উদ্বেগ, হতাশায় বিক্রির চাপে পুঁজিবাজার
১ বছরে পুঁজিবাজারের অবস্থা আরো খারাপ- হামিদ সরকার
- ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ১৮ মে ২০২৪, ১০:১৮
পুঁজিবাজারের অস্থির আচরণে উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা। গেল সপ্তাহে সূচকের নিম্নমুখিতার পাশাপাশি অধিকাংশ খাতের শেয়ার ও ইউনিটের মূল্য কমেছে। ১৪৩ পয়েন্ট হারিয়েছে ডিএসইএক্স সূচক। হতাশায় বিনিয়োগকারীরা বিক্রির দিকে ঝুঁকেছে। তবে কিছু বিনিয়োগকারী পর্যবেক্ষণরত অবস্থানে ছিলেন। আর কিছু বিচক্ষণ বিনিয়োগকারী স্বল্পমেয়াদি লাভের আশায় নির্দিষ্ট কিছু খাতের নির্দিষ্ট ইস্যুতে বিনিয়োগ করেছেন। ১৯টি খাতের মধ্যে গত সপ্তাহে ২২ শতাংশ বিনিয়োগকারী ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের শেয়ারে সক্রিয় ছিলেন।
এদিকে, ঢাকা স্টকের তথ্য বলছে, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় চলতি বছর বর্তমানে পুঁজিবাজারের অবস্থা আরো খারাপ। আগের সপ্তাহে হাজার কোটি টাকার বেশি তারল্য ফিরলেও গেল সপ্তাহে পাঁচ হাজার ২১০ কোটি টাকা বেরিয়ে গেছে। বাজার পরিস্থিতির কারণে শেয়ার বিক্রির একটি বড় অংশ অর্থ ফিরে আসছে না বলে প্রাতিষ্ঠানিক বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন।
লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯টির মধ্যে বেশির ভাগ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরপতনের কবলে ছিল। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতের ২৭টি, প্রকৌশল খাতের ৩৮টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২০টি, খাদ্য খাতের ১৬টি, জ্বালানি খাতের ১৬টি, সাধারণ বীমা খাতের ১৮টি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ১০টি, মিউচুয়াল ফান্ড ২৮টি এবং বস্ত্র খাতের ৪৯টি কোম্পানি দর হারিয়েছে। তবে জীবন বীমা খাতে ১৩টি এবং সাধারণ বীমা খাতে ২৪টি কোম্পানি লাভে ছিল। পতনের মধ্য দিয়েও দেশের দুই স্টকে দর বৃদ্ধিতে দাপট দেখিয়েছে তালিকাভুক্ত ছয়টি কোম্পানি। সেগুলো হলো- লিগ্যাসি ফুটওয়ার, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ই-জেনারেশন, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ- আইসিবি, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এবং মুন্নু সিরামিকস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এই ছয় প্রতিষ্ঠান উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের সাপ্তাহিক গেইনারের শীর্ষ তালিকায় অবস্থান করছে।
গত সপ্তাহে ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচক ১৪৩.৬৩ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৪১.২৫ পয়েন্ট, শরিয়াহ সূচক কমেছে ৩০.৪১ পয়েন্ট এবং ডিএসএমইএক্স সূচক ২.০৮ পয়েন্ট কমেছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে গড় লেনদেন কমেছে ২০.৪৩ শতাংশ। পুরো সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় মোট লেনদেন কমেছে ৯৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর বাজার মূলধন কমেছে ০.৭৮ শতাংশ বা পাঁচ হাজার ২১০ কোটি টাকা। গড়ে শেয়ার বিক্রি কমেছে ২৭.০৩ শতাংশ। পুরো সপ্তাহে মাত্র ৮৫টি কোম্পানির দর বেড়েছিল। আর পতনের শিকার ২৯০টি কোম্পানি, ১৭টির দর অপরিবর্তিত এবং লেনদেনেই আসেনি ২০টি কোম্পানি। ব্লক মার্কেটে ১৯৮ কোটি ৮৬ লাখ ৮০ হাজার টাকার এবং এসএমই মার্কেটে ১৩৬ কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে পুরো সপ্তাহের লেনদেনে।
বাজার পর্যবেক্ষক ইবিএলের মতে, পুঁজিবাজারের বেঞ্চমার্ক সূচকটি পরপর দুই সপ্তাহের পরিমিত লাভের পরে তার পতন প্রবণতা আবার শুরু হয়েছে। বাজারের দৃষ্টিভঙ্গির উদ্বেগের মধ্যে ট্রেডিং ফ্লোরে বিস্তৃত স্থায়ী হতাশাবাদের কারণে বিনিয়োগকারীদের প্রভাবশালী বিক্রির চাপে টেনে এনেছে। পরবর্তী বাজেটে ৪০ লাখ টাকার বেশি মূলধন লাভের ওপর কর আরোপের প্রস্তাবের পরে বাজারের গতিবেগ সংক্রান্ত ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণে বাজার পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। যা বিনিয়োগকারীদের ছাঁটাই করতে নেতৃত্ব দেয়।
আর ডিএসইএক্স, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বিস্তৃত সূচক, ১৪৩.৬ পয়েন্ট বা ২.৫ শতাংশ হারিয়ে পাঁচ হাজার ৫১৭ পয়েন্টে স্থির হয়েছে। গড় লেনদেন ২০.৪ শতাংশ কমে ৭৬৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা হওয়ায় বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও হ্রাস পেয়েছে। আগের সপ্তাহে যেখানে ছিল ৯৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বিনিয়োগকারীরা বেশির ভাগ ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে (২২ শতাংশ) সক্রিয় ছিল। তারপর টেক্সটাইল খাতে (১২.৭ শতাংশ) এবং খাদ্য খাতে (৯.৩ শতাংশ)। বেশির ভাগ সেক্টর লাল রঙে শেষ হয়েছে। পাট খাত (৯.৪ শতাংশ) সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে জীবন বীমা সেক্টর (৭.৯ শতাংশ) সর্বাধিক লাভকারী।
প্রাতিষ্ঠানিক আরেক বিশ্লেষক রয়েল ক্যাপিটালের মতে, পুঁজিবাজারে সূচকের নিম্নমুখিতার পাশাপাশি অধিকাংশ খাতের মূল্য কমে গেছে। বিনিয়োগকারীরা পর্যবেক্ষণরত অবস্থানে ছিলেন এবং কিছু বিচক্ষণ বিনিয়োগকারীগণ স্বল্পমেয়াদি লাভের আশায় নির্দিষ্ট কিছু সেক্টরের নির্দিষ্ট ইস্যুতে বিনিয়োগ করেছেন। যদিও কিছু সামষ্টিক অর্থনৈতিক কারণ বিনিয়োগকারীদের মনোভাবকে প্রভাবিত করেছে। গড় টার্নওভার ৩৫.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ৫৭টি শেয়ারের বাজার মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৩০৫টি শেয়ার এর বাজারমূল্য হ্রাস পেয়েছে। বাজারমূল্যের ভিত্তিতে তিনটি সেক্টর এই সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মধ্যে টপ গেইনার ছিল খাদ্য ও বীমা খাত। ১৫টি সেক্টর এই সপ্তাহে লোকসানের শিকার, যার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পাট, পেপার ও ব্যাংকিং খাত।