০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২ মহররম ১৪৪৬
`
বেড়ায় যমুনার দুই পাড়ে ভাঙন

তলিয়ে গেছে শত শত বিঘা জমি

-


উজানের ঢলে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বেড়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলের শতাধিক বিঘা জমির বাদাম, তিল, শাক-সবজিসহ উঠতি ফসল তলিয়ে গেছে। কষ্টে ফলানো ফসল ডুবে যাওয়ায় চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাদাম ও তিলের। এতে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন বাদাম ও তিলচাষিরা। এদিকে যমুনার উভয় পাড়ে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিক ও কবরস্থানসহ কয়েক হাজার বসতবাড়ি। ভাঙন নিয়ন্ত্রণে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের চরনাগদা, হাটাইল, আড়ালিয়া, চরসাড়াশিয়া গ্রাম নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের লেওলাইপাড়া, মাছখালি, মরিচাপাড়া, রাকশা, যমুনার ভাঙনে বেড়া উপজেলার চরনাগদা, চরসাফুল্লা, নতুন বাটিয়াখড়াসহ ১২টি গ্রামের অর্ধশত বসতবাড়ি ও শতাধিক বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কয়েক হাজার পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। নদী ভাঙন ও ফসল ঢুবে যাওয়ায় চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু দাউদ জানান, লেওলাইপাড়া গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বণ্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদরাসা, ২৭ গ্রামের মানুষের একমাত্র লেওলাইপাড়া কবরস্থানটিসহ তিন গ্রামের কয়েক হাজার বসতবাড়ি। পাবনার বেড়া উপজেলার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, এ বছর বাদাম ও তিলের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা ছিল। টানাবর্ষণ ও উজান ঢলে যমুনার চরের নিম্নাঞ্চলের শতাধিক বিঘা জমির বাদাম, তিল ও অন্যান্য ফসল পানিতে ডুবে গেছে। কৃষকরা নৌকা নিয়ে পানিতে ডুব দিয়ে জমি থেকে বাদাম তুলছেন। সেই বাদাম যমুনার পশ্চিম পাড়ে নামানো হচ্ছে। বড়াল নদীর পানি বাড়ায় চলনবিলের নিম্নাঞ্চলের ৬০ বিঘা জমি বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে। নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়া ফসল তুলছেন চাষিরা। শ্রমিক সঙ্কটে তাদের কষ্টের শেষ নেই।
নাগদারচরের কৃষক সাহেব আলী, ফলজানা চরের আকবর আলী, সোনা মিয়াসহ অনেকেই জানিয়েছেন, উজানের ঢলে যমুনা ও বড়াল নদীতে অস্বাভাবিক গতিতে পানি বাড়তে থাকে। ৪-৫ দিনের মধ্যে যমুনার চরের শতাধিক বিঘা জমির বাদাম, তিলসহ অন্যান্য ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এদিকে শ্রমিক সঙ্কটে ডুবে যাওয়া বাদাম তুলতে পারছেন না। শ্রমে-ঘামে ফলানো ফসল হারিয়ে চাষিরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন। ফলে অনেক চাষি বাধ্য হয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ডুবে যাওয়া বাদাম তুলছেন। এভাবে অর্ধেক বাদাম তোলা সম্ভব হচ্ছে।

বেড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বেড়া উপজেলার চরপেচাকোলা, চরআড়ালিয়া, সাঁড়াশিয়া, চরসাফুলা, চরনাগদা, চরঢালা, চরকল্যাণপুর, পূবশ্রীকণ্ঠদিয়াসহ ২৫টি চরের ১০ হাজার একর জমিতে বাদাম, তিল ও শাক-সবজির চাষ হয়েছে। এদিকে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলের তিল ও বাদাম ডুবে যাওয়ায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখনো তলিয়ে যাওয়া জমি ও ফসলের পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে খুব শিগগিরই তলিয়ে যাওয়া জমি ও ফসলের পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা নির্ধারণ করে তাদের আর্থিক প্রণোদনা ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাব চৌধুরী জানান, টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যমুনা নদীর উভয় পাড়ে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন নিয়ন্ত্রণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে ভাঙন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে বলে তিনি জানান।

 


আরো সংবাদ



premium cement