৩০ শতাংশ মানুষ থায়রয়েড সমস্যায় ভুগছেন
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৫ মে ২০২৪, ০২:০৬
আজ বিশ্ব থায়রয়েড দিবস। এটা মানব দেহের একটি অন্যতম হরমোন। বাংলাদেশে ৩০ শতাংশ মানুষ থায়রয়েড সমস্যায় ভুগছেন। থায়রডেরে সমস্যা থাকলে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, শরীর মোটা হয়, ক্ষয় হওয়া মেয়েদের মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হার্টের সমস্যা এবং চোখ ভয়ঙ্করভাবে বড় হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ হিসেবে থায়রয়েড হরমোনের তারতম্যকে দায়ী করা হয়। শারীরিক কার্যক্ষমতা সঠিক রাখার জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় এ হরমোন শরীরে থাকা জরুরি।
চিকিৎসকেরা জানান, থায়রয়েড গ্রন্থিটি দেখতে প্রজাপতি সদৃশ। এর অবস্থান শরীরে শ্বাসনালির সামনে থাকে। এটি একটি ছোট গ্রন্থি; কিন্তু এর কার্যকরিতা ব্যাপক। থায়রয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন মানব পরিপাক প্রক্রিয়ায় ভূমিকা পালন করে। ভ্রƒণ অবস্থা থেকে আমৃত্যু থায়রয়েড হরমোনের প্রয়োজন অপরিহার্য।
থায়রয়েডের সমস্যা হলে অ্যান্ডোক্রাইনোলজির চিকিৎসকরা চিকিৎসা করে থাকেন। মেডিসিনের চিকিৎসকরা এই চিকিৎসাটি করেন। বর্তমানে বাংলাদেশে বিপুল জনগোষ্ঠী থায়রয়েড রোগে আক্রান্ত। এদের অর্ধেকের বেশিই জানেন না যে, তারা থায়রয়েড সমস্যায় ভুগছেন।
প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের প্রায় ২ শতাংশ এবং পুরুষদের প্রায় ০.২ শতাংশ হাইপারথাইরয়েডিজম (থায়রয়েড হরমোনের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা) রোগে ভুগছেন। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ, নারীদের মধ্যে ৩.৯ শতাংশ থেকে ৯.৪ শতাংশ হারে হাইপোথাইরয়েডিজম থাকতে পারে অ্যান্ডোকাইনোলজিস্ট অধ্যাপক ডা: ফারুক পাঠান বলেন। তিনি বলেন, প্রায় ৭ শতাংশ নারী ও পুরুষ সাবক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়েডিজমে ভুগে থাকে।
তিনি বলেন, নবজাতক শিশুদেরও থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতিজনিত সমস্যা হতে পারে এবং তার হার ১০ হাজার জীবিত নবজাতকের মধ্যে ২ থেকে ৮। বাড়ন্ত শিশুরাও থায়রয়েড হরমোন ঘাটতিতে ভুগতে পারে। এ সময় থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতি হলে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পরবর্তী সময়ে দৈহিক বৃদ্ধির সমতা আনয়ন করা গেলেও মেধার উন্নতি করা সম্ভব হয় না। অর্থাৎ শিশু-কিশোরদের হাইপোথাইরয়েডিজম হলে তা দ্রুত সমাধান করা না গেলে বুদ্ধি-বৃত্তির বিকাশ স্থায়ীভাবে ব্যাহত হবে। ডা: ফারুক পাঠান বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ একটি গলগণ্ড বা ঘ্যাগবহুল মানুষের দেশ। দৃশ্যমান গলগণ্ড রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় কিছুটা কমে থাকলেও তা কোনোভাবেই প্রাপ্ত বয়স্কদের ৮.৫ শতাংশের কম নয়। এ ছাড়া থায়রয়েড সমস্যা থেকে থায়রয়েড ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধির পাচ্ছে দিনে দিনে। বাংলাদেশের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও গলগণ্ড রোগীদের ৪.৫ শতাংশের কাছাকাছি থায়রয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হয়।
অ্যান্ডেক্রাইনোলজিস্টরা বলছেন, থায়রয়েড হরমোনের পরিমাণ স্বাভাবিক থেকেও থায়রয়েড গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। সাধারণত আয়োডিনের অভাবে গলাফোলা রোগ হয়ে থাকে, যাকে আমাদের সাধারণ ভাষায় ঘ্যাগ রোগ বলা হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের বেশির ভাগ স্কুলগামী শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের আয়োডিনের অভাব রয়ে গেছে। এ আয়োডিন শরীরে অতি প্রয়োজনীয় থায়রয়েড হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুঃখের বিষয় সারা পৃথিবীতে এখনো দুই হাজার মিলিয়ন লোক আয়োডিনের অভাবে ভুগছেন। হরমোনের পরিমাণ অস্বাভাবিক থেকেও গ্রন্থিটি ফুলে যেতে পারে।
হরমোনের চিকিৎসকরা বলেন, গর্ভকালীন থাইরোয়েড হরমোন ৫০ শতাংশের বেশি উৎপন্ন হয়। এই অতিরিক্ত থাইরোয়েড হরমোনের জন্য বেশি মাত্রার আয়োডিনের প্রয়োজন পড়ে। গর্ভধারণের ১১ সপ্তাহ থেকে ভ্রƒণের থাইরোয়েড গ্রন্থি কাজ শুরু করে। ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহ পূর্ণ হলে ভ্রƒণ তার নিজস্ব থাইরোয়েড হরমোন উৎপাদন শুরু করে। সেই সময় থেকে শিশুর তিন বছর বয়স পর্যন্ত সঠিক মাত্রার আয়োডিন গ্রহণ মা ও শিশু উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এরই ধারাবাহিকতায় থায়রয়েড টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে বক্তব্য রাখেন ডা: শাহজাদা সেলিম ডা: ফারিয়া আফসানা ডা: আফিয়া যায়নব তন্বী প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা