১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

এক সময়ের ব্যস্ত শহর এখন ভুতুড়ে

-

বিশ্বের এমন কিছু শহর আছে যেগুলো এক সময় ব্যস্ত এবং জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আজ তা ভুতুড়ে, পরিত্যক্ত। পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। চলুন জেনে নেয়া যাক এমন কয়েকটি শহরের কথা-
সিউদাদ পের্ডিদা, কলম্বিয়া : সিয়েরা নেভাদা পর্বতে তায়রোনা সম্প্রদায়ের মানুষ এই শহর তৈরি করেছিলেন। ১৯৭২ সালে এই শহরের ফের খোঁজ মেলে। স্থানীয় গুপ্তধন সন্ধানী একটি দল ‘লস সেপুলভেদাস’ আবিষ্কার করেছিলেন। ‘লস সেপুলভেদাস’ ছিল কলম্বিয়ায় বসবাসকারী গুপ্তধন সন্ধানী একটি ছোট পরিবার। তারা প্রায়শই বনে শিকার করতে যেত। একদিন তারা একটি বন্য টার্কি মুরগিকে গুলি করে। টার্কি উদ্ধার করার সময়, তারা লক্ষ করে যে মুরগি বা সেই পাখিটি পাহাড়ের ওপরে উঠে যাওয়া পাথরের সিঁড়িতে পড়েছে। তারা পাথরের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে একটি পরিত্যক্ত শহর আবিষ্কার করে, যার নাম তারা দেয় ‘গ্রিন হেল’ বা ‘ওয়াইড সেট’। এই শহরটি ৮০০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে মনে করেন প্রতœতাত্ত্বিকরা। যদি তাই হয়, তাহলে এটি মাচু পিচুর আগে তৈরি হয়েছিল।
দ্য লস্ট সিটি অব জেড, ব্রাজিল : এই শহরের কিন্তু বাস্তবে দেখা মেলেনি। গল্পকথায় মেলে দ্য লস্ট সিটি অব জেড বা এল-ডোরাডোর হদিস। বিশ্বাস করা হয়, আমাজনের জঙ্গলে রয়েছে এই শহর। কিন্তু বহু পর্যটক অনেক চেষ্টা করেও এই শহর খুঁজে পাননি। একজন ব্রিটিশ জরিপকারী কর্নেল পার্সি হ্যারিসন ফাউসেট এই শহরের নামকরণ করেন। ব্রাজিলের ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে রক্ষিত পাণ্ডুলিপি ৫১২ নামে একটি নথি খুঁজে পান কর্নেল পার্সি হ্যারিসন, যা পর্তুগিজ ব্যান্ডেইরান্টেস জোয়াও দ্য সিলভা গুইমারেস লিখেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। নথি অনুসারে, ১৭৫৩ সালে, একদল ব্যান্ডেইরান্টেস একটি প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছিল যাতে খিলান, একটি মূর্তি এবং হায়ারোগ্লিফসহ একটি মন্দির রয়েছে। তবে নথিতে শহরের ধ্বংসাবশেষের অবস্থান জানাননি লেখক। যে কারণে এখনো এর অস্তিত্ব খুঁজে পাননি কেউ।
ট্রয়, তুরস্ক : ট্রয় নগরীর নাম শোনেননি এমন মানুষ কমই আছেন। যে শহর ধ্বংস হয়েছিল এক নারীর জন্য। গ্রিক পুরাণে এই শহরের উল্লেখ মেলে। ১৯ শতকে ফের খোঁজ মেলে এই শহরের। এখানে প্রথম তিন হাজার ৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি বসতি স্থাপন করা হয়েছিল এবং তিন হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে একটি ছোট সুরক্ষিত শহরে পরিণত হয়। চার হাজার বছর টিকে ছিল এই শহর। তবে এর মধ্যে ট্রয় বারবার ধ্বংস এবং পুনর্নির্মিত হয়েছিল। ব্রোঞ্জ যুগের শেষের দিকে ট্রয়কে উইলুসা বলা হতো। বর্তমানে এই শহর পর্যটকদের জন্য এক অন্যতম আগ্রহের জায়গা। ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছিল।
পম্পেই, ইতালি : ইতালির এই শহর নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। এক নিমিষেই একটি ব্যস্ততম শহর জনশূন্য হয়ে যায়। মারা যায় লাখ লাখ মানুষ। ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে চাপা পড়ে যায় আস্ত এই শহর। যার বিভীষিকাময় স্মৃতি এখনো আগলে দাঁড়িয়ে আছে শহরটি। ১৯ শতকের গোড়ার দিক থেকে এখানে দফায় লাখ পর্যটক পম্পেইয়ের ধ্বংসস্তূপ দেখতে আসেন।
পেত্রা, জর্দান : পেত্রা ছিল একটি প্রাচীন আরব শহর। বর্তমান জর্দানের দক্ষিণ ও পশ্চিমের গ্রাম ওয়াদি মুসার ঠিক পূর্বে হুর পাহাড়ের পাদদেশে এর অবস্থান। ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এটি ছিল নাবাতাইন রাজ্যের রাজধানী। পাথরে খোদাই ও নানা স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত হারিয়ে যাওয়া এই শহর। মুসলমানেরা এটিকে তাদের দখলে নেন সপ্তম শতকে এবং পরবর্তীতে দ্বাদশ শতকে আবার ক্রুসেডাররা এটিকে দখল করলে ক্রমে ক্রমে এটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ৩৬৩ সালে এক ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায় এর দালানগুলো। নষ্ট হয়ে যায় পানি সঞ্চালন ব্যবস্থা। মধ্যযুগে পেত্রা একেবারে পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হয়।


আরো সংবাদ



premium cement