১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

শেকলবন্দী গাছ

-

ইংরেজ শাসনামল! শুনলে এখনো অনেকেই আঁতকে উঠতে পারেন। কারণ এ সময় প্রায় ২০০ বছর নিরীহ কৃষক, সাধারণ মানুষের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে ইংরেজরা। তারা কারণে-অকারণে আমাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করত। শুধু মানুষ নয়, ইংরেজ শাসনামলে ইংরেজদের শোষণের শিকার হয়ে শাস্তি পেয়েছিল গাছও! অন্তত এমন একটি কথা পাকিস্তানের লান্ডি কোটালে প্রচলিত রয়েছে।
১৮৮৯ সালের ঘটনা। ভারতবর্ষজুড়ে ইংরেজদের তাণ্ডব চলছে। পাকিস্তানের লান্ডি কোটালে ছিল ইংরেজ সেনানিবাস। সেখানে ইংরেজবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম না থাকায় সেনারা দিন কাটাচ্ছিল আরামে। ভারতবাসীর ওপর নির্যাতন ছাড়া তাদের বিশেষ কোনো কাজ ছিল না সে সময়। মদে ডুবে বুঁদ হয়ে থাকত সেনা কর্তা থেকে শুরু করে সিপাহিরা।
একদিন মাতাল অবস্থায় সেনানিবাসে ফিরছিলেন অফিসার জেমস স্কুইড। হঠাৎ তিনি ভাবলেন, কিছু একটা তার দিকে এগিয়ে আসছে। তিনি ভয় পেলেন এবং সৈন্যদের বললেন, জিনিসটিকে দ্রুত বন্দী করতে। অফিসারের কথা না-শোনার বা ব্যাখ্যা দেয়ার সাধ্য ছিল না কারো। যে কোনো নির্দেশ দ্রুত পালন করাই তাদের কাজ। ফলে সৈন্যরা শেকলবন্দী করল সেই গাছ। গাছটি ছিল বটগাছ।
পরদিন সকালে জেমস দেখলেন তারই নির্দেশে একটি গাছে শেকল পরিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি মনে মনে লজ্জা পেলেও এ নিয়ে আর মাথা ঘামাননি। নির্দেশ দেননি শেকল খুলে ফেলার। ওদিকে নির্দেশ না পেয়ে সৈন্যরাও আর শেকল খোলেনি।
আজ আর ইংরেজ শাসন নেই। ভারতবর্ষ অনেক আগেই মুক্ত হয়েছে। কিন্তু যুগের পর যুগ এখনো গাছটি রয়েছে সেভাবেই। ইংরেজ শাসনামলে এই গাছটি ছিল খোগিখেলি সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির। ইংরেজরা ক্ষমতাবলে দখলে নিয়েছিল সেই জায়গা। তারা ভারতবর্ষ ছাড়ার পর সেখানে বসবাস শুরু করে আফ্রিদি বংশের লোকেরা। সেই আফ্রিদি বংশের লোকেরাও আর গাছের শেকল খুলে ফেলেননি।
গাছের এই শেকলবন্দী অবস্থা মূলত বিশেষ বার্তা দিত স্থানীয়দের। ইংরেজদের শাস্তি কতটা নিষ্ঠুর এবং খারাপ হতে পারে বিষয়টি স্মরণে রাখতেই স্থানীয়রা গাছটি শেকলমুক্ত করেনি। আঘাত কিংবা হত্যা না করেও মানুষকে ভয় দেখাতে বিশেষ প্রতীক হিসেবে কাজ করত সেই শেকলবন্দি গাছ। ইন্টারনেট।


আরো সংবাদ



premium cement