নারায়ণগঞ্জে পৃথক সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত ২২
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০১ জুন ২০২৪, ০১:০৬
নারায়ণগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে পৃথক সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধ, অপর একহন টেঁটাবিদ্ধসহ মোট ২২ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো পৌরসভায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের মাঝে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গুলি-ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ এবং পথচারীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ফতুল্লায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ও ফতুল্লা সংবাদদাতা জানান, ফতুল্লায় আবারো দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অলিদ (৪০) নামে একজন টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় বেশ ক’টি বসত বাড়িতে হামলা, ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। খবর পেয়ে ফাঁকা গুলি করে সংঘর্ষ থামিয়েছে পুলিশ। এ সময় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের আকবরনগর এলাকায় রহিম হাজী ও সামেদ আলী গ্রুপের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। আহত অলিদ আকবরনগর এলাকার মৃত দুদু মিয়ার ছেলে। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্বশত্রুতার জেরে ওই এলাকায় প্রায়ই রহিম হাজী ও সামেদ আলী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। গতকালে সংঘর্ষে শিশু ও কিশোরদেরও টেঁটা হাতে দৌড়াতে দেখা গেছে। সকাল থেকেই সেখানে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুই পক্ষের মধ্যে চলছিল উত্তেজনা। এরপর দুপুরে উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে টেঁটা, রাম দা হাতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় সামেদ আলী গ্রুপের অলিদ মিয়ার হাতে, পায়ে ও মাথায় টেঁটাবিদ্ধ হয়।
এর আগে ২৬ মে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই গ্রুপ পূর্বশত্রুতার জেরে দফায় দাফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই সময় উভয় গ্রুপের অন্তত ১২ জন টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। তখন পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ ১৭ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি করে। এ ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় ফের সংঘর্ষে জড়ায় রহিম হাজী ও সামেদ আলী গ্রুপ।
বক্তাবলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) মফিজ উদ্দিন জানান, ২০ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। আকবরনগরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি নূরে আজম জানান, রেজাউল, জিল্লুর রহমান, আসলাম ও শহিদুল্লাহ নামে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আকবরনগর এলাকাকে সন্ত্রাস মুক্ত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
রূপগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, উপজেলার তারাবো পৌরসভার তারাবো উত্তরপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গুলি-ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তরা এলাকার বিভিন্ন দোকানপাট ও বসত বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে ঘরে থাকা টিভি, ফ্রিজ, স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংঘর্ষে তারাবো কাজীপাড়া গ্রামের ইয়াছিন মিয়ার ছেলে লালুমিয়া (২৪) গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় হৃদয় খাঁন (২৫) নামে একজনকে আটক করেছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় চরম উত্তেজনা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাদক ও কিশোর গ্যাংকে কেন্দ্র করে রোবেল, আকবর বাদশা ও শ্রাবণ বাহিনী কিছু দিন পরপর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের দোকান, ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে লুটপাট চালায়। এ বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। এখানে চুরি, ছিনতাই, রোড ডাকাতি, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধের সাথে দু’টি কিশোর গ্যাং জড়িত।
স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা বকুল ভূইয়ার ছেলেকে শিমুলকে মারধর করেন রোবেল মিয়া, শ্রাবণ ও আকবর বাদশা বাহিনীর লোকজন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকা থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী এনে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের সদস্যরা রামদা, চাপাতি, পিস্তলসহ নানা ধরনের অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রাত ১০টার দিকে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ফাঁকা গুলি বর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সংঘর্ষে পথচারীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কহিনুর বেগম, বাদল মিয়া ও গুলিবিদ্ধ রাকিবসহ তিনজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরে উভয় পক্ষের সন্ত্রাসীরা তারাবো পৌরসভার তারাবো উত্তরপাড়া ভূঁইয়া বাড়ি এলাকার মোতাহার, আরজু ভূঁইয়া, মেহের ভূঁইয়ার ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। প্রতিবন্ধী ফরহাদ বানুকে মারধর ও বাড়ি ভাঙচুর করে এক ভরি স্বর্ণের চেইন ও ৮ আনা কানের দুল লুটপাট করে। নজরুল ইসলাম চৌধুরীর বাড়ি ও অফিস, মোজাম্মেল চৌধুরী, সুরুজ প্রধানের, হাসেম ভূঁইয়ার, মনসুর আলী, আমিনুল প্রধানের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। দক্ষিণ তারাবো এলাকার মনসুর আলীর ভাড়াটিয়াদের ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ১৫টি ফ্রিজ, ১০টি টিভি, পাঁচ লাখ টাকা লুটে নেয়, বাজারে থাকা আব্দুল সাত্তারের মুদিমনোহরী দোকানে হামলা চালিয়ে ফ্রিজ ভাঙচুর ও মালামাল লুট করে। পান ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদের পান লুট করে, আমিনুল ইসলামের মালিকানাধীন সাদিয়া ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠান থেকে টিন ও টাকা লুট করে, রফিক মিয়ার মালিকানাধীন দোকান থেকে ফল লুট করা হয়। লুট হয় কোরবান আলীর ভ্যারাইটিজ দোকানঘর, বিকাশ ও মোবাইল ব্যবসায়ী রাসেল মিয়ার গলায় ছুড়ি ধরে ১০টি মোবাইল লুট করে, শাওন মিয়ার মালিকানাধীন ইলেকট্রনিক্স দোকান থেকে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়, নিরীহ কবির ভূঁইয়া, হাজী তোফাজ্জল হোসেন, তামিম মিয়া, হাশে ভূঁইয়া, শামিম প্রধান, সুরুজ প্রধান, তাবেল, হাবু ভূঁইয়ার বসতঘরে প্রবেশ করে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাট করে সন্ত্রাসীরা। শুধু তা-ই নয়, তারাব বাজারে অবস্থিত সাপ্তাহিক রূপকণ্ঠ পত্রিকা অফিসে ভাঙচুর চালায় সন্ত্রাসীরা। হামলা চালায় তারাবো পৌরসভার চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর আমির হোসেনের মুদি দোকানে। রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, এ ঘটনায় হৃদয় খাঁন নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকের জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশসহ (ডিবি) থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা