বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মানববন্ধন আলটিমেটাম
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৭ মে ২০২৪, ০১:১৭
সর্বজনীন পেনশন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, সর্বজনীন পেনশন বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে রোববার মানববন্ধন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) শিক্ষকমণ্ডলী। এ সময় দাবি মেনে নেয়ার জন্য আলটিমেটাম ঘোষণা দেয়া হয়।
২০২৪ সালের ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের আহ্বানে প্রায় দুইশতাধিক শিক্ষকমণ্ডলী বেলা সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচে এ মানববন্ধন পালন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার, বিভিন্ন অনুষদের ডিনগণ, প্রক্টর, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সব শিক্ষকবৃন্দ।
মানববন্ধনে ট্রেজারার প্রফেসর তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রথম স্বপ্নই ছিল শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন মানুষের সাম্যতা তৈরি করতে। অথচ যারা আজ বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্নকে নস্যাৎ করতে চায় তাদের সে অপচেষ্টাকে সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করার আহ্বান জানান তিনি। প্রয়োজনে ইস্পাতকঠিন সঙ্কল্প নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
যশোর অফিস জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তকরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে মানববন্ধন করেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (যবিপ্রবিশিস)। রোববার সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেল মধুসূদন দত্ত লাইব্রেরি কাম অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো: কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে ছাত্রদের ক্লাসরুমে পড়ালেখা করানো কিন্তু কোনো এক কুচক্রী মহলের কুচক্রের কারণে ক্লাস রেখে আজ আমরা আন্দোলনের জন্য মাঠে নেমেছি। আমরা আমাদের ছাত্রদের ভালোভাবে পড়াতে চাই কিন্তু তার জন্য আমাদেরও ভালো থাকতে হবে। আজকে সব জায়গায় শিক্ষকদের জন্য বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। আমরা চাই সরকারের কাছে যে বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে সেটা প্রত্যাহার করা হোক। একইসাথে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল নির্ধারণ করার দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের সব দেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল আছে, একমাত্র বাংলাদেশে সেটা নেই। আমাদের সুপার গ্রেড দেয়ার কথা থাকলেও সেটা থেকে শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষক ফেডারেশনের সাথে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করে আজ আমরা এই মানববন্ধন করছি। আগামী ২৮ মে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আমরা কর্মবিরতি পালন করব। এরপরও সমাধান না হলে আরো কঠোর আন্দোলনে যাবো।
খুলনা ব্যুরো জানায়, সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা গতকাল রোববার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি আহূত দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এস এম ফিরোজের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. ইয়াছিন আলী, প্রফেসর ড. মনিরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মো: এ টি এম জহিরউদ্দিন, প্রফেসর ড. সমীর কুমার সাধু, সমিতির সাবেক সভাপতি ও ছাত্রবিষয়ক পরিচালক প্রফেসর শরীফ হাসান লিমন প্রমুখ।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ভার্সিটি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো: আসাদুজ্জামান এবং বক্তৃতা দেন সাধারণ সম্পাদক ড. মো: আশিকুল আলম, বায়োকেমিস্ট্র ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো: শরীফুল ইসলাম, অ্যাগ্রিকালচারাল স্ট্যাটিসটিক্স অ্যান্ড বায়োইনফরমেটিক্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হুমায়রা ইয়াসমিন ও ওশানোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষক দেবাশীষ পণ্ডিত।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো: আব্দুল হাসিব। বক্তৃতা দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. আলমগীর হোসেন, সহকারী অধ্যাপক শারফান উপল, প্রভাষক আসেফ শাহরিয়ার, সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল আলম, অধ্যাপক ড. হেলাল আন নাহিয়ান, সহকারী অধ্যাপক হাসিবুল হক, সহযোগী অধ্যাপক তুষার কান্তি রায় এবং প্রফেসর ড. কাজী রকিবুল আলম।
রংপুর অফিস জানায়, সর্বজনীন পেনশন স্কিম থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রত্যাহার করা না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে লাগাতর কর্মবিরতিতে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
গতকাল রোববার দুপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির আয়োজিত ক্যাম্পাসের শেখ রাসেল স্কয়ারে মানববন্ধন থেকে এই ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. বিজন মোহন চাকী ও সাধারণ সম্পাদক মো: আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকে যোগদানকৃতদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত করার যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক। এ ধরনের বৈষম্য বাংলাদেশের সংবিধানের মূল চেতনার সাথেও সাংঘর্ষিক।
এসময় সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. বিজন মোহন চাকী মোহন বলেন, প্রত্যয় স্কিমটি নামে সর্বজনীন হলেও আদতে সর্বজনীন নয়। সরকারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান-সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও বিচার বিভাগকে এই প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে একে সর্বজনীন বলার সুযোগ নেই। সরকারি কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য চালু করা হলো সেটা কিভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম হয়? অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন বাতিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারির করতে হবে। সেটি করা না হলে চলতি মাসের ৮ তারিখে দুই ঘণ্টা, জুন মাসের ৪ তারিখে আধাবেলা এবং জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে লাগাতর পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়া হয় মানববন্ধন থেকে।