০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২ মহররম ১৪৪৬
`
রাজপথে মৃত্যুর হানা

ছুটির দিনে সড়কে ঝরল ১৮ প্রাণ

দিনাজপুরে দুর্ঘটনাকবলিত বাস : নয়া দিগন্ত -


দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দিনাজপুরের বলরামপুর এলাকায় বাস ও আম বোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ছয়জন নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিহত হয়েছে পাঁচ বন্ধু। এ ছাড়া দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে আরো দুইজন, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দুইজন ও যশোরের মনিরামপুরে একজন নিহত হয়েছেন।
দিনাজপুর প্রতিনিধি ও ফুলবাড়ী সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরে দু’টি পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় আটজন নিহত ও ৩২ জন আহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে দিনাজপুর সদর উপজেলার পাঁচবাড়ী বাজারসংলগ্ন বলরামপুর (দইসই) এলাকায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই শিশুসহ ছয়জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছে এবং দুপুরের পর ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সম্মুখের দুর্ঘটনায় দুইজন ঘটনাস্থলেই নিহত ও দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

বলরামপুর (দইসই) এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও আমবোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহতরা হলেন- যাত্রীবাহী নাবিল কোচের সুপারভাইজার বোচাগঞ্জ মিলরোড এলাকার মৃত লক্ষণ বাহাদুরের ছেলে রাজেশ বাহাদুর (৩৫), ট্রাকচালক ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ মিত্রপাঠ এলাকার মৃত সুরার ছেলে হাসু (২৮), বোচাগঞ্জ আনোয়ারা এলাকার জাহিদ ও সুলতানা পারভীনের কন্যা শিশু বিভা (১০), চিরিরবন্দর আমবাড়ি বিশ্বনাথপুর এলাকার বিমল চন্দ্র রায়ের ছেলে ভ্যানচালক স্বদেশ রায় (৩০), চিরিরবন্দর খোচনা এলাকার মোহাম্মদ মমিনুরের পাঁচ মাসের কন্যা শিশু জায়না ও ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ বদতালীগাঁও এলাকার দানেশ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী (৫২)। ফুলবাড়ী উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আবদুর রাজ্জাকের ছেলে মিনহাজুল (৪৪) ও একই এলাকার আমান (৩২)। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুর সদর উপজেলার পাঁচবাড়ী চকরামপুর আরিয়ান পেট্রোল পাম্পের পশ্চিমে ঢাকাগামী আম বোঝাই একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট ১৭-০০৮৩) তার রাস্তার সাইড পরিবর্তন করে ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও রানীশংকৈলগামী যাত্রীবাহী বাস নাবিল পরিবহনকে (ঢাকা মেট্রো ট-১৪-৪১৯০) মুখোমুখি ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই ট্রাকের চালক ও বাসের হেলপার মারা যান এবং আহতদের উদ্ধার করে এম আবদুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজন শিশু, বাসের সুপারভাইজার ও যাত্রীসহ মোট ছয়জন মারা যান এবং ৩০ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ ও পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমদ তাৎক্ষণিকভাবে এম আবদুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে যান এবং চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য আর্থিকসহায়তা প্রদান করেন।

অপর দিকে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ফায়ার সার্ভিসের মধ্যবর্তী শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার রাস্তার মুখে ট্রাক ও নসিমনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই দু’জন নিহত হন। এই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন আরো দু’জন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আহতদের উদ্ধার করে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। চিকিৎসকরা জানান, ট্রাকচালকের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আল কামাহ তমাল ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী।
ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাঁচ বন্ধু নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে চারজনের বাড়িই উপজেলার আজমপুর গ্রামে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের পাবনা সুগার মিলের সামনে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিহত হন তারা।

নিহতরা হলেন- ঈশ্বরদী উপজেলার জিহাদ হোসেন (১৭), রিয়াদুল ইসলাম শিশির (১৮), সিফাত হোসেন, বিজয় হোসেন (১৯) ও শাওন (১৮)। নিহতদের মধ্যে চালক বিজয় হোসেন ছাড়া অন্য চারজন ঈশ্বরদী টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের ছাত্র।
উপজেলা চেয়ারম্যানের শোক প্রকাশ নিহতদের রূহের মাগফিরাত ও তাদের স্বজনদের সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার। তিনি শুক্রবার সকালে নিহতদের নামাজে জানাজা অংশ নেন এবং শোক সন্তোপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
এ দিকে ঈশ্বরদীর পাঁচ কিশোরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পাবনা জেলা আমির ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট সদস্য অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল ও ঈশ্বরদী উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক ড. নুরুজ্জামান প্রমাণিক। নিহত জাহিদের বাবা রেজাউল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে সন্ধ্যার পর বাড়িতেই ছিল। হঠাৎ তার এক বন্ধু এসে বাড়ির বাইরে ডেকে নিয়ে যায়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার এক ঘণ্টা পরই খবর আসে জাহিদসহ পাঁচজন মারা গেছে।

ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গোল্ডেন পরিবহনের একটি বাসের সাথে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১০ জন যাত্রী। গতকাল শুক্রবার বেলা ১টার দিকে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের পুকুরিয়া যদুরদিয়া নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় পিকআপের হেলপার এবং ড্রাইভার ঘটনাস্থলেই নিহত হন। হতাহতদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। উদ্ধার কাজে ঘটনাস্থলে ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ কাজ চালায়।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি আবু সাঈদ মো: খায়রুল আনাম বলেন, ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী গোল্ডেন পরিবহনের একটা বাস ও ফরিদপুরগামী পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় বাস ও পিকাআপের সামনের অংশ সম্পূর্ণ দুমড়েমুচড়ে যায়। দুর্ঘটনার সময় বাস ও পিকআপ ছিটকে গিয়ে বিদ্যুতের ৩৩ হাজার ভোল্টে খুঁটির সাথে ধাক্কা লাগে। এতে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে ভাঙ্গা অঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
মনিরামপুর (যশোর) সংবাদদাতা জানান, ইজিবাইকের ধাক্কায় আরাফাত হোসেন (৭) নামে এক মাদরাসা শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিক রাজগঞ্জ-পুলেরহাট সড়কের কোদলাপাড়া মাদরাসা মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আরাফাত কোদলাপাড়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম মিস্ত্রির ছেলে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রেজাউল ইসলাম জানান, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আরাফাত রাস্তা পার হচ্ছিল। এ সময় পুলেরহাটমুখী একটি ইজিবাইক তাকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। থানার উপপরির্দশক প্রসেনজিৎ রায় বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহত আরাফাত কোদলাপাড়া দাখিল মাদরাসার শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থী।

নোয়াখালীতে কাভার্ডভ্যান অটোরিকশায় সংঘর্ষে ভাইবোনের মৃত্যু
মো: হানিফ ভূঁইয়া নোয়াখালী অফিস
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে কাভার্ডভ্যান চাপায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আরোহী ভাইবোনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) বেলা পৌনে ১টার দিকে উপজেলার বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের বগাদিয়া উত্তর ব্রিজসংলগ্ন মদিনা মসজিদের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মো: ইয়াছিন (১৭) ও বিউটি আক্তার (২৪) উপজেলার বজরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বগাদিয়া গ্রামের বশির উল্যার নতুন বাড়ির মৃত বশির উল্যার সন্তান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে অন্তঃসত্ত্বা বিউটি ছোট ভাই ইয়াছিনকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে উপজেলার সোনাইমুড়ী বাজারে যায়। বেলা পৌনে ১টার দিকে ডাক্তার দেখিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ভাইবোন বাড়ির উদেশ রওনা করেন। যাত্রাপথে অটোরিকশাটি বেগমগঞ্জ টু সোনাইমুড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের বগাদিয়া উত্তর ব্রিজসংলগ্ন স্থানে পৌঁছালে পিছনে না দেখে সড়কের কাটা দিয়ে আকস্মিক অটোরিকশাচালক রিকশাটি বাম দিক থেকে ডান দিকে ঢুকিয়ে দেয়। ওই সময় বেগমগঞ্জগামী পিছনে থানা বেপরোয়া গতির কাভার্ভভ্যান তাদের চাপা দিলেই ঘটনাস্থলে ভাইবোনের মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করে।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, সকালে কুমিল্লা থেকে বেগমগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসা একটি কাভার্ডভ্যান বগাদিয়া নামক স্থানে অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থালেই ভাইবোনের মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই ঘাতক চালকরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে হাইওয়ে পুলিশ কাভার্ডভ্যান ও অটোরিকশা জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement