১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর বাসার লিফটে কর্মকর্তাকে মারধর

বাতিল হলো নতুন পদায়ন
-

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো: আব্দুর রহমানের বাসার লিফটে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) মলয় কুমার শূরকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছে আরেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় করা হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর পরীবাগ এলাকার দিগন্ত টাওয়ারে মন্ত্রীর বাসার লিফটে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে অভিযোগ ওঠার পর ‘হামলাকারী’ কর্মকর্তা অধিদফতরের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (লিভ, ডেপুটেশন অ্যান্ড ট্রেনিং রিজার্ভ) মো: আজিজুল ইসলামের নতুন পদায়ন বাতিল করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গত শুক্রবার এজাহার দাখিল করেন মলয় কুমার। সেটি মামলায় রূপান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। তবে আসামি ডা: আজিজুলকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রশাসনিক বিষয়ে দিকনির্দেশনার জন্য প্রাণিসম্পদমন্ত্রী তার বাসভবন দিগন্ত টাওয়ারে মলয় কুমারকে আসতে বলেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৮টার সময় মন্ত্রীর বাসায় যান তিনি। কাজ শেষে সোয়া ৯টার দিকে টাওয়ারের লিফটে নিচতলায় নামেন। এ সময় আজিজুল লিফটের সামনে আগে থেকেই ভারী কোনো বস্তু নিয়ে অবস্থান করছিলেন। লিফটের দরজা খোলার সাথে সাথে মলয় শূরকে ধাক্কা দিয়ে লিফটের ভেতর ফেলে দেন এবং হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা ও নাকে আঘাত করে জখম করেন। মলয় চিৎকার করলে নিরাপত্তাপ্রহরীরা এগিয়ে আসেন। তখন ভয়ভীতি দেখিয়ে ও জীবননাশের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যান আজিজুল। এরপর মলয়কে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তার মুখমণ্ডল ফেটে যাওয়ায় সেলাই দিতে হয়েছে ও স্থায়ী ক্ষত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এ ছাড়া বুক ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে।
মলয় কুমার বলেন, মন্ত্রীর সাথে আলোচনা শেষে ফেরার পথে লিফট থেকে নামতে যাব, তখনই আজিজুল আমাকে অতর্কিত আক্রমণ করেন। হত্যার উদ্দেশ্যে কোনো ভোঁতা বস্তু দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। এ ঘটনার সাথে তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের আরেক পরিচালক (বাজেট) ডা: বরুণ কুমার দত্তও জড়িত বলে অভিযোগ করেন ডা: মলয় কুমার শূর।
এ বিষয়ে কথা বলতে আজিজুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করাথহলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।
ডা: বরুণ কুমার দত্ত নয়া দিগন্তকে বলেন, তিনি কিভাবে এ ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে বক্তব্য দেয়? আমি তো তার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করব। ডা: আজিজের সাথে তার (ডা: মলয় কুমার শূর) দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব। এ কারণে হয়তো এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু আমাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জড়াচ্ছে। আবার দেখেন, মামলায় কিন্তু আমাকে আসামি করেনি। আমার পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। সামনে হয়তো বড় পদের (মহাপরিচালক) জন্য আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন তিনি (শূর)। আসলে এসবের সাথে আমি জড়িত নই।
নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, কয়েক মাস আগেও সদ্য সাবেক ডিজির রুমে এ রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় ডা: আজিজ। সাবেক ডিজির সাথে মলয় কুমার শুরকে তখন দায়ী করেন ডা: আজিজ। উভয়পক্ষ তখন মামলা পর্যন্ত করেন। এ ঘটনায় ডা: আজিজের দুই ধাপ বেতন অবনমন করা হয়। তার বরখাস্তের শাস্তি প্রত্যাহার করে পদায়ন দেয় মন্ত্রণালয়। তবে ভালো পদায়ন না হওয়ার ক্ষেত্রে ডা: শূরকে দায়ী করা হয় বলে আজিজের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়।
হামলার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে মলয় কুমার শূর বলেন, আজিজুল ইসলামকে মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার পরিচালক পদমর্যাদার একটি পদে পদায়ন করে। যেহেতু তিনি (মলয়) প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন), তাই এ বিষয়ে মন্ত্রীকে মতামত দিয়েছিলেন। বিভাগীয় মামলায় শাস্তিপ্রাপ্ত অবস্থায় আজিজুলের নতুন পদায়ন হয়। আইন অনুযায়ী তিনি কথা বলেছেন। এটা কারো পক্ষে যেতে পারে, বিপক্ষেও যেতে পারে। এ কারণে আজিজুল তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে থাকতে পারেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে মন্ত্রী আবদুর রহমানকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে ঘটনাটি সম্পর্কে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে এ বিষয়ে লিখিত প্রতিবেদন চেয়েছি। প্রতিবেদন পেলে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল