ইসলামের শিক্ষার অভাবে মুসলিম জাতি আজ বিপর্যস্ত

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি ও বিসিএসআইআরের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেছেন, ইসলামের শিক্ষার অভাবেই মুসলিম জাতি আজ সমগ্র বিশ্বে বিপর্যস্ত ও পদদলিত। তাই হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে প্রয়োজন নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘শিক্ষা গবেষণা সংসদ ঢাকা’ আয়োজিত ‘শিক্ষাব্যবস্থার অতীত ও সাম্প্রতিক শিক্ষাক্রম পরিবর্তন : জাতির প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এম কোরবান আলী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক এ বি এম ফজলুল করীম। বক্তৃতা করেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এ টি এম ফজলুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো: শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, অধ্যাপক ড. সাজ্জাদুর রহমান, বাংলাদেশ আদর্শ কলেজ শিক্ষক পরিষদের সহসভাপতি অধ্যক্ষ ড. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ।

ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, পাঠ্য বইয়ে বিদায় হজের ভাষণ বাদ দেয়া হয়েছে অথচ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ বিদায় হজের ভাষণ। আজ ফিলিস্তিনে মুসলমানদের ওপরে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। মানবতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ বর্বর ইহুদিদের হত্যাকাণ্ড দেখে। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের উমর ফারুক কবিতাটি পড়ে শোনান এবং আফসোস করে বলেন, মুসলমানদের এই দেশে পাঠ্য বই থেকে এই কবিতাটি বাদ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দেশের ৯০ শতাংশ নাগরিক মুসলমান। ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি নার্সারি থেকে সর্বস্তরে আবশ্যিক করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ ওহির জ্ঞান শিক্ষা করা ছাড়া কোনো মানুষের পক্ষে নিজের প্রকৃত পরিচয় লাভ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে মুসলমানদের পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙে দেয়া হচ্ছে। মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদান রেখেছেন; কিন্তু অস্ত্র ও পারমাণবিক বোমা বানাননি। মুসলমানরা ইনসাফ ও ন্যায়বিচার দিয়ে শাসন করেছেন। নতুন প্রজন্মকে আধুনিক জাহিলিয়াত থেকে বাঁচাতে ইসলামী শিক্ষামুখী করতে হবে।

প্রফেসর ড. এম কোরবান আলী বলেন, ইসলাম একটি যুক্তিবান্ধব, বাস্তব ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের প্রতিটি বিষয়ের বিধান ইসলামে অত্যন্ত চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে। অথচ এ দেশে ৯০ শতাংশ মুসলিমের সন্তানরা ইসলাম ধর্মের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে। তারা ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত রুখে দিতে হবে। শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলাম ধর্মের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে।
অধ্যাপক এ বি এম ফজলুল করিম প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলেন, আজ প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার কুফল দেখে আতঙ্কিত হতে হয়। আজ দেশে নীতিনৈতিকতার বড় অভাব। ফলে জনগণ ভয়ভীতি ও অসহায় অবস্থায় এমনভাবে সম্মুখীন হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ঘুষ, দুর্নীতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, কালোবাজারির মতো গুরুতর সব অপরাধ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে। অফিসের বড় কর্তা থেকে শুরু করে বয়-বেয়ারা পর্যন্ত প্রায় সর্বস্তরের কর্মচারী দুর্নীতিগ্রস্ত। স্বামীর সামনেই স্ত্রীকে ধর্ষণ, বাবার লাশের জন্য বসে থাকা মেয়েকে ধর্ষণ, প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ, হত্যার মতো নৃশংস ও মর্মান্তিক খবর প্রতিনিয়তই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। নৈতিকতার এ বিপর্যয় জাতীয়ভাবে আমাদের সবাইকে অসহায়ভাবে অবলোকন করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের উপায় সম্পর্কে একটু নিরপেক্ষ মন নিয়ে ভেবে দেখলে সবাই এ কথা স্বীকার করবেন যে, ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে নৈতিকতা শিক্ষা দেয়। আর নৈতিকতা মানুষকে অপরাধ থেকে দূরে রাখে। ইসলামের মূলনীতি শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা উন্নত চরিত্রের অধিকারী সৎ ও নিষ্ঠাবান নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, মুসলমানরা আজ ঐক্যবদ্ধ নয়। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং আল্লাহর পথে থাকতে হবে। মালয়েশিয়া ও ইরানসহ অনেক দেশে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে স্নাতক স্তর পর্যন্ত সব মুসলিম শিক্ষার্থীর জন্য ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি বাধ্যতামূলক চালু আছে। আমাদের দেশেও বর্তমানে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি নার্সারি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করার দাবি উঠেছে। বিশ্বমানবতার শান্তি প্রতিষ্ঠায় নৈতিক গুণাবলিসমৃদ্ধ জাতি গড়ে তোলার একমাত্র পথ হলো সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত পথে চলা। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, নিশ্চয়ই ইসলাম আল্লøাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবনাদর্শ।