সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দাখিল বাস্তবায়নের নির্দেশ হাইকোর্টের
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৩ জুলাই ২০২৪, ০১:৪৭
আইন অনুযায়ী সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব দাখিলের বিধি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সাথে সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব বিরণী যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল বিষয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে হাইকোর্টে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত বলেছেন, ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ১৩ বিধিটি কঠোরভাবে মানতে নির্দেশ দেয়া হলো। মঙ্গলবার বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রথমিক শুনানি গ্রহণ করে রুলসহ এ আদেশ দেন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ২২ অক্টোবর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
রুলে সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের অবৈধ সম্পদ অর্জন রোধে প্রয়োজনীয় নীতিমালা, আইন ও নীতি করতে বিবাদিদের ভয়াবহ ব্যর্থতা এবং কথিত নিষ্ক্রিয়তা কেন বে-আইনি হবে না এবং সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী প্রকাশ ও ডিজিটাল মাধ্যমে সময়ে আপডেট করার নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত। শুনানির সময় হাইকোর্ট বলেন, দুর্নীতি হচ্ছে উন্নয়ন ও সুশাসনের অন্তরায়। এটা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিৎ।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম ফজুলল হক।
রিটের শুনানিতে আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস বলেন, জনগণের ট্যাক্সের ৪৩ শতাংশ টাকায় যেখানে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতনে যাচ্ছে, সেখানে তাদের সম্পদের হিসেব জনগণের উদ্দেশ্য কেন প্রকাশিত হবে না? আর পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সম্পত্তি আর রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয় যদি সামনে আসে, তাহলে তিনি কি রক্ষা করবেন? তার সম্পত্তি নাকি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব?
অন্য দিকে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা উচিত এটা আমরা চাই।
এর আগে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস আইন অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দাখিল করা ও ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে এই রিটটি দায়ের করেন।
রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, অর্থ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব,ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, দুদকের চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং বিএফআইইউর প্রধানকে বিবাদি করা হয়।
আবেদনে সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের অবৈধ সম্পদ অর্জন রোধে প্রয়োজনীয় নীতিমালা, আইন ও নীতি করতে বিবাদিদের ভয়াবহ ব্যর্থতা এবং কথিত নিষ্ক্রিয়তা কেন বে-আইনি হবে না, আইন অনুসারে দেশে-বিদেশে সরকারি কর্মচারীদের থাকা সম্পদের তথ্য সংগ্রহে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী প্রকাশ ও ডিজিটাল মাধ্যমে সময়ে আপডেট করার নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
রিট আবেদনে রুল জারির পাশাপাশি সরকারের বিধি ১৩ (১) (২) ধারা অনুসারে বেসামরিক পদে কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে সম্পদের (স্থাবর ও অস্থাবর) হিসাব সংগ্রহের জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিবাদিদের প্রতি নির্দেশ চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সরকারি কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির তথ্য প্রকাশ করার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা শুরু করার জন্য বিবাদিদের প্রতি নির্দেশ জারি করার আবেদন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস বলেন, চাকরির প্রবেশকালে সম্পদের হিসাব দাখিল করতে হবে এবং প্রতি বছর কত বাড়ল বা কমল তার বিবরণী দাখিল করার আইন রয়েছে। পরে তা সংশোধন করে প্রতি পাঁচ বছর পর পর দাখিল করার বিধান করা হয়। কিন্তু সর্বশেষ ২০০৮ সালে কিছু কর্মকর্তা দাখিল করেছিল। ২০০৮ সালের পরে সরকার চাইলেও কর্মকর্তারা সেটা দেয়নি। আমরা বলেছি আইনটা প্রতিপালন করার জন্য। তিনি বলেন, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের একজন কর্মকর্তা কিভাবে এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন করতে পারেন সেটা আমরা জানতে চেয়েছি।
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার সংশোধিত ১৩ বিধির ভাষ্য, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী চাকরিতে প্রবেশের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে তার বা পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন বা দখলে থাকা শেয়ার, সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বীমা পলিসি ও মোট ৫০ হাজার টাকা বা ততধিক মূল্যের অলঙ্কারসহ স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা করবেন। প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী প্রতি পাঁচ বছর অন্তর প্রদর্শিত সম্পত্তির হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাববিবরণী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাখিল করবেন।