০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১, ৫ রজব ১৪৪৬
`
সংবাদ সম্মেলনে বাপা

সরকারের গা-ছাড়া ভাবে পরিবেশ সঙ্কট মারাত্মক হচ্ছে

-

সরকারের গাছাড়াভাবে পরিবেশ সঙ্কট মারাত্মক হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশবাদীরা। এ থেকে উত্তরণে চলতি বছরকেই ‘ঘুরে দাঁড়ানোর বছর’ হিসেবে ঘোষণা করে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাপা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।
‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ণে পরিবেশের গুরুত্ব’ শীর্ষক এ আলোচনায় বাপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মহিদুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ পড়েন বাপার সহসভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব। এর আগে বাপা চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের নিয়ে ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ণ : সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক সম্মেলনের আয়োজন করে। সেই সম্মেলনে যেসব পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ উঠে এসেছিল, সেগুলো পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এই পুস্তিকার সারসংক্ষেপ নিয়েই মূল প্রবন্ধ রচনা করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুস্তিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পরিবেশ রক্ষায় অনেক আইন, নীতি ও পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে মুষ্টিমেয় একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়া হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগ যে দায়সারা ভাবে, গা ছাড়া ভাবে চলছে, তা পরিবেশ সঙ্কটকে মারাত্মক বিপর্যয়কর করে তুলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে নগরায়ণ সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে ২ দশমিক ৬ শতাংশ হারে বন উজাড় হয়েছে, যা বৈশ্বিক হারের চেয়ে দ্বিগুণ। ‘রাইজিং টাইডস, রোরিং ফিউচার্স : দ্য সুন্দরবনস কোয়েস্ট ফর সারভাইভাল-২০২৪’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭৩ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সুন্দরবনে ঘন বনাঞ্চাল কমেছে ২৭ ভাগ। যেকোনো শহরে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা উচিত। কিন্তু ঢাকায় আছে ৮ শতাংশের কম। বুয়েটের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগ এবং ইউএসএইডের জরিপে এসেছে ২০০২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ঢাকায় সবুজ হারিয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

মূল প্রবন্ধে রাজধানীর বায়ুদূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলবায়ুর পরিবর্তনে তাপপ্রবাহে বিভিন্ন স্থানে ‘তাপদ্বীপ’ সৃষ্টি হওয়ার মতো পরিবেশ বিপর্যয়কর বিষয় ও তার প্রভাব তুলে ধরে প্রতিকারের জন্য ছয় দফা সুপারিশ করা হয়।
এসব সুপারিশের মধ্য রয়েছে নগর এলাকাসহ সব সড়ক-মহাসড়কের পাশের বৃক্ষশুমারি করে ডেটাবেজ তৈরি করে উন্নয়নে অজুহাত দিয়ে এসব গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণ করা। বন ও বনভূমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবার জবাবদিহির আওতায় আনা। ‘সবুজায়ন নীতিমালা’র ভিত্তিতে নগর বন সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। ক্রমেই কমে আসা কৃষিজমির সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। নগরে বিদ্যমান খাল, জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করে ‘নীল আন্তসংযোগ’ গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া পরিবেশ রক্ষায় সমীক্ষানির্ভর নীতিমালা প্রণয়ন করে তা কার্যকর করার অবদানের জন্য প্রণোদনা ও লঙ্ঘনের জন্য কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।
পানিদূষণ এবং পুকুর জলাশয় নিয়ে আলোচনা করেন বুয়েটের অধ্যাপক ইশরাত জাহান। বায়ু ও শব্দদূষণ নিয়ে আলোচনা করেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, নগরের পরিবেশ নিয়ে বলেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস। সঞ্চালনা করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির।


আরো সংবাদ



premium cement