১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

হাওরাঞ্চলে ধানের ভ্যালু চেইন আধুনিকায়নে ইরি-এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রকল্প

-

দেশের হাওর অঞ্চলে ধানের ভ্যালু চেইন বা মূল্য-শৃঙ্খল (উৎপাদন থেকে ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর সমন্বিত প্রয়াস) আধুনিকায়ন ও উন্নত করার জন্য ২০২৪ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত তিন বছরের একটি প্রকল্পে একসাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) এবং এইচএসবিসি বাংলাদেশ। হাওরের দু’টি জেলা সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে এই প্রকল্পের কাজ চলবে।
ইরি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, বিরূপ জলবায়ু সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ধানভিত্তিক উদ্ভাবন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কৃষি উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের মাধ্যমে ধানের মূল্য-শৃঙ্খলের উৎপাদনশীলতা, লাভজনকতা এবং স্থিতিশীলতা বাড়ানো এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় প্রকল্পটি শুরু করতে একটি সূচনা কর্মশালার আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি)। এই প্রকল্পটি সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো : নতুন ধানের জাত, উন্নত ফসল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক বীজ ব্যাংকের পরীক্ষামূলক প্রদর্শনী এবং কৃষকদের প্রশিক্ষিত করতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার।
কর্মশালাটিতে বিভিন্ন সরকারি বিভাগের সম্মানিত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ৬০ জন বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন থেকে বিশেষজ্ঞরা এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত হাওর অঞ্চলগুলো কৃষি ও মৎস্য চাষের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এখানকার জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশ এই দু’টি কাজের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। দেশের সাতটি জেলার (সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ০.৮৭ মিলিয়ন হেক্টর এলাকাজুড়ে মোট ৩৭৩টি হাওর রয়েছে, যা হাওর অঞ্চলের মোট এলাকার ৫৩ শতাংশ।

হাওর অঞ্চলের মোট চাষযোগ্য জমি ১২ লাখ ৬০ হাজার মিলিয়ন হেক্টর, যার মধ্যে ৬৬ শতাংশ হাওরের মধ্যে পড়ে। সেখানে কৃষকরা সারা বছরে শুধু নভেম্বর-মে মাসে মাত্র একটি ফসল, বোরো ধান উৎপাদন করতে পারে। বছরের বাকি সময় চাষযোগ্য জমি গভীর পানির নিচে থাকে। দেশের মোট বোরো ধান উৎপাদনের ১৬ শতাংশ হাওর অঞ্চলে উৎপাদিত হয়। তাই আঞ্চলিক ও জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা, পুষ্টি এবং জীবিকামাধ্যম নিশ্চিত করার জন্যে হাওর অঞ্চলে টেকসই ও স্থিতিশীল ধান উৎপাদন প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাওর অঞ্চলের কৃষকরা প্রধানত বোরো ধান চাষ করে এবং মৎস্য চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতিনিয়ত তাদের দারিদ্র্য, খাদ্য সুরক্ষা, সীমিত সম্পদ প্রাপ্তিসহ বহুবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ধান উৎপাদনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি হিসেবে দেখা দিলেও, একই সাথে আকস্মিক বন্যা এবং অদক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনা কম উৎপাদনশীলতা ও লাভজনকতার ক্ষেত্রে ঝুঁকির সৃষ্টি করে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা এবং জলবায়ু-সহনশীল ধানের ভ্যালু চেইন গড়ে তোলা এই অঞ্চলে খাদ্যনিরাপত্তা, পুষ্টি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাওর অঞ্চলের কৃষকরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন তা মোকাবেলা করার লক্ষ্যে ‘ক্লাইমেট স্মার্ট রাইস ভ্যালু চেইন’ প্রকল্পটি গড়ে উঠেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় প্রধান কার্যক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- উৎপাদনশীলতা ও লাভ বৃদ্ধির জন্য উন্নত ধানের জাতের প্রচার, টেকসই ও জলবায়ু-সহনশীল পদ্ধতির প্রচার, ধান উৎপাদন ব্যবস্থায় যন্ত্রের ব্যবহার, ধানভিত্তিক উদ্ভাবন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, নারী, যুবক এবং নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের মধ্যে থেকে কৃষি উদ্যোক্তার সৃষ্টি ইত্যাদি। এই প্রকল্প ২০২৪ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে তিন বছরে ধানের ভ্যালু চেইনে জড়িত ১০ হাজার অংশগ্রহণকারীকে উপকৃত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) প্রতিনিধি ড. হুমনাথ ভান্ডারী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এইচএসবিসি ব্যাংক’কে অংশীদার হিসেবে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। হাওর অঞ্চলে ধান উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশে আমাদের ধানভিত্তিক কৃষি খাদ্য ব্যবস্থার সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোরও লক্ষ্য রয়েছে, যা জাতীয় খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং অর্থনীতি শক্তিশালী করতে অবদান রাখবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের সহযোগিতা দেয়ার জন্য এইচএসবিসি’কে ধন্যবাদ জানাই।’ তিনি প্রকল্পের কিছু ফলাফলের ওপরও জোর দেন, যার মধ্যে রয়েছে বিকল্প জীবিকার সৃষ্টি, দারিদ্র্যবিমোচন, উন্নত পরিবেশগত স্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্য, লিঙ্গসমতা ও যুবশক্তির ক্ষমতায়ন, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং জলবায়ু সহনশীলতা।

 


আরো সংবাদ



premium cement