পারাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement