৫১ দোকানপাট ও বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর-লুট
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৭ মে ২০২৪, ০১:১৭
উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে মারামারি, লুটপাট, ভাঙচুর, হামলা অব্যাহত রয়েছে। ভোলার লালমোহনে নির্বাচনী সহিংসতায় প্রতিপক্ষের ৩০টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। তজুমদ্দিনে এক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর হামলা করা হয়েছে। এতে পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রতিপক্ষের ২১টি বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। নওগাঁর আত্রাইয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় চারজন আহত হয়েছে। পুলিশ ৮জনকে আটক করেছে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী সহিংসতায় আহত এক মৎস্যজীবী লীগ নেতা হাসপাতালে মারা গেছেন।
লালমোহন (ভোলা) সংবাদদাতা জানান, তৃতীয় ধাপের ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোলার লালমোহনে ভোটাদের আতঙ্ক করতে রাতের আঁধারে হামলা করে নির্বাচনী অফিসসহ ৩০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার লর্ডহাডিঞ্জ ইউনিয়নের মাদ্রাসা বাজার ও কাশ্মীর বাজারে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তালা প্রতীকের সমর্থকরা চশমা প্রতীকের নির্বাচনী অফিসসহ ৩০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। এ সময় দুটি বাজারে ৩০টি দোকান, দুটি রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে হামলাকারীরা। দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাটের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের দুই সদস্যসহ তিনজনকে আটক করেছে লালমোহন থানা পুলিশ। শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তাজুড়ে পড়ে রয়েছে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া মালামালের ছাই। দোকানগুলোতে রয়েছে কুপিয়ে তছনছ করা ও লুটের চিহ্ন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানগুলো দেখে হতবাক হয়ে গেছেন। গত শুক্রবার রাতে লালমোহন উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হাসান রিমন (চশমা) ও জাকির হোসেন পঞ্চায়েতের (তালা) সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত। দফায় দফায় চলা এ সংঘর্ষ চলে রাত ২টা পর্যন্ত। লডহার্ডিঞ্জ মাদ্রাসা বাজরের আসিফ মেডিক্যাল, কাশেম স্টোর, টিপু গার্মেন্ট, ফারুক স্টোর, শিমলা স্টোর, নুরুল ইসলাম স্টোর, হারুন স্টোর, আব্দুল হাই স্টোর, কাশেম স্টোর, মোকাম্মেল স্টোর, শাহজান স্টোর, রাকিব স্টোর, আকামতি ভুষা মাল, জিলুর স্টোর, আলমগীর জেনারেটরের দোকান ভাঙচুর ও মালামাল লুট করে হামলাকারীরা। অন্যদিকে কাশ্মীর বাজারে মাকসুদ স্টোর, সবুজ স্টোর, নজরুল মেডিক্যাল হল, ইব্রাহিমের ভুষা মালের আড়ৎ ও চশমা মার্কার অফিস কুপিয়ে ভাঙচুর ও তছনছ করে হামলাকারীরা। ব্যবসায়ী ইউসুফ, হাবিব ও টিপুসহ অন্যরা জানান, গভীর রাতে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মিয়ার নেতৃত্বে জাকির হোসেন পঞ্চায়েতের সমর্থকরা এ হামলা ও লুটপাট চালায়। একটি দোকান ও তিনটি ভ্যান ও একটি সাইকেলের দোকানের মালামাল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ওই সময় দোকানপাট সব বন্ধ ছিল। এ সুযোগে হামলাকারীরা লুটপাটও চালায়। একই সময় পার্শ্ববর্তী কাশ্মীর বাজারে ১১টি দোকান ও দুটি নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুর করা হয়।
ব্যবসায়ী ইউসুফ জানান, তার মালিকানা মার্কেটে ৮টি দোকান ভাড়া দেন। হামলাকারীরা সব কয়টি দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছে। একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় ও দুটি মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয়। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে ওই দুটি বাজারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
লালমোহন থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম মাহবুব উল আলম জানান, এই ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুই ইউপি সদস্য লোকমান ও রহিম মেম্বারসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তজুমদ্দিন (ভোলা) সংবাদদাতা জানান, ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী কহিনুর বেগম শীলার ওপর সন্ত্রাসী হামলা করা হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। প্রতিপক্ষ প্রার্থী ফাতেমা বেগম সাজুর ছেলেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি। কহিনুর বেগম বাদি হয়ে থানায় মামলা করলে হামলার অভিযোগে সাজুর ছেলেসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
জানা যায়, গত শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় ব্যক্তিগত কাজ শেষে উপজেলা সদর থেকে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী কহিনুর বেগম শিলা মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় চাঁদপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ফকির বাড়ি এলাকার রাজ্জাক মিলেটারীর বাড়ীর সামনে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
কোহিনূর বেগম শীলা জানান, প্রতিপক্ষ ফাতেমা বেগম সাজুর ছেলে সোহাগ ও সবুজসহ ৮/১০ জনে মিলে আমার গতিরোধ করে অতর্কিত হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট করে আমাকে গুরুতর জখম করে। ডাকচিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনে।
তজুমদ্দিন থানা অফিসার ইনচার্জ আনোয়ারুল হক জানান, হামলার ঘটনায় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী কোহিনুর বেগম শিলা বাদি হয়ে আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
লোহাগড়া (নড়াইল) সংবাদদাতা জানান, নড়াইলের লোহাগড়ায় উপজেলা নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় দুই পক্ষের ২১টি বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পক্ষের দুইজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার লাহুড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রোম গ্রুপের লাহুড়িয়ার তালুকপাড়ার গিয়াস উদ্দীন মোল্যা ও সাবেক চেয়ারম্যান রুনু গ্রুপের ডহপাড়ার তরিকুল মোল্যা।
জানা যায়, সদ্য শেষ হওয়া ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ কে এম ফয়জুল হক রোম আনারস প্রতীক নিয়ে বেসরকারি ফলাফলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এস এম এ হান্নান (রুনু) হেলিকপ্টার প্রতীক নিয়ে পরাজিত হন। নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার পর থেকে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
গত শনিবার রাতে উপজেলার লাহুড়িয়া গ্রামে পরাজিত প্রার্থী এম এ হান্নান রুনু ও সদ্য নির্বাচিত রোম চেয়ারম্যান সমর্থিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো: দাউদ হোসেন গ্রুপের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা এবং বাক-বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এর জেরে লাহুড়িয়া বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে বর্তমান চেয়ারম্যান সমর্থিত গিয়াস উদ্দীন মোল্যার ওপর হামলা চালায় সাবেক চেয়ারম্যান সমর্থিত লোকজন। স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করে এবং পরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হয়েছে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। আরো জানা গেছে, পরে নবনির্বাচিত রোম চেয়ারম্যান সমর্থিত দাউদ গ্রুপের লোকজন সংঘবদ্ধভাবে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ডহরপাড়া এলাকায় সাবেক চেয়ারম্যান সমর্থিত লোকজনের অন্তত ২০টি বাড়িঘর ভাঙচুর করে গবাদিপশু লুটপাট চালায়। হামলার সময় গুরুতর আহত তরিকুল মোল্যাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর আবার রুনু চেয়ারম্যান গ্রুপ একত্রিত হয়ে দাউদ গ্রুপের একটি বাড়িতে ভাঙচুর চালায়।
আহত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। লাহুড়িয়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো: সেলিম উদ্দীন বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের একাধিক টিমের সমন্বয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
আত্রাই (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, নওগাঁর আত্রাইয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় চার জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ আটজনকে গ্রেফতার করে নওগাঁ জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। ঘটনাটি গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ঘটলেও এজাহারে সন্ধ্যা ৭.৪৫ মিনিট উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই রাতে উপজেলার জয়সাড়া গ্রামে নির্বাচনী প্রচারণা করতে গিয়ে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আলহাজ এবাদুর রহমানের (কৈ মাছ প্রতীক) ও বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মমতাজ বেগমের (কাপপিরিচ প্রতীক) লোকজনের মধ্যে মারামারি হয়। এতে দীঘা গ্রামের মনিরুজ্জামান রণি (৩৮), শহিদুল ইসলাম (৬২), ক্যাশবপাড়া গ্রামের উজ্জল (৫০) ও মধ্যবোয়ালিয়া গ্রামের জিহাদ (২৫) আহত হন। আহতদের মধ্যে মনিরুজ্জামান রণিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার প্রার্থী এবাদুর রহমানের ভাই সাজেদুর রহমান বাদি হয়ে আত্রাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আত্রাই থানার ওসি (তদন্ত) লুৎফর রহমান বলেন, সাদা রঙের প্রাইভেটকারে করে মানুষ অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে থানার সামনে চেকপোষ্ট বসিয়ে প্রাইভেটকার আটজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে রাব্বি হোসেন, শহীদ হোসেন, আশিক হোসেন, আশরাফুল ইসলাম, রফিক হোসেন, মোজাফ্ফর হোসেন, হাফিজ ও শহীদকে গতকাল শনিবার নওগাঁ জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এলকার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
কুমারখালী (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা জানান, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে দ্বিতীয় ধাপে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিনে মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকদের হামলায় আহত আনারস প্রতীকের পোলিং এজেন্ট ও ওয়ার্ড মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল রোববার ভোরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই নেতার মৃত্যু হয়।
নিহত তরিকুল ইসলাম তারিক (৪৫) উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া এলাকার গোলাম মোস্তাফার ছেলে এবং তিনি চাপরা ৩ নম্বর ওয়ার্ড মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ ছিলেন বলে জানা গেছে। গত ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তরিকুল ইসলাম চাপড়া ইউনিয়নের জয়নাবাদ কলোনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আনারস প্রতীকের পোলিং এজেন্ট নিযুক্ত ছিলেন। ভোট গ্রহণ শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে পৌঁছালে মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থক আদিলুর রহমান লাল, মধু, দুদু, সাদ্দাম ও শাকিলসহ ১০ /১৫ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার উপর হামলা চালায়।
হামলায় আহত তরিকুলকে মারাত্মক আহত অবস্থায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তরিকুলের অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ দিনের মাথায় (রোববার) মারা যান। এ ঘটনায় গত ২৩ মে ১২ জনকে আসামি করে কুমারখালী থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই তারিকুল ইসলাম তরিক। এদিকে তরিকুল হত্যার বিচার দাবিতে রোববার চাপরা ইউনিয়নে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী। আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করেন তারা। প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত লাশ দাফনের প্রস্তুতি চলছিল তার নিজ এলাকায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা