১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

এক ছাতায় কোরবানির রকমারি পশু

সাদিক অ্যাগ্রোতে কোরবানির পশু দেখছেন ক্রেতারা : নয়া দিগন্ত -

সুসজ্জিত গেইট। নান্দনিক সাজ। নানা রঙের কাপড়ের সামিয়ানা। রঙিন আলোর ঝলকানি। ঝুলছে দামি ঝাড়বাতি। আলো ঝলমল চারিদিক। ক্রেতার বসার জন্য সুন্দর ব্যবস্থাপনা। আছে চা-কফি, নাস্তা। রাত যত গভীর হয় ক্রেতার সারি তত বাড়ে। সাধারণ ক্রেতার পাশাপাশি, দামি গাড়ি হাঁকিয়ে অভিজাত এলাকা থেকেও স্বপরিবারে মনোরম পরিবেশে কোরবানির পশু দেখতে আসছেন। নেই মানুষের ঠেলাঠেলি। হাঁটের মতো কাদাপানি মাড়াতে হয় না। কোরবানির পশু বাছাইয়ের ঝক্কিও নেই। পাকা মেঝেতে ঘরোয়া পরিবেশে দেখা যাচ্ছে তাদের। প্রয়োজনে দামি মডেলের মতো হাঁটিয়ে দেখারও ব্যবস্থা আছে। গবাদি পশুর দশাসই শরীর, আর অভিজাত দেমাগের কারণে একাধিক রশি লাগিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। আস্ত গরুর ওজন হচ্ছে ডিজিটাল মেশিনে। আছে বদলের সুযোগও। কি নেই? গরু, মহিষ, খাসি, দুম্বা, উট, ভেড়া, গাড়ল, গয়াল, পাঙ্গানুসহ হাজারো পশুর বিশাল সমারোহ।
পবিত্র ঈদুল আজহার জন্য গবাদিপশু কেনার এমন আয়োজন আছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাদিক এগ্রোতে। সাধারণ ক্রেতার পাশাপাশি সৌখিন-অভিজাত ক্রেতাদের এই খামার গত কয়েক বছরে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। লাখ থেকে কোটি টাকার গরু, ১৫ হাজার টাকা থেকে ১২ লাখ টাকার খাসিও আছে সেখানে। পছন্দ হলেই নিমিষেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতা। আবার দাম দর ঠিক করে অগ্রিম দিয়ে রেখেও যাচ্ছেন। ঈদের দিন বা আগের দিন পৌঁছে যাবে ক্রেতার ঠিকানায়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশে বেড়িবাঁধ রাস্তা দিয়ে গাবতলীর দিকে একটু এগোতেই প্রধান সড়কে চোখে পড়ে সাদিক অ্যাগ্রোর বিশাল গেট। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, নানা প্রজাতির গবাদিপশু। এই খামারের পাশে একটু দূরে তাদের আরো দুটি খামার আছে। এ ছাড়া দেশের কয়েকটি জেলায়ও তাদের রয়েছে খামার। তাদের খামারের গরু হাটে নেয়া হয় না। খামার থেকেই কিনে নিয়ে যান ক্রেতারা।
সাদিক এগ্রোর কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন জানান, ৪০০ কেজির নিচে এমন গরুর লাইভ ওয়েট বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজি হিসেবে। ৫০০ কেজির মধ্যে ওজন, এমন গরু বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি হিসাবে, ৬০০ কেজির মধ্যে ওজনের গরুর লাইভ ওয়েট হিসেবে ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর ৬০০ কেজির উপরে সাইজের গরু বিক্রি হচ্ছে পিস (থোক) হিসেবে।
সাদিক এগ্রো বলছে, তাদের এখানে সব শ্রেণির ক্রেতাই আসেন। দীর্ঘ দিনের আস্থার কারণে ক্রেতাদের সাথে একটা পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। সাদিক এগ্রো’র গরু কোনো হাটে নেয়া হয় না। এখান থেকেই বিক্রি করা হয়। অনলাইনেও বিক্রি হয়। কোনো ডেলিভারি চার্জ নেয়া হয় না। ক্রেতার বাসায় ফ্রিতেই পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বও তাদের। মালিকের উপস্থিতিতে পশু কোরবানি দিয়ে গোশত বাসায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাও আছে এখানে।
সাদিক এগ্রোর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, আমার খামারে সব বাজেটের ক্রেতার জন্যই কোরবানি উপযোগী পশু আছে। ১৫ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দামের ছাগল আছে। শুধু ছাগল নয়, গরু, মহিষ, দুম্বা, উট, ভেড়া, গাড়ল, গয়াল, পাঙ্গানুর গরুসহ সাড়ে ৩ হাজার পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আমাদের কাছে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় কোটি টাকা গরু আছে। ১৫ হাজার টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকার খাসি আছে। ৩০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা বেড়া আছে। দেড় লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার দুম্বা আছে। দেড় লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা দামের ভুট্টি গরু আছে। সৌখিন মানুষের কথা চিন্তা করে বড় গরুর পাশাপাশি স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ছোট গরুও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে কোটি টাকার গরু আছে দুটি, আর ১৫ লাখ টাকার খাসি আছে একটি। তিনটিই বিক্রি হয়ে গেছে।
ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের এই সভাপতি বলেন, প্রাণী প্রদর্শনীতে কোটি টাকার গরুটি উঠানোর পর অনেকে না জেনে ফেসবুকে নানা রকম নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এখন গরুটি বিক্রি করতে পেরে ভালো লাগছে। বাংলাদেশেও যে দামি গরুর ক্রেতা আছে তা কোটি টাকার গরু বিক্রির মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বে এর চেয়েও দামি গরুও আছে। গত মার্চে ব্রাজিলে একটি গাভী ৫২ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমাদের কোটি টাকার গরু মোস্ট লেস কোলেস্টেরল যুক্ত মাংস উৎপাদনকারী। এই গরুর গোশত খেলে কোলেস্টেরল কম হবে। গোশতগুলো খুবই উন্নত মানের। বাজারের ৭০০ টাকার গোশতের সাথে এটার তুলনা করা যাবে না। ৫ কেজি দানাদার খেয়ে এই গরু এক কেজি গোশত উৎপাদন করতে সক্ষম। অথচ দেশীয় জাতের গরু ১২-১৭ কেজি দানাদার খাবার খেয়ে এক কেজি গোশত উৎপাদন করে। তা ছাড়া কম খাদ্য খেয়ে দ্রুত বড় হতে পারে। গরুগুলোর গায়ে থাকা রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে গুগলে সার্চ দিলে তার ১১০ বছরের ইতিহাস চলে আসবে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে ছয়টি ব্রাহামা জাতের গরু আছে। এ বছর আমরা তিনটি প্রস্তুত করেছিলাম। তিনটিই বিক্রি হয়ে গেছে। আগামী বছর কোরবানিতে বাকি তিনটি বিক্রি করব। ব্রাহামা জাতের গরু উষ্ণ আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। ফলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এই গরু পালন অত্যন্ত সুবিধাজনক। অত্যন্ত শক্তিশালী এ গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি, আর, মাংসও অত্যন্ত উচ্চমানের।
ব্রাহামার জাত প্রসঙ্গে মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, ব্রাহামা আমাদের উপমহাদেশেরই জাত। ১১০ বছর আগে আমাদের এই অঞ্চলেরই তিনটি গরু আমেরিকানরা নিয়ে গিয়ে ‘ব্রাহামা’ জাত তৈরি করেছে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় ব্রাহামা জাতের গরু খুব ভালো বাড়ে। আমরা এখন ব্রাহামা ব্রিড করছি। দেশের অনেক খামারিই এখন লোকাল ব্রাহামা করছে। সেগুলোর ফলাফলও ভালো। লোকাল ব্রাহামার বৃদ্ধিও ভালো এবং সেগুলো ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। গোশতের চাহিদা পূরণে ব্রাহামা জাতের গরু উৎপাদনে সরকার এক দশক আগে নানা প্রকল্প নেয়। খামারিরা যখন ব্রাহামা গরু পালন করে গোশতের উৎপাদন বাড়াতে থাকেন, তখনই এটি আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়। আমরা সরকারের কাছে ব্রাহামাসহ উন্নতজাত চাই।


আরো সংবাদ



premium cement