০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫
`

ভবিষ্যৎ তাপমাত্রা নিয়ে ভয়ানক বার্তা

-

- তাপমাত্রা বৃদ্ধির ৮ কারণ
- ২৫ বছরে ৪৬ ডিগ্রি ছাড়াবে
- রোগী ও মৃত্যু বাড়ছে

ঢাকার বাতাসে উত্তাপ কমছে না। এতে করে দিন দিন হিটস্ট্রোক এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্তের পাশাপশি বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এরই মধ্যে তাপমাত্রা নিয়ে ভয়াবহ বার্তা আসছে। এতে বলা হচ্ছে আট কারণে দিন দিন তাপমাত্রা বাড়ছে। বিরজামান পরিস্থিতিতে বেসরকারি গবেষণা বলছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে গরমের মাত্রা ৪৫ ডিগ্রি এবং ২৫ বছরে ৪৬ ডিগ্রি ছাড়াবে। আর ৩৪ সালের দিকে আরেকটি চরম তাপপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। অন্য দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, তাপদাহজনিত কারণে ৮০ সালের মধ্যে বয়স্কদের মধ্যে প্রতি লাখে ৩০ জনের মৃত্যু হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে আট কারণে তাপমাত্রার লাগাম টানা যাচ্ছে না তার অন্যতম হচ্ছে- বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ুর পরিবর্তন, জীবাশ্ম জ্বালানি ও শিল্পকারখানা থেকে কার্বন নির্গমন বৃদ্ধি। যা গ্রিনহাউজ গ্যাস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে- জলবায়ুর ওপর সমুদ্রের প্রভাব, সবুজায়ন ধ্বংস, নদী, পুকুর-খাল-বিল ও জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণ। ফলে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে তাপমাত্রা বেড়েই চলছে। তাই এখনই তা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে তাপমাত্রা মানুষের জন্য অসহনীয় হবে বলে তারা মত প্রকাশ করেন।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো এ নিয়ে একটি গবেষণা করেছে। এতে বলা হয়েছে, গত ৪৪ বছরে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই গড় তাপমাত্রা আরো দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে গড় তাপমাত্রা ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ৩০ সালের মধ্যে তাপদাহ ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াবে, আর ২০৫০ সালের মধ্যে তা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এতে করে ভবিষ্যৎ তাপদাহের পূর্বাভাসে দেখা যায়- বাংলাদেশের তাপমাত্রা দৈনিক গড় উষ্ণায়নের চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেশি বাড়বে এবং শীতকালে তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালের চেয়ে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি বাড়বে।
প্রতিবেদনে তাপদাহের কারণে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে তাপমাত্রা বেড়েছে উল্লেখ করে এর জন্য বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ুর পরিবর্তন, জীবাশ্ম জ্বালানি ও শিল্পকারখানা থেকে কার্বন নির্গমন বৃদ্ধি ও জলবায়ুর ওপর সমুদ্রের প্রভাবকে দায়ী করা হয়। এতে ২০৩৪ সালের দিকে আরেকটি চরম তাপপ্রবাহ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়।

তাপদাহের প্রভাব তুলে ধরে বলা হয়, অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশে হিটস্ট্রোক এবং শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। সেই সাথে বিগত কয়েক বছর থেকে এখন হাসপাতালে ভর্তি ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।
অন্য দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে ২০৩০ সালে এই তাপপ্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে উল্লেখ করে বলা হয়, বয়স্কদের মধ্যে তাপদাহজনিত কারণে ২০৮০ সালের মধ্যে প্রতি এক লাখে ৩০ জনের মৃত্যু হতে পারে।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে পরিবেশবিজ্ঞানী ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমাদ কামরুজ্জামান মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, যে কয়েকটি কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে তার অন্যতম হলো সবুজায়ন ধ্বংস, নদী, পুকুর-খাল-বিল ও জলাশয় কমে আসা ছাড়াও বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় কারণ।
বাংলাদেশে বর্তমানে যে তাপদাহ দেখা যাচ্ছে সেটি দীর্ঘ দিনের পরিবেশ ধ্বংসের একটি ফলাফল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক একাধিক কারণ ছাড়াও স্থানীয় অনেক কারণে এমনটি হচ্ছে।
তার ভাষ্য, আগে আমাদের ২৫ ভাগের বেশি সবুজায়ন থাকলেও এখন আর তা নেই। কারণ গাছপালা যেহেতু কার্বন-ডাই অক্সাইড ও তাপ শোষণ করে অক্সিজেন সরবরাহ করে। ফলে বাতাসে অক্সিজেন ছড়িয়ে আশপাশের এলাকা শীতল রাখত; কিন্তু বন উজাড় করায় গাছের সংখ্যা কমে গিয়ে এখন অক্সিজেন, জলীয়বাষ্প কমে গিয়ে তাপমাত্রা বেড়েছে।
এ বিষয়ে পরিচালিত তাদের গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি বলেন, ঢাকা শহরের ৩৬টি স্থান নিয়ে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব এলাকায় সবুজের উপস্থিতি রয়েছে সেসব এলাকায় তাপমাত্রা তুলনামূলক কম। এর মধ্যে ৯টিতে ছিল তাপমাত্রা বেশি। কারণ এগুলোতে গাছপালা কম ছিল। আর বাকি ৯টিতে গাছপালা বেশি থাকায় তাপমাত্রাও কম ছিল। আর অন্য ১৮টিতে মধ্যমানের তাপমাত্রা ছিল। এতেই প্রমাণিত সবুজ জলাভূমি তাপমাত্রা কম কিংবা বৃদ্ধির অন্যতম উৎস।
অন্য দিকে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের চেয়ারপারসন ও সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, যদি তাপদাহের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে তবে ভবিষ্যতে তাপমাত্রা আমাদের জন্য অসহনীয় হবে। এর নিয়ন্ত্রণে অন্যতম উপায় গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানোর মাধ্যমে তাপপ্রবাহ প্রবণতা কমানো।
টেকসই ও পরিবেশ-বান্ধব নগর পরিকল্পনা ছাড়া এর সমাধান অসম্ভব মন্তব্য করে সংস্থাটির মহাসচিব ও সিনিয়র উপদেষ্টা ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, তাপদাহের ফলে লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ফসলের ক্ষতি, ফলন হ্রাস এবং খাদ্যের দাম বেড়ে যায়। অতিরিক্ত তাপদাহ গ্রামাঞ্চলের পশুপালনকে প্রভাবিত করে ও পানির অভাব সৃষ্টি করে। এই সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার জন্য তাপ-প্রতিরোধী ফসল, কৃষি ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করা উচিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement