১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠকে ডা: শফিক

বাংলাদেশ এক কঠিন ক্রান্তিকাল পার করছে

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান : নয়া দিগন্ত -


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ আজ এক কঠিন ক্রান্তিকাল পার করছে। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবিধান প্রদত্ত সভা-সমাবেশ করার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংক ও ব্যাংকিং খাত আজ লুটেরাদের দখলে। দেশে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন-বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পথ আজ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সরকার অর্থের উৎস ও বিদেশী সংস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ করে ঋণের টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করছে। দেশের অর্থনীতি আজ বিধ্বস্ত।
গতকাল কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের এক বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের পরিচালনায় বৈঠকে জামায়াত আমির বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হিসেবে আপনারা এই সংগঠনের অভিভাবক এবং দেশ ও জাতির বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী। দুনিয়ায় মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে আদালত। সেই আদালতে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সরকার আদালতকে ব্যবহার করে সাজা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে।
তিনি বলেন, দেশের নির্বাচনব্যবস্থা বলতে আজ কিছু নেই। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এ সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং অতি সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দলের কেন্দ্র দখল ও ভোট লুটপাটের ঘটনা দেশে নির্বাচনব্যবস্থাকে পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকার মূলত দেশকে একটি নির্বাচনহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এ অবস্থায় গোটা জাতিকে পুনর্গঠন করা ছাড়া বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। আমি কর্মপরিষদের সদস্যদেরকে দরদি মন নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের নিজেদেরকে সর্বপ্রথম দাঈ ইলাল্লাহ হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। জাহান্নামের আজাব থেকে নিজেদের, নিজেদের পরিবারবর্গ, প্রতিবেশী, সমাজ ও দেশকে বাঁচাতে হবে।
জামায়াত আমির বলেন, সংগঠনের কর্মপরিষদ সদস্য হিসেবে আমাদের সবাইকে সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। নেতারা জনবান্ধব হলে সংগঠনের জনসমর্থন যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি গণভিত্তিও মজবুত হয়। আমরা দেশে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন চাই। কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে মজবুত সংগঠন গড়ে তুলে সামগ্রিক পরিবর্তন করা সম্ভব।

তিনি বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য শিক্ষা কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। অনৈতিক ও আদর্শহীন শিক্ষা আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে। এ অবস্থায় আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনৈতিক ও অপসংস্কৃতির সয়লাব থেকে মুক্ত রাখার জন্য অভিভাবকসুলভ ভূমিকা পালন করতে হবে।
জামায়াত আমির কর্মপরিষদ সদস্যদের উদ্দেশে আরো বলেন, এ সরকার জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সাজানো মামলায় ফাঁসির দণ্ড দিয়ে ফাঁসি কার্যকর করেছে। তারা ভেবেছিল জামায়াত নেতৃত্বশূন্য হয়ে যাবে এবং জেল-জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হবে। কিন্তু তাদের সব পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। তাদের প্রতিটি আঘাতে জামায়াত আরো শক্তিশালী হয়েছে। কর্মপরিষদ সদস্যদেরকে সংগঠনের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছে জামায়াত
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ার মহান স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছে জামায়াতে ইসলামী। তিনি আরো বলেন, মানবজীবনের এমন কোনো সমস্যা নেই যার সমাধান ইসলামে দেয়া হয়নি। মানবজাতির জন্য সব ধরনের সমস্যার সমাধান হলো আল কুরআন। আমাদের প্রত্যেককে পবিত্র কুরআনের বিধান অনুযায়ী নিজেদের জীবনকে সাজাতে হবে। এজন্য প্রতিদিন বেশি বেশি কুরআন, হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করা দরকার। একই সাথে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে প্রতিটি ঘরে ঘরে। তাহলেই ইসলামের বিজয় অনিবার্য হয়ে উঠবে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত থানা ও ওয়ার্ড দায়িত্বশীল শিক্ষাশিবির-২০২৪ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর আমির শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও মহানগরী সেক্রেটারি অধ্য মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আবদুল হালিম ও মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।
এতে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও মহানগরী নায়েবে আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মহানগরী অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এফ এম ইউনুস, মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, মহানগরী সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগরী সভাপতি এস এম লুৎফুর রহমান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডা: শফিকুর রহমান বলেন, দায়িত্বশীলদের অনুপ্রেরণা প্রদান করে টিমস্পিরিটের মাধ্যমে সবাইকে নিয়ে সংগঠনকে আরো মজবুত করতে হবে। সংগঠনের থানা ও ওয়ার্ড অর্থাৎ স্থানীয় কার্যক্রম যত বেশি শক্তিশালী হবে, সামগ্রিকভাবে মহানগরী ও কেন্দ্রীয় সংগঠন ততো সুদৃঢ় হবে। যেখানে যত বেশি বিপর্যয় এসেছে সেখানে দ্বীনের দাওয়াত আরো ব্যাপকতর হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement