ব্যবস্থাপক-শ্রমিক দ্বন্দ্বে থমথমে রামগড় চা বাগান
- রামগড় (খাগড়াছড়ি) সংবাদদাতা
- ১৬ মে ২০২৪, ০০:০০
ফটিকছড়ির উত্তরে অবস্থিত রামগড় চা বাগানে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং ব্যবস্থাপকের মধ্যে মারামারি এবং মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার বাগান ব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন বাদি হয়ে দুই শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে শ্রমিকরা এই মামলাকে মিথ্যা এবং হয়রানির উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে দাবি করেন। সাময়িকভাবে সাবেক এক জনপ্রতিনিধির মধ্যস্থতায় কাজে যোগ দেয়ার দুই দিন পর হঠাৎ করে পুনরায় অভিযুক্ত শ্রমিক নেতাদের কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকতে বলেছে চা বাগান কর্তৃপক্ষ
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, গত বুধবার শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে পঞ্চায়েত নেতা যতন কর্মকার এবং বিপ্লব মুন্ডা রামগড় চা বাগান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়। এ সময় তারা দীর্ঘ দিন ধরে তাদের ঘর মেরামত না করা, বাগানের হাসপাতালের দুরবস্থা, মানসম্মত বিদ্যালয় এবং শৌচাগারের দাবি জানায়। তখন একপর্যায়ে ব্যবস্থাপক এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দ দুইপক্ষের মধ্য উত্তেজনা এবং বাগবিতণ্ডা হয়। শ্রমিকদের দাবি বাগান ব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে সহকারী ব্যবস্থাপক সাইফুল, শিমুল, নগেন্দ্র এবং গাড়িচালক ফারুক শ্রমিক নেতাদের ওপর হামলা করে। এ সময় জীবন বাঁচাতে শ্রমিকরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি এবং মারামারি হয়। তবে এতে কেউ আঘাত পায়নি। পরবর্তীতে বাগান ব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন বাদি হয়ে শ্রমিক নেতা যতন এবং বিপ্লবকে আসামি করে ফটিকছড়ির ভুজপুর থানায় মামলা দায়ের করে। পুলিশ গত বৃহস্পতিবার রাতে বিপ্লবকে গ্রেফতার করে।
ভুজপুর থানায় করা মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, রামগড় চা বাগানের ব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন নিজে বাদি হয়ে শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন গত আসামিরা (যতন কর্মকার ও বিপ্লব মুণ্ডা) চা বাগানের ফ্যাক্টরি কার্যালয়ের ভেতরে অতর্কিতভাবে রড ও লোহা দিয়ে তার ওপর হামলা করে।
চা শ্রমিক চট্টগ্রাম ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক যতন কর্মকার জানান, শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রামগড় চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি বিপ্লবকে সাথে নিয়ে গত বুধবার রামগড় চা বাগান কার্যালয়ে যাই। তখন বাগান ব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীনকে এসব দাবি জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তার নেতৃত্বে সহকারী ব্যবস্থাপক সাইফুল, শিমুল, নগেন্দ্র এবং গাড়িচালক ফারুক একাট্টা হয়ে আমাদের মারধর করে কার্যালয় থেকে বের করে দেয় এবং আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। বিপ্লবকে পুলিশ এসে গ্রেফতার করে এবং এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা একদিন কাজ বন্ধ রাখে। পরবর্তীতে বাগান বাজার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রোস্তম আলীর মধ্যস্থতায় শ্রমিকরা কাজে ফিরে আসেন। তবে কাজে ফেরার দুই দিনের মধ্যে আমাকে এবং বিপ্লবকে কাজে যোগ দিতে নিষেধ করে বাগান কর্তৃপক্ষ। তিনি আরো জানান, কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। মামলা প্রত্যাহার এবং পুনরায় কাজে নিয়োগ দিতে টালবাহানা করলে পুনরায় আন্দোলন চালিয়ে যাবে শ্রমিকরা। তিনি দাবি করেন থানায় করা ব্যবস্থাপকের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রামগড় চা বাগান পঞ্চায়েত সাধারণ সম্পাদক মদন রাজগড় জানান, চা শ্রমিকদের বাড়ি ঘরগুলো খুবই নিম্নমানের কাঠ দিয়ে তৈরি। এসব ঘর এখন বসবাসের অনুপযুক্ত। বাগানের একমাত্র হাসপাতালের অবস্থা আরো ভয়াবহ। রোগী রাখার একটি বেড পর্যন্ত নেই। পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। নামেমাত্র বিদ্যালয় থাকলেও এর কোনো কার্যক্রম নেই। শৌচাগারের অবস্থা খুবই খারাপ। এসব সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন সময় বাগান কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা আমলে নেয়নি। বাগান ব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন শ্রমিকদের সাথে সবসময় মারমুখী আচরণ করে। সর্বশেষ ঘটে যাওয়া ঘটনায় শ্রমিকদের ওপর মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা প্রত্যাহার না হলে পুনরায় আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
বাগান বাজার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রোস্তম আলী জানান, চা বাগানে শ্রমিক এবং ব্যবস্থাপকের মধ্যে মারামারির ঘটনা তিনি শুনেছেন। ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুরোধে তিনি দুইপক্ষকে সাথে নিয়ে বৈঠকে বসেন এবং শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে অনুরোধ করেন। শ্রমিকরা তার ডাকে সাড়া দিয়ে কাজে ফিরলেও তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে।
ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মামলা হওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, মারামারির অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিক ফোর্স পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়েছিল।
ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক জানান, চা বাগানের ভেতর ঘটে যাওয়া অপ্রীতকর ঘটনা নিয়ে তিনি অবগত। বাগান ব্যবস্থাপকের ওপর শ্রমিকরা হামলা করেছে যার পরিপ্রেক্ষিতে মামলার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কাজ করছে বলে জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা