১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

শ্রীমঙ্গলে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বর্ষার সবুজ প্রকৃতি

শ্রীমঙ্গলে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বর্ষার সবুজ প্রকৃতি -


শহরে ঢুকতে কিংবা শহর থেকে বের হতে সড়কের দুই পাশ অথবা চা বাগানের মধ্যে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা মেঠো পথ সর্বত্রই এখন ঘন সবুজে ভরপুর। উঁচু-নিচু পাহাড় ঘেরা বন-বনানী আর নীল আকাশের সাথে মিশে যাওয়া সবুজ পাহাড়ের মিতালীর সাথে অপরূপ নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থীদের। সড়কের পাশে চোখ জুড়ানো নানান রকমের ফুলের গাছ আর কচি পাতা গজানো সতেজ সবুজ চা বাগান দেখলে মন ভরে যাবে যেকোনো ভ্রমণপিপাসুর। সদ্য ঝরে যাওয়া সড়কের দু’পাশের নানান রঙের সোনালু, ক্যাসিয়া, কৃষ্ণচূড়া ফুলের গাছ আর প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া দৃষ্টিনন্দন চা বাগানের অপরূপ সবুজ দৃশ্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণপ্রেমীদের।
বলছিলাম, প্রায় দেড় শতাধিক বছরের প্রাচীন চা শিল্পের ঐতিহ্যের গৌরব বহনকারী প্রাকৃতিক আশ্রয়ে গড়ে ওঠা পাহাড়, সমতলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি ও বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ চায়ের রাজধানী খ্যাত দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের কথা। বিশেষ করে ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল সড়কের বধ্যভূমি-৭১ থেকে বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র (বিটিআরআই) পয়েন্ট পর্যন্ত যে দিকে যতদূর চোখ যাবে শুধু সবুজ আর সবুজ দৃশ্য চোখে পড়বে। এই সড়কটির দু’পাশের সবুজ প্রকৃতির চাবাগানের দৃশ্য দেখে মনে হবে যেন গ্রিন কার্পেট বিছিয়ে রাখা হয়েছে প্রকৃতিপ্রেমীর জন্য।
বিটিআরআই পয়েন্ট পাড়ি দিলেই চোখে পড়বে সড়কের এক পাশে চা বাগান অন্য পাশে সারি সারি রাবার বাগানের দৃশ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ এই দৃশ্য পর্যটকদের নিয়ে যাবে কল্পনার অন্য এক জগতে। এরপর ক্যাটস আই বসানো সড়কের আঁকাবাঁকা পীচঢালা পথ ধরে যতই যাবেন নয়নাভিরাম প্রকৃতি ভ্রমণপ্রেমীদের মন ভরিয়ে দিবে অনায়াসে।

আষাঢ়ের বৃষ্টিস্নাত ভরা মৌসুমে বর্ষার আকাশজুড়ে সাদা-কালো মেঘের আনাগোনা। এর মাঝেই গত কয়েক দিন ধরে মেঘ ফুঁড়ে সুর্য কিরণ আলোকিত করছে এ অঞ্চলের ধরণীকে। আবার কিছুক্ষণ পর রোদ্রোজ্জ্বলতার মাঝে হঠাৎ চতুর্দিক অন্ধকার করে অঝোর ধারায় ঝড়ছে বৃষ্টি। এ যেন রোদ-বৃষ্টির খেলা চলছে এ অঞ্চলের প্রকৃতির সাথে। প্রকৃতির আসল রূপ বা রোদ-বৃষ্টি স্নাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করার উৎকৃষ্ট সময় এখন এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় ট্যুর অপারেটররা।
তারা জানান, বর্ষার বিচিত্র রূপ আর সৌন্দর্য একনজর দেখার জন্য প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসেন শ্রীমঙ্গলে। এখানকার দৃষ্টিনন্দন চা বাগান ছাড়াও চ-কন্যা ভাস্কর্য, বধ্যভূমি ৭১, চা জাদুঘর, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, অতিথি পাখি আর মাছের অভয়ারণ্য খ্যাত বাইক্কাবিল, তার্কিস স্থাপত্য শিল্পের জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, মাধবপুর লেক, এমআর খান চা বাগানের দার্জিলিং টিলা, ব্রিটিশদের সমাধিস্থল ডিনস্টন সিমেট্রি, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, লালটিলা শিব মন্দির, হরিণছড়া গল্ফ মাঠ, বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র, শিতেশ দেবের মিনি চিড়িয়াখানা, রমেশের সাত রংয়ের চা কেবিনসহ রয়েছে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী খাসিয়া পুঞ্জি, মনিপুরী-গারো সম্প্রদায়ের জীবনাচারসহ আরো অনেক দর্শনীয় স্থান।
স্থানীয় ট্যুর অপারেটর শফিকুল ইসলাম রুম্মন নয়া দিগন্তকে জানান, প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের মন ভুলিয়ে দেয়ার জন্য শ্রীমঙ্গলের বর্ষার প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে। তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গলের চাবাগান, রাবার বাগান ছাড়াও সারি সারি আনারস আর লেবু বাগানগুলোর এখন যৌবনকাল। এ ছাড়া লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ এখানকার সব দর্শনীয় স্থানে এখন শোভা পাচ্ছে সবুজ লতাপাতা আর গাছপালা। এসব দৃশ্য দেখে মনে হবে যেন সবুজের সমাহার পুরো শ্রীমঙ্গলজুড়ে। পর্যটকদের ঘোরাঘুরির জন্য এখানে রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর চাঁন্দের গাড়ি (জিপ গাড়ি)। দর্শনার্থীরা চাইলে সেসব গাড়ির ছাদ খোলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানের সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারবেন গাড়িতে বসেই।

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সদস্যসচিব মো: সামছুল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, শ্রীমঙ্গল হচ্ছে পর্যটন শিল্পের জন্য সম্ভাবনাময়ী একটা জায়গা। এখানে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ছাড়াও পর্যটকদের মন ভরিয়ে দেয়ার মতো অন্তত আরো ১০-১৫টি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। আর বর্ষা মৌসুম হচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণপিপাসুদের জন্য উত্তম সময়। রাত্রী যাপনের জন্য এখানে পাঁচ তারকা মানের রিসোর্টসহ রয়েছে মানসম্পন্ন অনেক হোটেল রিসোর্ট ও ইকো কটেজ। তারা চাইলে গুগল সার্চ করে যেকোনো রিসোর্টে বুকিং করে পরিবার-পরিজন নিয়ে শ্রীমঙ্গলের বর্ষার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
শ্রীমঙ্গল ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্ষায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। নির্বিগ্নে পর্যটকরা যাতে এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সেজন্য প্রতিটি স্পটে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এখানকার পরিবেশ ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য অনুকূলে রয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে পর্যটকরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব তাদের সহযোগিতা করার। তিনি আরো বলেন, অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চায় সিলেট-সুনামগঞ্জে তো বন্যা হচ্ছে, শ্রীমঙ্গলে বন্যা আছে কিনা? আমরা তাদের বলি শ্রীমঙ্গলে বন্যা নেই তবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাসে ও ট্রেনে করে শ্রীমঙ্গল খুব সহজে যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে হানিফ, শ্যামলী ও এনা পরিবহন এক ঘণ্টা পরপর ঢাকা-মৌলভীবাজার চলাচল করছে। এ ছাড়া কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত ও কালনী এক্সপ্রেস নামের জোড়া ট্রেন ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচল করছে। সে ক্ষেত্রে বাসে ভাড়া নিবে ৫৭০ টাকা আর ট্রেনে পড়বে শ্রেণী ভেদে জনপ্রতি ২৪০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা। সময় লাগবে যাত্রা বিরতিসহ চার-পাঁচ ঘণ্টা। তবে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে আসলে সময় আরো কিছুটা কম লাগবে।


আরো সংবাদ



premium cement