০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২ মহররম ১৪৪৬
`
তড়িঘড়ি করে ডাকা হয় সভা

সম্পদের হিসাব গোপন রাখতে চান সচিবরা

-

সম্প্রতি কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা বা সাবেক কর্মকর্তার দুর্নীতি খবরে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় চলছে। এ ঘটনায় উচ্চ আদালত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিতে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালাটি হালনাগাদের নির্দেশনা দিয়ে তিন মাসের সময় দেয় এমন পরিস্থিতিতে নড়ে চড়ে বসে সরকার। বিধিমালা চূড়ান্ত করতে তড়িঘড়ি করে ডাকা হয় সচিব সভা। এই সভায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দিলেও সেটি গোপন রাখার পক্ষে বেশির ভাগ সচিব। সভায় অংশ নেয়া একাধিক সচিবের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
সভায় কয়েক জন সচিব বলেছেন, আয়কর আইন-২০২৩ অনুযায়ী এসব তথ্য গোপন থাকবে। স্ত্রীদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। তবে প্রত্যেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হিসাব বিবরণী জমা দেবে। এই তথ্য কর্তৃপক্ষকে গোপন রাখতে হবে। জনগণের কাছে প্রকাশ করা যাবে না।
এসব মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে জ্যেষ্ঠ কয়েকজন সচিব বলেছেন, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ এ সংশোনে জনমতের প্রতিফলন থাকা উঠিত। এজন্য বিদ্যমান আইন অনুযায়ী প্রত্যেককে সম্পদের হিসাব জমা দেয়ার বিধান রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় জনবলও নিয়োগ করতে হবে। কারণ বিদ্যমান জনবল দিয়ে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর সম্পদের হিসাব যাচাই-বাছাই করা অসম্ভব।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেন। সভায় সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ ও জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল নিয়ে দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়েছে। এতে সম্পদের হিসাব জমা দেয়া না দেয়ার বিষয় বেশি সময় ধরে সচিবদের মধ্যে বিতর্ক হয়েছে।

সভায় দুইজন সচিব বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। কেউ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হলে তাকে পদোন্নতি দেয়া যাবে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এ ছাড়া তারা বলেছেন, সম্পদের হিসাব দেয়া যাবে। তবে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন রাখতে হবে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি পাঁচ বছর পর সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিতে হবে। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের স্বল্পমেয়াদি সুপারিশ ছিল প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে জনপ্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়ার ব্যবস্থা করা। কিন্তু লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ কর্তৃক এ ক্ষেত্রে পূর্বে ভেটিংকৃত অংশ হতে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা উপবিধি-১০(২) বাদ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি আয়কর আইন, ২০২৩ এ ৩০৯ ধারার সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ান বিভাগ কর্তৃক উক্ত উপবিধি-১০(২) বাদ দেয়া হয়। একইভাবে ১১ ধারার বিষয়ে মতামত দিয়েছে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ। এ নিয়েও বৈঠকে সচিবদের মধ্যে মতানৈক্য হয়।

বৈঠকে শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেন বলেছেন, ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা দ্রুত যুগোপযোগী করে নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে। একই সাথে ২০১২ সালের শুদ্ধাচার কৌশল সংশোধন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন প্রথম সচিব সভা করেন তখন আমাদের কাছে একটি নির্দেশনা এসেছিল, আমরা যেন বছরে অন্তত দু’টি সচিব সভা করি। সে হিসেবে আমরা হিসাব করেছিলাম যে জুলাই মাসে আমরা একটি সচিব সভা করব। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, প্রথম সভার যে বাস্তবায়ন অগ্রগতি সেটি জানতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে চিঠি দিয়েছিলাম। সেটির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই মিটিংটি করেছি। সভায় গত সভার বাস্তবায়ন অগ্রগতি আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শুদ্ধাচার বিষয়ে কিছু আলোচনা করেছি। বাজেট বাস্তবায়ন এবং নির্বাচনী ইশতেহার নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের কিছু দাপ্তরিক কাজে প্রধানমন্ত্রী সময়ে সময়ে যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছিলেন সেগুলো যেন যতœ সহকারে সিরিয়াসলি অনুসরণ করা হয় সে ব্যাপারে সভায় পরামর্শ দেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement