বরিশাল বিআরডিবিতে চলছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি
মহাপরিচালক বললেন, ব্যবস্থা নেয়া হবে- আযাদ আলাউদ্দীন বরিশাল ব্যুরো
- ২১ মে ২০২৪, ০০:৫৯
বরিশাল বিআরডিবিতে চলছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। এসব বিষয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে মহাপরিচালকের দফতরেও। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ফটোকপি মেশিন, কম্পিউটার, প্রিন্টারসহ অফিসিয়াল প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনায় অনিয়ম, সহকর্মীদের উপর বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদাবাজি, কর্মশালা প্রশিক্ষণ কোর্সের সম্মানী আত্মসাৎ, ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ অসংখ্য অভিযোগ, যার সব কিছুর মূল অভিযোগের তীর বরিশাল বিআরডিবির উপ-পরিচালক সুপ্রিয়া বরের দিকে। তার একক সিদ্ধান্তের কারণে বরিশাল বিআরডিবি এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে জানালেন অধিন্যস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনেকে। তদন্ত ও বদলির হুশিয়ারি সত্ত্বেও অজ্ঞাত শক্তির জোরে বহাল তবিয়তে নিজের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) বরিশাল জেলার উপপরিচালক সুপ্রিয়া বর ২০২০ সালে এই দফতরে যোগদানের পর থেকেই তার অনৈতিক কার্যক্রমে অতিষ্ঠ বরিশালের প্রায় সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী। ১০ উপজেলা ও সদরে এমন একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী পাওয়া যায়নি যে তার পক্ষে কথা বলবেন। বরং জানা গেল কাজে যোগদানের পর থেকে একের পর এক স্বেচ্ছাচারিতা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিম্মি করে বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ হাতিয়ে নেয়াসহ অন্তত ১৮ অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবরে রীতিমতো লিখিত অভিযোগ করেছেন জেলার বিআরডিবির কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বেশির ভাগ। দু-একজন সুবিধাভোগী রয়েছেন তার সমর্থক। তবে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
সর্বশেষ গত ঈদুল ফিতরের বোনাস-ভাতা ঠিকমতো প্রদান না করা এবং প্রদানকালে কমিশন কেটে রাখার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এমনকি এর আগে ঈদুল আজহার সময়ে প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বোনাস প্রদানের ক্ষেত্রেও অহেতুক হয়রানি করেছেন বলে জানা গেছে। তার দুর্নীতি নিয়ে এরই মধ্যে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগের সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে জেলা দফতরে আইপিএস ক্রয়ের নামে প্রত্যেক উপজেলা থেকে ৯ হাজার টাকা করে মোট ৯০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন উপপরিচালক সুপ্রিয়া। পরবর্তীতে জানা যায়, এই আইপিএস কেন্দ্রীয় অফিস থেকেই সরবরাহ করা হয়েছে। উপজেলা থেকে আদায়কৃত সম্পূর্ণ টাকাই তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে। কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২০২২ সালের ৯ আগস্ট অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। সেজন্য তিনি প্রত্যেক উপজেলা থেকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ২০ হাজার টাকা করে মোট ২ লাখ টাকা চাঁদা হিসেবে উত্তোলন করেন এবং ওই টাকা পরবর্তীতে নিজের সুবিধামতো ব্যবহার করেছেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এমনকি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলা দফতরে কর্মকর্তা- কর্মচারীদের নিয়ে ষাট ঘণ্টার একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। ওই প্রশিক্ষণের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য সম্মানি ভাতা ও দুপুরের খাবারের টাকাসহ সর্বমোট ২৯২৫০ টাকা প্রদান না করে সে টাকাও অভিনব উপায়ে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। এরপর গত ৫ মার্চ এজি কর্তৃক বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলায় নিরীক্ষা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হলে সেক্ষেত্রেও প্রত্যেক উপজেলা থেকে ২৫ হাজার টাকা করে মোট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন সুপ্রিয়া বর। উত্তোলনকৃত টাকা নিরীক্ষায় সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ প্রদান করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে কর্মকর্তা- কর্মচারীদের অভিযোগ উত্তোলনকৃত টাকা নিজস্ব হিসাব রক্ষকের সহযোগিতায় তিনি নিজেই আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়াও জেলা দফতরে নিয়মিত অনুষ্ঠিত ষাট ঘণ্টার প্রশিক্ষণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতামত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে দুপুরের নিম্নমানের খাবার খেতে বাধ্য করেন এবং এর প্রেক্ষিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাদের প্রাপ্য ভাতা যথাযথভাবে প্রদান করা হয় না বলে তারা অভিযোগ করেন। তারা আরো জানান, এ ব্যাপারে কেউ কথা বললে উপপরিচালক সুপ্রিয়া তাদের বদলির হুমকি, ব্যাখ্যা তলবসহ নানা প্রকারের হয়রানিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ ছাড়া জেলা দফতরে প্রাপ্য ফটোকপি মেশিনসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রেও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে ।
একজন উপ-পরিচালককে সরকারি গাড়ি বরাদ্দ করা হয় উপজেলা দফতরসহ অন্যান্য অফিসিয়াল কাজে ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু প্রায়ই তিনি গাড়ি ব্যবহার না করে বরাদ্দকৃত তেলের বিল উত্তোলন করে নেন এবং মাঝেমধ্যেই ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতে দেখা যায় তাকে। বিভিন্ন বিবাহ অনুষ্ঠান ও বিদায় অনুষ্ঠানের নামে চাঁদা উত্তোলন করা তার সহজাত প্রবৃত্তিতে পরিণত হয়েছে বলে বরিশাল জেলার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তার নামে খুলনায় পাঁচ কাঠার একটি দামি প্লট রয়েছে। এ ছাড়াও তার স্বজনদের নামেও বিভিন্ন স্থানে বাড়ি করেছেন বলে জানা গেছে।
বরিশাল জেলায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কয়েকজনের সাথে মুঠোফোনে উপপরিচালক সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, তার বিরুদ্ধে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি মহাপরিচালকের দফতরে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তার দুর্নীতি প্রকাশ হয়েছে। অথচ হেডঅফিসে কেউ একজন তার নিজস্ব লোক থাকায় তিনি আজও বহালতবিয়তে বরিশালে রাজত্ব করছেন।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে অভিযুক্ত উপপরিচালক সুপ্রিয়া বর বলেন, আমার সম্পর্কে মহাপরিচালক দফতরে সে অভিযোগ গেছে তা আমি জানি। কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতি করার সুযোগ না পেয়ে এসব মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তুলেছে। তদন্ত করে মহাপরিচালক দফতরের সিদ্ধান্ত যা হবে তা আমি মেনে নেবো।
এ বিষয়ে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক আঃ গাফফার খান সাংবাদিকদের বলেছেন, কোনো বিষয়ে করা অভিযোগ আমরা এড়িয়ে যাই না। যেহেতু সুপ্রিয়া ধর সম্পর্কে অভিযোগ এসেছে, আমরা তা তদন্ত করে দেখব এবং দোষী প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা