১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রাজশাহীর মেয়রকে অভিযুক্ত করে এমপি শাহরিয়ারের বক্তব্যে তোলপাড়

বাঘায় আ’লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহতের দাফন সম্পন্ন
-

দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলের (৫০) নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বাঘা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে উপজেলার নিজ গ্রাম গাওপাড়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
এ দিকে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুলের লাশ সামনে রেখে নামাজে জানাজার আগে স্থানীয় এমপি শাহরিয়ার আলমের বক্তব্যে ক্ষমতাসীন দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বাবুলের জানাজা থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকারকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। অনিল কুমার সরকারের সাথে যখন এ ঘটনা ঘটে, তখন পাশেই বাবুলের লাশ সামনে নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের এমপি ও বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম।
বাবুলের মৃত্যুর জন্য তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এবং বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলুকে অভিযুক্ত করেন। এসময় শাহরিয়ার আলম আরো বলেন, খুনি আক্কাছ (বাঘা পৌরসভা মেয়র), খুনি মেরাজ (ইউপি চেয়ারম্যান)। তাদের পেছনে মদদদাতা আছে। দুই বছর আগে আক্কাছ বহিষ্কৃত হয়েছিল আওয়ামী লীগ থেকে। খায়রুজ্জামান লিটন নিজের মুখে সেই কথা এখানে বলেছিলেন। এস এম কামাল বলেছিলেন, সে বহিষ্কৃত। এই ঘোষণার সাত দিনের মাথায় খায়রুজ্জামান লিটনের গাড়িতে আক্কাছ ও মেরাজকে ঘুরতে দেখা গেছে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা জবাব চাই, আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে। লায়েব উদ্দিন লাভলুর কাছে জবাব চাই, সে কেন আজ পলাতক? খুনের মামলায় দু’জন সশরীরে উপস্থিত ছিল। পেছন থেকে মদদদাতা হিসেবে আসাদুজ্জামান আসাদ, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান এবং লায়েব উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব। আমাদেরও দায়িত্ব আছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার গণমাধ্যমকে জানান, তাকে জানাজার স্থান থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিহত বাবুলকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি ফুলের ডালাও নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটিও মরদেহে দিতে দেয়া হয়নি। অনিল কুমার সরকার বলেন, আমাকে দেখে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ মোল্লা অপমানজনক কথা বলেন। আমাকে বলা হয়, আপনি এখানে কেন? আপনি বেরিয়ে যান।
জানাজায় শাহরিয়ার আলমের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে জানতে চাইলে এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ গণমাধ্যমকে বলেন, বাবুল ত্যাগী নেতা। আমার হাতেই তৈরি। আহত হওয়ার পর থেকেই সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রেখেছি। হাসপাতালে গিয়েছি। তার মৃত্যু আমাদের কাছে দুঃখজনক। তার খুনের সাথে যারাই জড়িত থাকুক, সবার বিচার হওয়া উচিত। তিনি বলেন, এমপি শাহরিয়ার আলম আমাদের মদদাতা হিসেবে উল্লেখ করে সাতদিনের কলরেকর্ড তুলতে বলেছেন। আমি ডিআইজি-এসপিকে ফোন করে বলেছি, সাতদিন না, সাত মাসের কল রেকর্ড তুলে দেখেন।
আসাদ বলেন, এ মামলার যারা আসামি তারাও দলের জন্য ত্যাগী। কিন্তু বাবুল হত্যার বাদি হলো হাইব্রিড আওয়ামী লীগ। সব বাদ দিয়ে হাইব্রিড কেন বাদি? শাহরিয়ার সাহেব যা বলেছেন, তা তাকে প্রমাণ করতে হবে, তা না হলে তাকেও মামলার মুখোমুখি হতে হবে।
শাহরিয়ারের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বাবুল যখন ছাত্রনেতা, তখন থেকেই তাকে আমি পাশে পেয়েছি। বাবুল সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা ছিলেন, আমার অনেক ¯েœহভাজন ছিলেন। আমি আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই তাকে পাশে পেয়েছি। তিনি নিবেদিত প্রাণ আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করার মতো নিন্দনীয়-নৃশংস ঘটনার সাথে আমার কোনোভাবে জড়িত থাকার কোনো কারণ নেই, কোনো সুযোগ নেই, যুক্তিও নেই। মরহুমের নামাজে জানাজায় আমাকে দায়ী করে, সরাসরি আমার নাম ধরে, আমার দলীয় পদ উল্লেখ করে, আমার পাশাপাশি আমাদের আরেকজন এমপি আসাদুজ্জামান আসাদসহ আরো কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বাঘা-চারঘাটের বর্তমান এমপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঈর্ষাপরায়ণভাবে এ রকম উক্তি করতে পারেন, সেটা আমার বোধগম্য নয়।


আরো সংবাদ



premium cement