বিজাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০২ জুন ২০২৪, ০১:৩১
ধর্মনিরপেক্ষতার নামে পৌত্তলিকতা মিশ্রিত নাস্তিক্যবাদী বিজাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে অভিযোগ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এক বৈঠকে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। এ দিকে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তেরও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দলটি।
দলটির আমির ডা: শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মজলিসে শূরার বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে পৌত্তলিকতা মিশ্রিত নাস্তিকতাবাদী শিক্ষা নীতি চালু করে দেশের জনগণের ঈমান-আকিদা ধ্বংস করার জন্য বর্তমান সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ষড়যন্ত্র করে আসছে। এ দেশের জনগণ কখনো বিজাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করবে না। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই তারা বিজাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি জাতির ঘাড়ে চাপানোর ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছে। বর্তমান আওয়ামী সরকারও দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ইসলামী শিক্ষা ও জনগণের ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংস করার যে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে আসছে তা অবশ্যই ব্যর্থ হবে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা উদ্বেগের সাথে আরো লক্ষ করছে, বর্তমান সরকার শুধু আধুনিক শিক্ষাকেই ধ্বংস করছে না, মাদরাসা শিক্ষাকেও ধ্বংস করছে। সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো শুধু মাদরাসা নামের ঘর থাকবে, সেখানে ইসলামী শিক্ষা বলে কিছু থাকবে না। সে জন্যই মাদরাসাগুলোতে বিধর্মী ও বিজাতীয় শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসাগুলোতেও নাচ, গান, অভিনয়, ঢোল, তবলা ও হারমোনিয়াম ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। প্রাণীর ছবি আঁকা ও মূর্তি বানানো শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতি ও মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্য পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিয়ে বাউল গান, মাজার পূজা ইত্যাদি শিরক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন, ছাত্রছাত্রীদের পরস্পরকে চুমা দেয়ার সংস্কৃতি, সালামের পরিবর্তে গুড মর্নিং ও গুড ইভিনিং বলা শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। রাধাকৃষ্ণ, চণ্ডিদাসের প্রেমকাহিনী ও শ্রীচৈতন্যের দর্শন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের হালাল-হারামের বিধান ভুলিয়ে দিয়ে পৌত্তলিকতা শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। ট্রান্সজেন্ডার প্রমোট করে তৃতীয় লিঙ্গ তথা হিজড়াদের সাথে মিলিয়ে দিয়ে সমকামিতা চালু করা হচ্ছে। বিবৃতিতে বর্তমান সরকারের এসব পৌত্তলিকতা মিশ্রিত বিজাতীয় শিক্ষা নীতি বাতিলের দাবিতে তীব্র গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা দেশের আপামর জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ : সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, সরকার কেরোসিন, ডিজেল, পেট্রল ও অকটেলসহ ১ জুন থেকে সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির যে অন্যায়, অযৌক্তিক ও জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তে দেশের সর্বস্তরের জনগণ উদ্বিগ্ন ও বিস্মিত। তিনি আরো বলেন, সরকার কেরোসিন ও ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৭৫ পয়সা এবং পেট্রল ও অকটেনের দাম প্রতি লিটারে আড়াই টাকা বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে তা সম্পূর্ণ জনস্বার্থবিরোধী। সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে দেশের গোটা অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। সব জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে কেরোসিন ব্যবহারকারী দরিদ্র লোকদের ঘরে বাতি জ্বলবে না। যারা কেরোসিনের চুলায় রান্না করে তাদের রান্না খরচ বাড়বে। পেট্রল, ডিজেল ও অকটেনের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বাস ভাড়া, লঞ্চ ভাড়া ও ফেরি ভাড়া বাড়বে। পানি সেচের খরচ বাড়বে। ফলে কলকারখানায় পণ্য উৎপাদনের খরচ বাড়বে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ও কৃষিপণ্য, তরিতরকারী ও মসলার দাম আরো বাড়বে। দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগণের জীবনযাত্রার খরচ বাড়বে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়। নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান সরকার অবৈধ। এ সরকার পাশবিক শক্তির জোরে টিকে আছে। জনগণের দুঃখকষ্টে এ সরকারের কিছুই আসে যায় না; যে কারণে এ সরকার ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধির সাথে সাথেই আবার সব ধরনের জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করেছে। সরকার জনগণের মাথায় একের পর এক মূল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য এবং দুর্নীতি ও লুটপাট করার জন্যই পানির দাম বৃদ্ধির পর আবার সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। দেশের দরিদ্র জনগণের স্বার্থের কথা চিন্তা করে অবিলম্বে সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির অন্যায় ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ : জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মুগদা থানা দক্ষিণ থানার উদ্যোগে গতকাল স্থানীয় একটি মিলনায়তনে সক্রিয় সহযোগী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ শামছুর রহমান। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য ও মুগদা দক্ষিণ থানা আমির মুহাম্মদ বনি ইয়ামিনের সভাপতিত্বে এবং থানা সেক্রেটারি মো: ইয়াকুব আলীর পরিচালনায় সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন মহানগরী মজলিসে শূরা সদস্য ও থানা নায়েবে আমির মো: এ বি সিদ্দিক, থানা কর্মপরিষদ সদস্য মো: কেফায়েত উল্লাহ, মো: আবুল কাশেম, মো: ওমর বিন নূর, মো: গিয়াস উদ্দিন, মো: শফিকুল ইসলাম, মো: লোকমান হোসাইন, মো: অহিদুর রহমান প্রমুখ।
বাকেরগঞ্জে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে জামায়াত
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা ও উপজেলা নেতারা। এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
শুক্রবার বিকেলে দাড়িয়াল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের চর দাড়িয়াল গ্রামে ঘূর্ণিঝড় রেমালের গাছচাপায় নিহত জালাল শিকদারের বাড়ি যান জামায়াত নেতারা। নিহতের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি তাদের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন তারা। পরে উপস্থিত এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিহতের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়।
এ ছাড়া একই দিন নেতৃবৃন্দ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মুন্সির হাট এলাকার আজিজিয়া নূরানি হাফিজিয়া মাদরাসা ও মিরমদন হামেদিয়া জামে মসজিদ পরিদর্শন করেন এবং প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে জামায়াতের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক ডক্টর এস এম মাহফুজুর রহমান। আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মাহমুদুন্নবী তালুকদার, সাবেক ছাত্রনেতা ও পেশাজীবী সংগঠন আইবিডব্লিউএফ বরিশাল মহানগরীর সভাপতি অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন হাওলাদার, বাকেরগঞ্জ উপজেলা আমির অধ্যাপক ফিরোজ আলম, দাড়িয়াল ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা দেলোয়ার হোসেন খান, সেক্রেটারি মাস্টার জহিরুল ইসলাম শিকদার, উত্তমপুর মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা নুরুল হক, ফরহাদ হোসেন তাজ প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা