চান্দিনায় বেতন ও বোনাসের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ
২০ কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট- চান্দিনা (কুমিল্লা) সংবাদদাতা
- ১৫ জুন ২০২৪, ০০:০৫
বেতন ও বোনাসের দাবিতে কুমিল্লার চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে ‘ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট লি.’ নামের একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের অন্তত ২০ কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ঈদ যাত্রায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রী ও চালকরা।
শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া অবরোধ চলে টানা দেড় ঘণ্টা। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সকল বেতন-বোনাস পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি এবং প্রশাসনের উপস্থিতিতে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস নিশ্চিত করার আশ্বাসে দুপুর সাড়ে ১২টায় মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেয় শ্রমিকরা।
‘ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট’-এর একাধিক বিক্ষুব্ধ শ্রমিক জানান, আমরা পেটের দায়ে গার্মেন্টে চাকরি করি। এই গার্মেন্টে সব সময়ই এক মাসের বেতন আটকে রাখা হয়। আর বছরের কয়েকবার তিন-চার মাসের বেতন আটকে রাখা হয়। মাসে ৯০ ঘণ্টা ওভারটাইম করলেও ৩০-৩৫ ঘণ্টার বেতন দেয়, বাকি ওভারটাই কেটে নেয় তারা। ঈদের আর মাত্র দুই দিন বাকি, এখনো আমাদের দুই মাসের বেতন বকেয়া এমনকি বোনাসও দেয়া হয় নাই। আমরা ঈদ করব কিভাবে?
একাধিক শ্রমিক জানান, বেতন না পেয়ে বাধ্য হয়ে আমরা মহাসড়কে এসেছি। এখানে আসার পর পুলিশের সাথে মালিক পক্ষের গুন্ডা বাহিনীও আমাদের মারধর করেছে। আমাদের এক নারী শ্রমিকসহ তিনজনকে বেধরক মারধর করেছে তারা। তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক শ্রমিক জানান, ডেনিম প্রসেসিং প্লান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ছোট ভাই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আলমগীর হোসেনের নির্দেশেই শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধে করেছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত টাকা ছাড় না পেলে শ্রমিকদের বেতন আটকে রেখে পরিকল্পিতভাবে শ্রমিকদের মহাসড়কে নামিয়ে দেন গার্মেন্টের মালিক পক্ষ।
এ দিকে দেশের লাইফ লাইন হিসেবে খ্যাত ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক টানা দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকায় উভয় পাশে অন্তত ২০ কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার কাবিলা থেকে দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়। অবরোধে আটকে থেকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো যাত্রী ও চালক-শ্রমিকদের। খুব বেশি বেকায়দায় পড়েছেন রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, বিদেশগামী যাত্রী ও হাটের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া গরুবাহী ট্রাক চালকরা।
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার বিদেশগামী যাত্রী বিল্লাল হোসেন জানান, বেলা ২টার মধ্যে আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছতে হবে। দ্রুত পৌঁছার জন্য প্রাইভেটকার ভাড়া নিয়ে এসেছি। কিন্তু যানজটে আটকে পড়ে চান্দিনাতেই দেড়টা বেজেছে। কখন পৌঁছতে পারব কিছুই বুঝতেছি না।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা গরুবাহী ট্রাক চালক আনোয়ার হোসেন জানান, গরু নিয়ে চট্টগ্রাম যাব। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে যানজটে আটকে আছি। এমন রোদে গরুগুলোও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহনের যাত্রী শাহানা পারভীন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শ্রমিকরা চাকরি করেন গার্মেন্টে, যদি তাদের বেতন-বোনাস না দেয়া হয় তাহলে তারা গার্মেন্টে বিক্ষোভ করবে। কিন্তু তারা মহাসড়কে উঠে হাজারও মানুষকে কেন দুর্ভোগে ফেলেবে? মহাসড়কে চলাচলরত গাড়ি চালকরা কি তাদের বেতন দিবে? এসব ঘটনায় প্রশাসন আরো কঠোর হওয়া প্রয়োজন।
ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট লি.-এর পরিচালক মো: আলমগীর হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাবের মো: সোয়াইব জানান, আজকের মধ্যেই (শুক্রবার) তাদের বেতন ও বোনাস নিশ্চিত করা হবে। আমরা অনেক চেষ্টার পর শ্রমিকদের তা বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে তাদেরকে সরিয়ে নিয়েছি। চান্দিনা থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে।
চান্দিনা-দাউদকান্দি সার্কেলের অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এনায়েত কবির সোয়েব জানান, অনেক চেষ্টার পর শ্রমিকদের সরিয়ে নিয়ে যান চলাচল শুরু করেছি। কিন্তু দেড় ঘণ্টায় তীব্র যানজট হওয়ায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে। আমাদের পুলিশ কাজ করছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা