১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বাজেট নিয়ে বিসিআইর প্রতিক্রিয়া

শিল্প টিকিয়ে রাখতে বাজেটে নির্দেশনা দেখছি না

-


জাতীয় বাজেট ঘোষণা পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেছেন, বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি, কর জিডিপি অনুপাত না বাড়া ও রিজার্ভ ক্ষয় হওয়ার মতো অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য বাজেট প্রণয়ন খুবই কঠিন একটা কাজ। এ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং হবে। বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রধান লক্ষ্য বলা হলেও টানা ১৪ মাস ধরে ৯ শতাংশের ওপরে থাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পর্যাপ্ত পদক্ষেপ প্রস্তাবিত বাজেটে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

আমরা বাজেটে বর্তমান শিল্পগুলোকে টিকিয়ে রাখার মতো কোনো নির্দেশনা দেখতে পাচ্ছি না। দেশের শিল্প খাত বর্তমানে একটি চ্যালেঞ্জিং সময় অতিবাহিত করছে। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানায়, ব্যবসায়িক সংগঠনটি। আরো বলা হয়, দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ৬০-৭০ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে সব প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে নিয়মিত কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন সেবা পাচ্ছে না শিল্পগুলো। সরকারের সঙ্কোচন নীতির এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ড্রাই আপ পলিসির কারণে ব্যাংকগুলো বন্ডে বিনিয়োগের দিকে উৎসাহিত হচ্ছে আবার সরকারও ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে। ব্যাংকের উচ্চ সুদহার এবং তা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। নতুন বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে এ বছর প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬.৬ শতাংশ। বেকারত্বেও হার বৃদ্ধি পাচ্ছে নতুন করে প্রায় ১ লাখ বিশ হাজার বেকার হয়েছে। এর ফলে বর্তমান শিল্পগুলো কস্ট অব ডুইং বিজনেস বেড়ে যাচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে গেলে আমদানি বিকল্প শিল্প এবং কিভাবে কারখানাগুলোর সক্ষমতা টিকিয়ে রাখার দিকে লক্ষ রাখতে হবে প্রস্তাবিত বাজেটে এর কোনো দিকনির্দেশনা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

আবার রফতানি খাতে ইপিবির তথ্য অনুসারে দেখা যাচ্ছে, প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ও কাস্টমসের তথ্যে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে না। বিজিএমইএ ও বিকেএমইর তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় রফতানি খাতের অবস্থা আশানুরূপ নয়। অন্য দিকে ইপিজেডের শিল্পে কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানির ক্ষেত্রে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এক দিকে রফতানি আশানুরূপ বৃদ্ধি পাচ্ছে না, রেমিট্যান্সের প্রবাহ কম, রিজার্ভের স্বল্পতার মধ্যে এ ধরনের সিদ্ধান্ত অর্থনীতিকে আরো চাপে ফেলবে। আমরা এ প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি। আমরা রফতানি খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটা দিকনির্দেশনা আশা করেছিলাম এ বাজেটে। বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পের সাথে দেশের মাইক্রো, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে। এমন পরিস্থিতিতে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাইক্রো, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প খাত। প্রস্তাবিত বাজেটে মাইক্রো, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের টিকিয়ে রাখার কোনো দিকনির্দেশনা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।
আমরা পরিবেশ ও জ¦ালানি সাশ্রয় নিয়ে কথা বলি। কিন্তু এবারের বাজেটে দেখছি এলইডি লাইটের ওপর করারোপ করা হয়েছে। আবার দেশে উৎপাদিত এসি ও ফ্রিজের ওপর করারোপ করা হয়েছে। এর ফলে এ খাত ক্ষতির মুখে পড়বে এবং সর্বোপরি চাপ এসে পড়বে ভোক্তার ওপর।

বাজেট ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির অনুপাতে ৪.৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা আশা ব্যঞ্জক। তার পরেও ঘাটতির ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস হতে সংগ্রহ করে হবে। বিসিআই মনে করে সরকারের ব্যয় কমিয়ে এবং বিদেশী উৎস হতে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে ঘাটতি মেটানোর দিকে জোর দেয়া উচিত, যাতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে তুলনামূলক কম হারে ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হয়। এই বিপুল অর্থ যদি ব্যাংক ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া হয় তাহলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে চাপ সৃষ্টি হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে হলে নতুন বিনিয়োগ না এলেও বর্তমান শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে অর্থপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা অত্যন্ত জরুরি।

প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ আয়কর প্রদানে কালো টাকা সাদা করার বিধান রাখা হয়েছে, যা বিসিআই কোনোভাবেই সমর্থন করে না। ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা ছিল, সেটা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় করের সীমা ৫ লাখে উন্নীত করার প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করছি। কোম্পানির জন্য করহার শর্তসাপেক্ষে ২.৫ শতাংশ কমানো হয়েছে, যা আপাতদৃষ্টিতে ইতিবাচক হলেও এই শর্ত প্রতিপালন করা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সম্ভব নয়। কারণ বছরে ৩৬ লাখ টাকা নগদ অর্থে ব্যয়ের শর্ত মানা একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অসম্ভব। আমরা কোনো প্রকার শর্ত ছাড়াই করহার ২.৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করছি। এর ফলে বিনিয়োগ আকৃষ্টে সহায়ক হবে। শর্তসাপেক্ষে এই কর ছাড় শুভংকরের ফাঁকি ছাড়া আর কিছু নয়।


আরো সংবাদ



premium cement