কোরবানির পশুর খামারে শেষ সময়ের ব্যস্ততা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৫ মে ২০২৪, ০২:০৬
আসছে ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশুর খামারে শেষ সময়ে ব্যস্ততা বেড়েছে। রাতদিন পরিশ্রম করে খামারিরা নিজেদের পালন করা গরু, ছাগল, ভেড়া ও উটের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। খামারিরা বলছেন, শেষ সময়ে পশুদের সেবা না বাড়লে তারা প্রত্যাশিত দাম থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। ফলে কোরবানির সময় ঘনিয়ে আসায় এখন বাড়তি পরিশ্রম করতে হচ্ছে।
খামারিদের ভাষ্য, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার গরু পালনে খরচ বেড়েছে। ফলে গতবারের চেয়ে এবার তারা দামও কিছুটা বেশি চাইবেন। তাতে বিক্রিতে প্রত্যাশিত দাম না পেলে লোকসানে পড়তে হতে পারে। কারণ গত বছরের থেকে প্রতিটি গরু লালন-পালনে খরচ বেড়েছে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। ভারত থেকে যাতে দেশে গরু না আসে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, এ অবস্থায় বাজারে আমদানি কিংবা চোরাইপথে গরু না ঢুকলে লোকসান থেকে বাঁচবেন খামারিরা।
গোখাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে দাবি জানিয়ে খামারিরা বলেন, অনিয়ন্ত্রিত গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ বিল ও শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে খামার চালু রাখা। এসব কারণেই একটি গরু পালনে গত বছরের থেকে এবার খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ফলে খামার টিকিয়ে রাখতে হলে খাদ্যের দাম কমাতে হবে।
এ দিকে এ বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর বিশাল চাহিদা মেটাতে দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে গবাদিপশু রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুযায়ী, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে এক কোটি ১০ লাখ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদার তুলনায় দেশে এখন বাড়তি প্রায় আট লাখ পশু রয়েছে; অর্থাৎ দেশে এখন প্রায় এক কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। অধিদফতরের একজন কর্মকর্তার ভাষ্য, পশুর জোগান বেশি থাকায় এবার ঈদে গবাদিপশু পালনকারী খামারি ও ক্রেতা উভয়ের জন্যই একটি ভালো পরিবেশ বজায় থাকবে। এ ছাড়া ভারত থেকে গবাদিপশু আসা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
সীমান্তবর্তী জেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এবার ভারত থেকে দেশে পশু আসার হার অনেক কম। তবে দাম কম হওয়ায় মিয়ানমার থেকে অনেক পশু দেশে প্রবেশ করছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, গত বছরে ঈদুল আজহায় ৩৮ লাখ গরুসহ প্রায় এক কোটি চার লাখ পশু কোরবানি দেয়া হয়েছিল। এ বছর ঈদে ৪২ লাখ গরুসহ প্রায় এক কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি করা হতে পারে; অর্থাৎ কোরবানির পশুর চাহিদা এবার ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। এবারের ঈদুল আজহায় চাহিদার চেয়ে সাত লাখেরও বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, এ বছর ৪৫ লাখ ৮২ হাজার গরু ও মহিষ এবং ৭২ লাখ ছয় হাজার ৫৬৩টি ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, গবাদিপশুর মজুদ গত বছর ভালো ছিল। গত বছর গবাদিপশু উদ্বৃত্ত ছিল ১০ লাখ। প্রায় ১০ লাখ প্রাণী প্রতিবেশী দেশ থেকে আনা হয়েছিল।
অন্য দিকে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বিগত কয়েক বছরের থেকে চলতি বছরে বেনাপোল ও শার্শা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বৈধ ও অবৈধ পথে ভারত থেকে গরু-ছাগল কম আসছে। এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন যশোরের খামারিরা। অবৈধ পথে ভারত থেকে আসা গরু-ছাগলের সঠিক হিসাব না থাকলেও বৈধ পথে আসা পশুর একটি হিসাব রয়েছে শার্শা উপজেলার নাভারন কাস্টমস করিডোরে।
অভিযোগ রয়েছে, যশোরের পশ্চিম প্রান্তজুড়ে ভারত সীমান্ত। সীমান্তের বেশির ভাগ স্থানে ভারতীয়দের দেয়া কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। তবে যে স্থানে বেড়া নেই সে পথে অনায়াসে গরু ও ছাগল আসে। আর যে পথে কাঁটাতারের বেড়া, সেখান থেকে গরু আনা হয় বিভিন্ন কৌশলে।
বৈধপথে গরু, ছাগল ও ভেড়া আনতে যশোর সীমান্তে শার্শার গোগা ও বেনাপোলের পুটখালীতে দু’টি খাটালের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। খাটাল দু’টি দিয়ে এখন সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫টি গরু আসছে। যেখান আগের বছরগুলোতে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার গরু, ছাগল ও ভেড়া আসত। তবে বিজিবি জানিয়েছে, অবৈধ পথে ভারতীয় গরু ও ছাগল যাতে বাংলাদেশে সহজে যেতে না পারে সে জন্য ইতোমধ্যে প্রতিটি সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে। ফলে চোরাচালানকারীরা সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধ পথে কোনো গরু-ছাগল নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে না। এতে কোরবানিতে ভারতীয় গরু ও ছাগলের সংখ্যা অনেক কম হবে বলে ধারণা করছেন তারা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা