০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২ মহররম ১৪৪৬
`

যুক্তরাজ্যে আবারো জয়ী বাংলাদেশী ৪ নারী

উপরে বাঁ থেকে রোশনারা আলী, ড. রূপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক ও আপসানা বেগম -


আবারো যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত চার ব্রিটিশ নারী। তারা হলেন- রুশনারা আলী, বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক, ড. রুপা হক ও আপসানা বেগম। এর মধ্যে রুশনারা আলী টানা পঞ্চমবার এমপি নির্বাচিত হলেন। নির্বাচিত এ চারজনই নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে পারেন।।
গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় ব্রিটেনের হাউজ অব পার্লামেন্টের সাধারণ নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে আটজন, কনজারভেটিভ পার্টি থেকে দু’জনসহ অন্যান্য দলের মনোনয়নে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোট ৩৪ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবে নতুন করে আর কেউ জয়ী হতে পারেননি।

রুশনারা আলী : প্রথম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ হিসেবে রুশনারা আলী ২০১০ সালে টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনালগ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। ওই আসন থেকে তিনি টানা চারবার নির্বাচিত হন। এবার অবশ্য তিনি বেথনালগ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসন থেকে ১৫ হাজার ৮৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে তিনি টানা পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হলেন তিনি।
গতবারের চেয়ে এবার রুশনারা আলীর ভোটের সংখ্যা কমলেও লেবার পার্টির এই আসন ধরে রেখেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আরেক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ আজমল মাশরুর পেয়েছেন ১৪ হাজার ২০৭ ভোট।
রুশনারা আলী ২০১০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক ছায়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এরপর তিনি ২০১৩ সালের অক্টোবরে ছায়া শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। রুশনারা আলীর জন্ম সিলেটে। সাত বছর বয়সে পরিবারের সাথে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। তিনি অক্সফোর্ডের সেন্ট জনস কলেজ থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে স্নাতক করেছেন।

রুপা হক : ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে টানা চতুর্থবার লেবার পার্টির মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন রুপা হক। এবারের নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন ২২ হাজার ৩৪০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির জেমস উইন্ডসর ক্লাইভ পেয়েছেন ৮ হাজার ৩৪৫ ভোট।
২০১৫ সালে লেবার পার্টির মনোনয়নে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন রুপা হক। এরপর টানা তিনবার তিনি পশ্চিম লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হলেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে লেবার পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তাকে সর্বদলীয় সংসদীয় মিউজিক গ্রুপের ভাইস চেয়ার এবং ক্রসরেলের সর্বদলীয় সংসদীয় পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল।
রুপা হকের পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের পাবনা জেলার মুকসেদপুরে। বাবা মোহাম্মদ হক ও মা রুশনারা হক ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। রুপা হক রাজনীতিতে আসার আগে শিক্ষক ও লেখক ছিলেন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার ও ২০০৪ থেকে ইউনিভার্সিটি অব কিংস্টনে শিক্ষকতা করেছেন। এ ছাড়া ট্রিবিউন, দ্য গার্ডিয়ানসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত কলাম লিখতেন। তিনি ইস্ট লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে যুব সংস্কৃতির ওপর পিএইচডি করেছেন।

টিউলিপ সিদ্দিক : বঙ্গবন্ধুর নাতনী টিউলিপ সিদ্দিক এবারের নির্বাচনে দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়নে ২৩ হাজার ৪৩২ ভোট পেয়ে টানা চতুর্থবারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ডন উইলিয়ামস পেয়েছেন ৮ হাজার ৪৬২ ভোট।
২০১৫ সালে টিউলিপ সিদ্দিক প্রথম যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এবং সফিক আহমেদ সিদ্দিকের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। ২০১৬ সাল থেকে তিনি ছায়া শিক্ষামন্ত্রী, সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপের ভাইস চেয়ার, নারী ও সমতা নির্বাচন কমিটির সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক ঢাকার স্কলাস্টিকা স্কুল, হ্যাম্পস্টেডের রয়্যাল স্কুল ও মিল হিল স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। পরে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি ও কিংস কলেজ লন্ডন থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ২০১১ সালে সরকার, রাজনীতি ও পলিসি বিষয়ে দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া টিউলিপ ২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
আপসানা বেগম : লন্ডনের বাংলাদেশী অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়নে দ্বিতীয়বারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আপসানা বেগম। তিনি পেয়েছেন ১৮ হাজার ৫৩৫ ভোট। নিকটতম প্রার্থী গ্রিন পার্টির নাথালি বেইনফিট পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৯৭৫ ভোট। আর তার সাবেক স্বামী এহতেশামুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চার হাজার ৫৫৪ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন।
আপসানা বেগম ২০১৯ সালে লেবার পার্টির মনোনয়নে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তিনিই প্রথম হিজাব পরিহিত এমপি। ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সোচ্চার ভূমিকা পালন এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি। রাজনীতি বিষয়ে কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে স্নাতক এবং ২০১২ সালে সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন ও কমিউনিটি লিডারশিপ বিষয়ে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন।
আপসানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসেই। বাবা টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক কাউন্সিলর মনির উদ্দিন আহমেদ। তাদের আদি নিবাস সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement