১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংকের লকার থেকে ১৪৯ ভরি স্বর্ণ গায়েবের অভিযোগ গ্রাহকের

-


চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার লকার থেকে ১৪৯ ভরি স্বর্ণ গায়েব হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ব্যাংকটির লকার ভাড়া নেয়া এক গ্রাহক। রাবেয়া বারী নামে ওই মহিলা গ্রাহক গত ২৯ মে ব্যাংকের লকার ভল্টে গিয়ে এমন অভিযোগ তুলেন। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে ব্যাংকের লকার থেকে স্বর্ণ চুরির কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া লকারের একটিই চাবি থাকে এবং তা থাকে সংশ্লিষ্ট লকার ভাড়া নেয়া গ্রাহকের কাছে। তবুও গ্রাহকের অভিযোগের বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নিয়ে ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক এস এম শফিকুল মাওলা।

লকার থেকে স্বর্ণ গায়েবের অভিযোগ তোলা রোকেয়া বারী নগরীর চট্টেশ্বরী সড়কের বিটিআই বেভারলী হিলসের বাসিন্দা। গত ২৯ মে ব্যাংকের লকার রুমে গিয়ে তার ভাড়া নেয়া লকারটি খোলা দেখতে পেয়েছেন বলে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জানান। এ সময় তিনি তার বিপুল স্বর্ণালঙ্কার খোয়া যাওয়ার দাবি করেন। তিনি জানান, গত বুধবার দুপুরে তিনি কিছু স্বর্ণালঙ্কার লকার থেকে আনতে যান। এ সময় লকারের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে লকার রুম খুলে দেয়ার অনুরোধ জানান। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মাস্টার কী দিয়ে লকার রুমের প্রধান ফটক খোলার পর তার নির্দিষ্ট লকারের সামনে গিয়ে লকার খোলা পান বলে তার দাবি। পরে তিনি বিষয়টি চকবাজার থানার ওসিকে অবহিত করেন। ওসি ব্যাংকে গিয়ে দেখতে পান লকারে মাত্র ১০-১১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার আছে।

অভিযোগ তোলা মহিলার দাবি অনুযায়ী গায়েব হওয়া স্বর্ণালঙ্কারের মধ্যে রয়েছে ৪০ পিস হাতের চুরি (বড় সাইজ), যার ওজন ৬০ ভরি। গলা ও কানের অলঙ্কার, যার ওজন ২৫ ভরি। ১০ ভরি ওজনের একটি গলার সেট, ২৮ ভরি ওজনের ৭টি গলার চেইন। ১৫ ভরি ওজনের ৪টি আংটি। ৩০ জোড়া কানের দুল, যার ওজন ১১ ভরি।
এ বিষয়ে চকবাজার থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, অভিযোগকারীকে মামলা দায়ের করতে বলেছি। যদি মামলা দায়ের করেন, আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ দিকে গতকাল রোববার দুপুরে ব্যাংকটির ম্যানেজার এস এম শফিকুল মওলা নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের এক গ্রাহক মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ মে তিনি তার লকার চেক করতে গিয়ে দেখেন তিনি যে মালামাল রেখেছেন তা ঠিকমতো পাননি। পরবর্তীতে গ্রাহক আমাদের কাছে মৌখিকভাবে এসে অভিযোগ করেছেন, লকার থেকে ১৪৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার মিসিং। এরপর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহককে বলেছি যেহেতু লকার রুমে গ্রাহক ছাড়া ব্যাংকের কেউ প্রবেশের সুযোগ নেই এবং লকার খোলা বা বন্ধ করার একটি মাত্র চাবি রয়েছে যা থাকে কেবল গ্রাহকের হাতে। কাজেই লকারে উনি কি রেখেছেন, কি নিয়ে গেছেন উনি জানেন। আমরা লকার সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সব সার্কুলার মেনেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের একজন সম্মানিত গ্রাহক অভিযোগ তুলেছেন, সেজন্য আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছি। অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রাহককে জানানোর আশ্বাস দিয়েছি। তিনি জানান, আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে শুধুমাত্র ডিক্লারেশন নেই যে দাহ্য পদার্থ কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র বা অবৈধ কিছু লকারে রাখা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী বাকি কোনো পণ্যের ডিক্লারেশন নেয়ার নিয়ম নেই। আমাদের জানারও সুযোগ নেই কি পণ্য তিনি রেখেছেন বা নিয়ে গেছেন। এর আগে ওই গ্রাহক সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল লকার রুমে গিয়েছিলেন বলেও তিনি জানান। লকারের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যেন- চুরি, ছিনতাই বা ডাকাতির মতো ঘটনা না ঘটে। আমাদের মনে হচ্ছে এখানে চুরি কিংবা ডাকাতির কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দীর্ঘদিনের গ্রাহক যেহেতু অভিযোগ করেছেন আমরা বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নিয়ে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

ইসলামী ব্যাংকের বক্তব্য
ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী ও তার কন্যা নাসিয়া মারজুকা যৌথ নামে ২০০৬ সাল থেকে ব্যাংকের একটি লকার ব্যবহার করে আসছেন। প্রতিটি লকার খোলার জন্য ২টি চাবির প্রয়োজন হয়। যার একটি গ্রাহক ও অপরটি ব্যাংকের কাছে থাকে। গ্রাহকের চাবি ব্যতীত শুধুমাত্র ব্যাংকে রক্ষিত চাবি দিয়ে কোনোভাবেই লকার খোলা সম্ভব নয়। ব্যাংকিং নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহককে তার লকারের মূল চাবি বুঝিয়ে দেয়া হয়। লকারে রক্ষিত মালামাল ও তার পরিমাণ সম্পর্কে একমাত্র গ্রাহক ব্যতীত ব্যাংকার বা অন্য কোনো ব্যক্তির জানার সুযোগ নেই। গত ৮ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে ওই গ্রাহক লকার ব্যবহারের জন্য ব্যাংকে যান। ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রাহকের উপস্থিতিতে মাস্টার কী (চাবি) দিয়ে লকার আনলক করেন। পরবর্তীতে গ্রাহক যথারীতি তার কাছে রক্ষিত চাবি ব্যবহার করে পরিপূর্ণভাবে লকার খুলে তার কাজ শেষে লকার বন্ধ করে ব্যাংকারকে অবহিত করে চলে যান। যেহেতু লকার হোল্ডারের চাবি দিয়ে বন্ধ করা হয় সেহেতু লকার বন্ধ করার সময় নিয়ম মোতাবেক ব্যাংকের কারো উপস্থিত থাকার সুযোগ নেই। একমাত্র তিনিই তার লকার বন্ধ করতে পারেন। উল্লেখ্য, লকার হোল্ডার লকার বন্ধ না করা পর্যন্ত তার চাবি বের করে আনা যায় না। গ্রাহক নির্দিষ্ট লকারে কী নিয়ে গেছেন বা রেখে গেছেন তা ব্যাংকের জানার সুযোগ নেই। গ্রাহক যাওয়ার সাথে সাথে ব্যাংক কর্মকর্তা লকার রুমের মূল ফটক নিয়মমাফিক তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেন।

গত ২৯ মে ২০২৪ তারিখে উক্ত লকার হোল্ডার তার লকার ব্যবহার করতে এসে তার গহনা খোয়া গেছে বলে জানান। অথচ এর আগে তিনি নিজে লকার বন্ধ করে চাবি নিয়ে গেছেন। তারপর লকার হোল্ডার একবার বলেন তার ৩০০ ভরি স্বর্ণ নাই, কিছুক্ষণ পর আবার জানান ১৫০ ভরি স্বর্ণ নাই এবং কিছুক্ষণ পর আবার জানান ১৫০ ভরির মধ্যে অর্ধেক পেয়েছেন, বাকী অর্ধেক পান নাই। তিনি এ ধরনের স্ববিরোধী বিভ্রান্তকর তথ্য প্রদান করেন। কিছুক্ষণ পর চট্টগ্রামের চকবাজার থানার পুলিশ ফোর্স সরেজমিন লকার রুম পরিদর্শন করেছেন। ইতোমধ্যে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট তথ্যানুসন্ধান কমিটি গ্রঠন করেছে। এ কমিটির প্রদত্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement