ইতিবাচক পথে ফেরাতে কেনার চাপে পুঁজিবাজার
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৯ জুন ২০২৪, ০০:০০
- ডিএসইর মূলধন ফিরেছে ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি
- পুরো সপ্তাহে বিক্রি বেড়েছে ৯২০ কোটি টাকা
ঈদের ছুটির পরও পুঁজিবাজার তেমনটা ইতিবাচক পথে ছিল না। তবে গেল সপ্তাহে বাজারটা ছিল ইতিবাচক পথে। এখনো শেয়ারের প্রত্যাশিত দর না থাকায় বিনিয়োগকারীরা ছাড়তে চাচ্ছে না। যার কারণে পুরো সপ্তাহটা জুড়ে বাজারে ক্রেতার চাপ অনেক বেশি ছিল। কিন্তু তারা শেয়ার কিনতে পারেনি। কারণ বিক্রেতা ছিল খুবই নগণ্য। ডিএসইতে ৭৮ শতাংশ ক্রয় চাপে বিপরীতে বিক্রির চাপ ছিল মাত্র ২২ শতাংশ। আবার ২৯ শতাংশ বিক্রেতা থাকলেও সবাই এখন শেয়ার ছাড়তে নারাজ। ১২ শতাংশই বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। হারানো সূচকগুলো ফিরে পেয়েছে দুই পুঁজিবাজারই। তবে গত বছরের তুলনায় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এখনো ৮৯১ পয়েন্ট কম রয়েছে। ডিএসইর ৯২০ কোটি টাকা বেচাকেনা বৃদ্ধিতে বাজারমূলধন ফিরেছে ১৭ হাজার ৮৫৮ কোটি ২১ লাখ টাকা বলে ডিএসইর লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বাজার বিশ্লেষক রয়্যাল ক্যাপিটালের পর্যবেক্ষণ হলো, শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক বিদায়ী সপ্তাহেও ২.১২ শতাংশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আসন্ন চূড়ান্ত বাজেট, রাজস্বনীতি, অর্থবাজারের সমাপনী, মুদ্রানীতি এছাড়া এডিবির তৃতীয় ট্রান্স লোন অনুমোদন, এডিবির বাজেটসহায়ক লোন এবং পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের বিপরীতে কর রেয়াত পাওয়ার ইস্যুতে পুরোনোর পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগকারীদের বাজারে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে।
ডিএসইর সাপ্তাহিক লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইতিবাচক পথে ফেরাতে ক্রেতা বা বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার জন্য আগ্রহ দেখায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে শেয়ারগুলো যে পরিমাণ দর হারিয়েছে তাতে বিনিয়োগকারীদের বেশির ভাগই বর্তমান দরে শেয়ার ছাড়ছে না। ফলে যেখানে আগে ৩০ কোটির বেশি শেয়ার বেচাকেনা হতো, সেখানে কমে ১৪ কোটিতে ঠেকেছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় ডিএসই প্রধান সূচক-ডিএসইএক্স বিদায়ী সপ্তাহে ১১১.২৮ পয়েন্ট ফিরে পেয়ে এখন পাঁচ হাজার ৩৫৫.৪১ পয়েন্টে। তবে গত বছর একই সময়ে এই সূচকটি ছিল ছয় হাজার ২৪৬.৫ পয়েন্টে। ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে ৪৭.০৯ পয়েন্ট ফিয়ে পেয়ে এখন এক হাজার ৯২২.৫৭ পয়েন্টে। গত বছরের দুই হাজার ৯৩.৮৩ পয়েন্টে থেকে পিছিয়ে আছে। ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক-ডিএসইএস ৩৭.৪৬ পয়েন্ট ফিরে পাওয়ায় এখন এক হাজার ১৮৩.৫২ পয়েন্টে। গত বছর একই সময়ে এটি ছিল এক হাজার ৩৬৪.১৩ পয়েন্ট। আর এসএমই সূচক ৬৯.৩৩ পয়েন্ট ফিরে পাওয়াতে এটি এখন এক হাজার ৫৫২.৭০ পয়েন্টে। তবে এটি গত বছরের তুলনায় প্রায় তিন শ’ পয়েন্ট এগিয়ে আছে। লেনদেনে গত সপ্তাহে অংশ নিয়েছে ৪১২টি কোম্পানি। এর মধ্যে তিন শ’টির দর বেড়েছে, ৬৪টির দর কমেছে, ৩২টির দর অপরিবর্তিত ছিল এবং ১৬টির লেনদেন হয়নি।
লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গেল সপ্তাহে ৭৩ কোটি ৮০ লাখ শেয়ার, মিউচুয়ার ফান্ড ও বন্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট দুই হাজার ৮০২ কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজার টাকায়। যেখানে ঠিক আগের সপ্তাহে সাড়ে ৫১ কোটি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড বেচাকেনা হয় এক হাজার ৮৮২ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে মোট লেনদেন বেড়েছে ৯১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। পুরো সপ্তাহে ২২ কোটি ৩০ লাখ শেয়ার এবং ৯১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা আগের সপ্তাহের তুলনায় বেশি লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহে দৈনিক গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। গড়ে লেনদেন ৪৮.৮৭ শতাংশ। সার্বিকভাবে ইতিবাচক পথে থাকায় ডিএসইর বাজারমূলধন ফিরেছে ২.৭৭ শতাংশ বা ১৭ হাজার ৮৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহান্তে ডিএসইর বাজারমূলধন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৬১ হাজার ৫০৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। তার আগের সপ্তাহে ছিল ছয় লাখ ৪৩ হাজার ৬৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
আর চট্টগ্রাম স্টকের সবগুলো সূচকই গড়ে দেড় শতাধিকের বেশি হারে পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। তবে প্রধান সূচক সিএএসপিআই এক হাজার ২০১.৭৭ পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। ফলে তার আকার এখন ১৫ হাজার ৮৮.৫৯ পয়েন্ট। পুরো সপ্তাহে শেয়ার বেচাকেনার পরিমাণ আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। আট কোটি এক লাখ ৪০ হাজার ৬৮০টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৩০৪ কোটি ৪২ লাখ ৫২ হাজার ৯৪ টাকা বাজারমূল্যে। লেনদেন হওয়া ৩২৭টি কোম্পানির মধ্যে দরবৃদ্ধিতে ১৬৯টি, দরপতনে ১২৬টি এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ৩২টি। এখানে বাজার অংশীদারিত্বে এখনো এ শ্রেণীর শেয়ার শীর্ষে। এ শ্রেণীর অংশীদায়িত্ব হলো ৬৯.৪৯ শতাংশ, বি শ্রেণীর ২৯.৪৯ শতাংশ, এন শ্রেণীর ০.৭৩ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর হলো ০.২৮ শতাংশ।
রয়্যাল ক্যাপিটাল বাজার বিশ্লেষণে বলছে, এক সপ্তাহে টার্নওভার ৬০.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ২৫২টি শেয়ারের বাজারমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৮৭টি শেয়ার এর বাজারমূল্য হ্রাস পেয়েছে। বাজারমূল্যের ভিত্তিতে ১৬টি সেক্টর এই সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মধ্যে শীর্ষ লাভবান হলো, সিমেন্ট, টেলিকম ও পেপার খাত। দু’টি সেক্টর এই সপ্তাহে হ্রাস পেয়েছে, যার মধ্যে শীর্ষ লোকসানে ছিল ভ্রমণ ও জ্বালানি খাত। মূল্য ও লেনদেনের দিক থেকে সার্বিকভাবে ইউনিলিভার সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। বিএসইসির পদক্ষেপসহ সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলা যায় যে, আগামী সপ্তাহে বাজারের সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পাশাপাশি মাঝারি পরিমাণে লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা