০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫
`
সাভার ডেইরি ফার্মে দুদকের অভিযান

সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে ১০টি নিষিদ্ধ ব্রাহমা পাওয়া গেছে

সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে নিষিদ্ধ প্রজাতির ব্রাহমা : নয়া দিগন্ত -

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রোকে অনৈতিক সুবিধা দেয়ার অভিযোগে গতকাল সোমবার সাভারে কেন্দ্রীয় গোপ্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে কেন্দ্রীয় গোপ্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দরপত্র জালিয়াতিসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন দুদকের কর্মকর্তারা। দুপুরে দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রোকে অনৈতিক সুবিধা প্রদানসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সাভারে কেন্দ্রীয় গোপ্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অনুসন্ধান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ৯ সদস্যের একটি দল।
দুদক জানায়, ২০২১ সালের জুলাই মাসে করোনা মহামারীর বিধিনিষেধের মধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের জাল কাগজপত্র ব্যবহার জালিয়াতির মাধ্যমে শাহিওয়াল গরুর নাম দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে করে আমদানি করা সাদিক অ্যাগ্রোর ১৮টি নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়ে। গরু আমদানির জন্য সাদিক অ্যাগ্রো তিনটি জাল নথি জমা দিয়েছিল। নথিগুলো হলো- গবাদিপশু আমদানি-সংক্রান্ত একটি নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি), প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের প্রাণী কোয়ারেন্টিন বিভাগের কাছ থেকে একটি চিঠি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গবাদিপশু আমদানির অনুমতিপত্র, যার প্রতিটিকেই জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন শুল্ক কর্মকর্তারা। সে সময় গরু আমদানির বৈধ কাগজ উপস্থাপন করতে পারেননি সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন। চলতি বছরের শুরুতে কোন প্রক্রিয়ায় সরকারের এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরু সাদিক অ্যাগ্রোকে দেয়া হয়েছে, সেটিসহ অন্যান্য বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে দুদকের টিম। অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০২১ সালে অবৈধভাবে ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি করে সাদিক অ্যাগ্রো। সেগুলো পরিচর্যার জন্য কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হলেও গত এপ্রিলে রমজান মাসে কয়েকটি শর্ত দিয়ে গরু জবাই করে বিক্রির দায়িত্ব নেন সাদিক অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদে একই রকমের গরু বিক্রির অভিযোগ পাওয় যায় সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে। তাই সাদিক অ্যাগ্রোকে দেয়া ব্রাহমা গরুগুলো জবাই না করে প্রদর্শন করে বিক্রি করা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে এ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এছাড়া ২০২৩ ও ২০২৪ সালের প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীতে প্রকাশ্যে ইমরান ব্রাহমা জাতের নিষিদ্ধ গরু উঠিয়েছিলেন। এসব গরু কোথা থেকে এলো সেই তথ্যের খোঁজেই গতকাল সোমবার সাভার কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান পরিচালনা করে দুদক। পাশাপাশি সাদিক অ্যাগ্রোর সঙ্গে এখানকার কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সাদিক অ্যাগ্রোর কর্ণধার ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে দেশে নিষিদ্ধ গরু আমদানিসহ কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে জব্দ থাকা ব্রাহমা গরুগুলো প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিজের আয়ত্তে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত রমজানে এসব গরু ২৮০ টাকা মূল্যে মাংস বিক্রি করার শর্তে ইমরানকে দেয়া হয়েছিল। তবে ইমরান সুলভ মূল্যে বিক্রি না করেই গরুগুলো তার খামারে রেখে দেন। এছাড়াও নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু কেন্দ্রীয় গোপ্রজনন ও দুগ্ধ খামার থেকে সংগ্রহ করে কোটি টাকা দাম হাঁকিয়ে বাজারে তোলে বলে অভিযোগ ওঠে।
উল্লেখ্য গত রমজান মাস উপলক্ষে সুলভ মূল্যের মাংস বিক্রির জন্য অবৈধ প্রক্রিয়ায় আমদানি করা জব্দকৃত ব্রাহমা জাতের গরুর মাংস বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে নিলামে উচ্চবংশীয় গরু বলে সেগুলো বিক্রির জন্য নিয়ে যান সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় সরকারের এই প্রতিষ্ঠান থেকে ব্রাহমা জাতের গরুগুলো সাদিক অ্যাগ্রোকে দেয়া হয়েছে, সেসবসহ অন্যান্য বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছে দুদক।

সাভারে সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে ১০টি নিষিদ্ধ ব্রাহমা ও ১৫ লাখ টাকার ছাগল
এদিকে ডেইরি ফার্মে দুদকের অভিযান শেষে বিকেলে সাভারের ভাকুর্তা এলাকায় অবস্থিত সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে পাওয়া গেছে আমদানি নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরুর বাছুর। মূল সড়ক থেকে খাল দখল করে নির্মাণ করা রাস্তা দিয়ে অনেকটা দূরে বানানো খামারে গোপনেই পালন হচ্ছিল এসব গরু। ওই খামারে অভিযান চালিয়ে বাছুরগুলো জব্দ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে তিনটি ব্রাহমা জাতের গাভী, ৭ থেকে ১০ মাস বয়সী ৭টি ব্রাহমা জাতের গরুর বাছুর পাওয়া যায়। এছাড়াও পাওয়া যায় আলোচিত সেই ১৫ লাখ টাকার ছাগলটিও। অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা সাদিক অ্যাগ্রোর সাভারের খামারে অভিযান চালিয়ে তিনটি ব্রাহমা জাতের গাভী ও সাতটি ব্রাহমা জাতের বাছুর পেয়েছি। এসময় কাপড় দিয়ে ঘিরে রাখা একটি ছোট কক্ষে আলোচিত সেই ১৫ লাখ টাকা দামের সেই ছাগলটিও পাওয়া গেছে। এখান থেকে আমরা বেশ কিছু খাতা ও নথিপত্র জব্দ করেছি। যেহেতু ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি ও উৎপাদন নিষিদ্ধ সেহেতু এই গরুগুলোর ব্যাপারে আমাদের কর্তৃপক্ষকে জানাবো এবং সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্র জানা যায়, সাভারের ভাকুর্তা এলাকায় অবস্থিত সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে ১০টি উট ও দু’টি ঘোড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির দুই শতাধিক গরু রয়েছে। এছাড়াও খামারে রয়েছে কয়েক হাজার হাঁস, মুরগি, কবুতরসহ বেশ কিছু পালন নিষিদ্ধ হাঁস। ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় সাদেক অ্যাগ্রোতে উচ্ছেদের পর সেখানকার কিছু ভাঙা শেড, মিষ্টি তৈরির সরঞ্জামসহ বেশ কিছু এসি ও সাইনবোর্ড দেখতে পাওয়া যায়।
সাদিক অ্যাগ্রোর খামারটির দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার জাহিদ খান বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। এখানে মূলত দুধ উৎপাদন করে প্রতিদিন ঢাকায় সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে খামারটি গাভী ও বাছুর মিলিয়ে দুই শতাধিক গরু, ১২টি উট ও দুটি ঘোড়াসহ বেশ কিছু হাঁস-মুরগি রয়েছে। এগুলোর দেখাশুনার জন্য আমিসহ প্রায় ৩৫ জন কর্মী কাজ করছি। আগে এখানে কোনো নিরাপত্তাকর্মী না থাকলেও গতকাল সকাল থেকে সিকিউরিটি গার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক একমাস আগে একবার এসেছিলেন। এবার কোরবানির ঈদের বেতনও আমাকে দেয়া হয়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement