০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২ মহররম ১৪৪৬
`

তীব্র গ্যাস সঙ্কটে শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত

-


তীব্র আকার ধারণ করেছে চলমান গ্যাস সঙ্কট। শিল্প-কারখানার উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে। কলকারখানা মালিকরা সরকারের একাধিক দফতরে চিঠি দিলেও মিলছে না প্রতিকার। রিমালে একটি এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত কয়েক সপ্তাহে এই সঙ্কট আরো বেড়েছে।
পেট্রোবাংলা বলছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালে সামিট গ্রুপের একটি ফোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গ্যাস সরবরাহ কমেছে। তবে একটি পাইপলাইনে একাধিক শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেয়ায় লাইনের শেষ প্রান্তে থাকা কারখানাগুলো গ্যাস কম পাচ্ছে।
আর গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বলছে, তাদের কাজ শুধু গ্যাসসংযোগ ও সরবরাহ করা। পেট্রোবাংলা যে পরিমাণ গ্যাসের জোগান দিচ্ছে তারা সেই পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করছে।

তবে চলতি মাসের মাঝামাঝি সঙ্কট কেটে সমাধানের দিকে যাবে বলে দাবি করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান দুটি। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় এমনিতেই দীর্ঘদিন গ্যাস-সঙ্কটে ভুগছে শিল্পখাত। এ সঙ্কট থেকেই সরকার গ্যাস আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৮ সালের শেষ দিকে দেশে তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি শুরু হয়। জাগো নিউজ।
সঙ্কট কাটতে পারে জুলাইয়ে : সূত্র জানায়, স্থানীয়ভাবে গ্যাসের উৎপাদন না বাড়ায় দেশের গ্যাস খাত অনেকটাই বিদেশনির্ভর। এলএনজি আমদানি করে তা গ্যাসে রূপান্তরের মাধ্যমে পাইপলাইনে সরবরাহের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল আছে। গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে একটি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়েছে। ৬ অথবা ৭ জুলাই সামিটের এফএসআরইউ সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে। ১২ জুলাই এটি দেশে পৌঁছাবে। দেশে পৌঁছানোর পর কার্যক্রম শুরু করতে আরো তিন দিন সময় লাগতে পারে। এর আগে চলমান গ্যাস সঙ্কট কাটছে না।

সমাধান চেয়ে কারখানা মালিকদের চিঠি : গ্যাস-সঙ্কটের সমাধান চেয়ে গত সপ্তাহে সরকারের বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিরামিক উৎপাদক ও রফতানিকারক সমিতি (বিসিএমইএ)। চিঠিতে সংগঠনটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা উল্লেখ করেন, সিরামিক কারখানার চুল্লি চালাতে ২৪ ঘণ্টা গ্যাসের সরবরাহ থাকতে হয়। গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই ছাড়া চুল্লির ভেতরে উৎপাদনপ্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। গ্যাসের চাপ কমে গেলে চুল্লির ভেতরে থাকা সব পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। আর একবার চুল্লি বন্ধ হলে চালু করতে সর্বনিম্ন ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগে।
গ্যাস সঙ্কটে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান রুগ্ণ হয়ে পড়লে ব্যাংকঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হবে বলেও চিঠিতে সতর্ক করা হয়।
‘তীব্র গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে বিগত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে টেক্সটাইল মিলগুলো স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। কয়েক মাস ধরে মিলগুলো তাদের উৎপাদন ক্ষমতার গড়ে ৪০-৫০ শতাংশ ব্যবহার করতে পেরেছে। ফলে সুতা ও কাপড়ের উৎপাদন কমেছে। একই সাথে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিসহ ফেব্রিক প্রসেসিং ব্যয়ও বেড়েছে, যা এ খাতের প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ করছে।’
সম্প্রতি পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানকে লেখা এক চিঠিতে এ কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। সংগঠনটির পক্ষে দেয়া ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন।
বিটিএমএ চিঠিতে আরো জানায়, গ্যাস-বিদ্যুৎ সঙ্কটের সরাসরি প্রভাব রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে পড়েছে। গ্যাসের অভাবে যদি বিটিএমএর মিলগুলো সময়মতো তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে সুতা ও কাপড় সরবরাহ করতে না পারে তাহলে যথাসময়ে পণ্য জাহাজীকরণ করা সম্ভব হবে না।

দাম বাড়লেও বাড়েনি সরবরাহ : গত বছরের জানুয়ারি মাসে গ্যাস ট্যারিফ প্রতি কিউবিক মিটার ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ক্রমান্বয়ে ৩১ টাকা ৫০ পয়সা ধার্য অর্থাৎ ৯৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ বাড়িয়ে আশ্বস্ত করা হয়, এরপর থেকে শিল্প-কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হবে। কিন্তু বিগত এক বছরের বেশি সময় মিলগুলো বর্ধিত গ্যাস ট্যারিফ দিলেও গ্যাসের সরবরাহ কখনোই কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছেনি। ফলে মিলগুলোর উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় রফতানি আদেশ পরিপালন করতে পারছে না।
পেট্রোবাংলা ও তিতাসের বক্তব্য : এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘মিল মালিকরা সাধারণ কথাবার্তা বলছেন। একটি পাইপলাইন থেকে দুই অথবা তিনটি কলকারখানা সংযোগ পেতে পারে। কিন্তু আলাদা পাইপলাইন না করে একই পাইপলাইন থেকে তিতাসের কাছ থেকে তারা ১০ জন সংযোগ নিচ্ছে। একটি পাইপলাইন থেকে এভাবে ১০ জন সংযোগ নেয়ায় গ্যাস থাকা সত্ত্বেও শেষ প্রান্তের গ্রাহক পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছে না।’
তবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘আমরা পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের কাছে মিটারের ছবি তুলে পাঠাচ্ছি। আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, ফতুল্লা গাজীপুরের মাওনাসহ সব জায়গায় গ্যাস সঙ্কট। পেট্রোবাংলা আমাদের কাছে স্বীকার করেছে যে তারা গ্যাস দিতে পারছে না।’


আরো সংবাদ



premium cement